এটা কখনো জোর দিয়ে বলা যায় না, জনমত জরিপে দেশের সঠিক চিত্র উঠে আসবে। কোনো জরিপই শতভাগ শুদ্ধ নয়। তবে জরিপ থেকে উত্তরদাতা তথা জনগণের চিন্তা ও মনের কথা অনেকটাই আঁচ করা যায়। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ, এর কার্যকারিতা ও ফলাফল সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেয়ে থাকে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) দ্বিতীয় পালস সার্ভেতে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তা সরকারের নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। তাদের জরিপের শিরোনাম ছিল ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: মানুষ কী ভাবছে’। জরিপের অন্যতম প্রশ্ন ছিল, এই মুহূর্তে দেশের প্রধান সমস্যা কী।
উত্তরে ৬৭ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যার (দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়িক মন্দা) কথা বলেছেন। জরিপের ফলাফল থেকে আমরা বুঝতে পারি, মানুষ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে যতটা চিন্তিত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ততটা নয়। বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। সরকার অর্থনৈতিক স্বস্তি দিতে ও আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটাতে না পারলে জনগণ ধৈর্য হারিয়ে ফেলবে। পণ্যের দাম বাড়ার জন্য চাঁদাবাজিকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। চাঁদাবাজি বা মজুতদারি যে কারণেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ুক না কেন, এর বিরুদ্ধে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিকল্প কৃষিবাজার চালু করার কথা বলেছেন।
কিন্তু তা কীভাবে ও কতদিনে হবে, সেটাও প্রশ্ন বটে। বিকল্প বাজার না হওয়া পর্যন্ত সরকার টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ বাড়ালে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে। বিআইজিডির জরিপ এখন প্রকাশ করা হলেও নেওয়া হয়েছে সেপ্টেম্বরে। গত ৩ মাসে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়েছে। সরকার সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, দুদক ইত্যাদি সংস্কারে যেসব কমিশন গঠন করেছে, তার প্রতি সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন আছে। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা এই সরকারের বড় শক্তি জনগণের সমর্থন। সেটাই যদি নড়বড়ে হয়ে পড়ে, তখন তাদের নৈতিক অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়বে।
জুলাই অভ্যুত্থানে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ যেসব কারণে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। নতুন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরেও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কাজেই এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে দেশের সাধারণ মানুষের অন্যতম প্রত্যাশা হলো, নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু অন্তর্র্বর্তী সরকারের ৫ মাস পার হলেও নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে তেমন সফলতা দেখা যাচ্ছে না। উল্টো চাল, ভোজ্যতেল, ডিম, মুরগি, চিনি ইত্যাদি পণ্যের মূল্য আরও বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি হ্রাসে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হারে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক পণ্যের চাহিদা টাকার সরবরাহের ওপর ততটা নির্ভর করে না বলে এভাবে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
এ জন্য বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের প্রয়োজন। এরই মধ্যে বাজার তদারক করতে জেলায় জেলায় বিশেষ টাস্কফোর্স করেছে সরকার। এ ছাড়া কয়েকটি পণ্যের শুল্ক-কর কমানো হয়েছে। এগুলো দরকারি পদক্ষেপ; কিন্তু যথেষ্ট নয়। নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির কার্যকর ও টেকসই সমাধানের জন্য আরও কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বাজার অর্থনীতিতে পণ্যের দাম নির্ধারিত হওয়ার কথা চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে বাজারের ‘অদৃশ্য হাতের’ মাধ্যমে। বাংলাদেশে ‘অদৃশ্য হাতের’ নির্দেশে পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হয় ঠিকই; কিন্তু সেই অদৃশ্য হাতটা অনেক ক্ষেত্রে বাজারের নয়, কিছু বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর। দেশে উৎপাদিত এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত উভয় ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই তা সত্যি। শুধু দেশে উৎপাদিত নিত্যপণ্যই নয়, বিগত সরকারের আমলে নিত্যপণ্যের আমদানির নিয়ন্ত্রণও চলে গিয়েছিল হাতেগোনা কয়েকটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছে। তারা বাজারের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিযোগিতার বদলে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পণ্য আমদানির প্রতিটি পর্যায়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করা প্রতিষ্ঠানগুলো একজোট হয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নিজের ইচ্ছেমতো পণ্য কিনতে পারেন না।
