ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি কূটনৈতিক সম্পর্কে জোরদার করবে

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম

ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি কূটনৈতিক সম্পর্কে জোরদার করবে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। পৃথিবীর ৮০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে তার নামে ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে ড. ইউনূসের চিন্তা, কাজ, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও তার জীবনাদর্শ নিয়ে গবেষণা হয়। এখন পর্যন্ত তিনি ২৪টি দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬০টির মতো সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। ১৩০টির বেশি সম্মাননা পেয়েছেন ৩০টির বেশি দেশ থেকে। তা ছাড়া কানাডা ও জাপানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ড. ইউনূসের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ড. ইউনূসকে সবাই এক নামে চেনেন। কানাডার পাঠ্যপুস্তকে তার জীবনী থাকার পাশাপাশি দেশটির একটি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়ে ড. ইউনূসের ছবি টানানো আছে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বিভিন্ন স্বার্থ উদ্ধারে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে দীর্ঘদিন টানাপড়েন চলছিল। তার অবসান ঘটিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে স্বস্তির সুবাতাস পাওয়া যাবে এমনটাই আশা করা যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।

বাংলাদেশ ইস্যুতে কথা বলেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগন। যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার। পেন্টাগনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের একটি প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে। আমরা আমাদের মূল্যবোধ এবং স্বার্থকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ রয়েছি। একটি মুক্ত এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমরা কাজ করব। তবে এই মুহূর্তে কোনো নির্দিষ্ট যোগাযোগ বা সহযোগিতার বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই। যেহেতু এটি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত, আমরা আশা করব, বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষিত হবে এবং যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়িয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে যেকোনো প্রশ্নের জন্য আমি আপনাকে আমাদের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানাই।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় (২০ আগস্ট) মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বিদ্যমান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজের প্রতীক্ষায় রয়েছে পেন্টাগন। ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে পেন্টাগন কীভাবে দেখছে? এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে কোনো ধরনের সহযোগিতা বা যোগাযোগ হচ্ছে কি? এই প্রশ্নের জবাবে প্যাট রাইডার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে। অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো বিষয়কে সামনে রেখে দুই দেশের যৌথ মূল্যবোধ ও অভিন্ন স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। তবে এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট কোনো যোগাযোগ বা সহযোগিতার বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানান এবং বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে, আমরা অবশ্যই মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং সব ধরনের সহিংসতা এড়ানোর প্রত্যাশা করব।

সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ গঠনে নতুন চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছে। নতুন সরকার দেশ-বিদেশে সমানতালে কাজের মাধ্যমে নিজেদের জানান দিতে চায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে তার যে ইমেজ রয়েছে, তা কাজে লাগাতে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে বার্তা দিয়েছেন ড. ইউনূস। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ওই দুই বৈঠকে উপদেষ্টা বলেছেন, বিদেশে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের যে ভাবমূর্তি রয়েছে তা আমরা কাজে লাগাতে পারি। প্রধান উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন, দেশের প্রয়োজনে কূটনীতিকরা তার ফেসভ্যালু ব্যবহার করতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টার ফেসভ্যালু ব্যবহার করলে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারব।

ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই তার সুনাম রয়েছে এবং তার ভাবমূর্তি খুব উজ্জ্বল। ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি কূটনীতিকরা ব্যবহার করতে পারলে দেশের অনেক উপকার হবে। বিশ্বের সাতজন ব্যক্তি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। তিনি সেই সাতজন ব্যক্তির মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি। ড. ইউনূসের দেখানো পথেই যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য কাজ করছে গ্রামীণ আমেরিকা। তার দর্শনের ভিত্তিতে ৪০০ কোটি ইউরো ব্যয়ে প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিক ভিলেজ তৈরি হয়। এর আগে ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকেও তার সরব উপস্থিতি ছিল।

ড. ইউনূস বিগত ২০০৯ সালে দারিদ্র্য নিরসনে সহায়তা করার জন্য এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। এই উপদেষ্টা পরিষদ উন্নয়ন সংস্থার মূল বিষয় ও নীতি প্রণয়নে পরামর্শ দিয়ে থাকে। ড. ইউনূসের দেখানো পথে দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ বা সামাজিক ব্যবসার মডেল বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে ১৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ধারণ করে চলছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক কেমন হতে পারে তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে ড. ইউনূসকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে থেকে টেলিফোন করার বিষয়টি ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে ঢাকার এক জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এটি খুবই ইতিবাচক দিক।

 

সম্পাদক, রূপালী বাংলাদেশ

 

আরবি/জেডআর

Link copied!