একজন ব্যবসায়ী যদি কোনো পণ্য ক্রয় করতে চান, তাহলে তাকে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে যেতে হবে, তখন সেই বড় ব্যবসায়ীই ঠিক করে দেবেন যে, কোন পণ্য কত দামে কার কাছ থেকে কিনতে হবে। এতে রাজি না হয়ে ব্যবসায়ী ব্যক্তিটি যদি মনে করেন তিনি নিজেই পণ্যটি আমদানি করবেন, তাহলে দেখা যাবে ব্যাংক তার এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না, কাস্টমস-ভ্যাটসহ নানা দপ্তর থেকে বাধা আসছে, এমনকি আমদানি করা পণ্য বড় জাহাজ থেকে খালাস করে বন্দরে আনার জন্য লাইটার ভেসেল পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি এসব বাধা অগ্রাহ্য করে তিনি যদি কোনোভাবে পণ্যটি আমদানি করেও ফেলেন, দেখা যাবে বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী তার আমদানি মূল্যের চেয়ে কম দামে বাজারে পণ্যটি ছেড়ে দিয়ে তাকে লোকসানের মুখে ফেলে দেবে।
কিছু বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর এভাবে বাজারের ওপর একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারার কারণ হলো, তারা একাধারে বড় আমদানিকারক, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মালিকানা বা ব্যবস্থাপনার কর্তৃত্ব ছিল তাদের হাতে, সাগরের বড় জাহাজ থেকে বন্দরে খালাসের জন্য ব্যবহৃত লাইটার জাহাজগুলোও তাদের কিংবা তাদের সহযোগীদের মালিকানাধীন, এমনকি পণ্যের ডিলারশিপেও নিয়ন্ত্রণ এসব ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর আশীর্বাদপুষ্ট লোকজনের হাতে। মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর ওপর কিছু বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর এ ধরনের একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২-এর আওতায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করে কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রতিযোগিতা কমিশনের দায়িত্ব হলো, বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তারকারী অনুশীলনগুলোকে নির্মূল করা। এ জন্য তাদের বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ, মনোপলি, ওলিগোপলি, জোটবদ্ধতা অথবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার প্রতিরোধ করতে হবে। বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাবে প্রতিযোগিতা কমিশন কার্যকর ছিল না।
এখন সময় এসেছে প্রতিযোগিতা কমিশনকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো। ব্যবসায়ীরা পারস্পরিক যোগসাজশ করে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছেন কি না, তো বোঝার জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও আমদানির প্রকৃত খরচের সঙ্গে বাজারমূল্য মিলিয়ে দেখতে হবে। ব্যবসায়ীরা কত দামে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল বা চিনি আমদানি করছেন, এগুলো পরিশোধন ও বাজারজাতকরণে কত ব্যয় করছেন, আর কত দরে বাজারে বিক্রয় করছেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে। দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নিয়ে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নানা ধরনের কারসাজি চালিয়ে যেতে পারার একটি কারণ হলো, পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদা সম্পর্কে সরকারের কাছে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকা। যেমন- সরকারি হিসাবে আলু, পেঁয়াজ, ডিম ইত্যাদি পণ্য উদ্বৃত্ত থাকলেও বাস্তবে দেখা যায় এগুলোর সংকট রয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেন। মিলগেটে তদারকি দুর্বলতার কারণে কিছু মিলমালিক মিলে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আমনের এই ভরা মৌসুমে এভাবে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। চালের দাম বাড়ছে, এটা ঠিক। কারণ, ধানের দাম অনেক বেড়েছে। ধানের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী কয়েক দিনে চালের দাম আরও বাড়বে। বাড়তি দামেও ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ধানের হাট-বাজারে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার। এবার ধানের ফলন কম হয়েছে। তাই ধানের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তারপরও চালের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা গুটিকয়েক মিল মালিকের কারণে। তারা করপোরেট চাল কোম্পানির সঙ্গে মিল রেখে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। বাজার তদারকির বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে চালের দাম বাড়ার বিষয়টি নজরদারি করতে হবে। যারা যৌক্তিক কারণ ছাড়া দাম বাড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে নজরদারি চালাতে হবে। কোথাও কোনো অসংগতি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে চাহিদা ও উৎপাদনের পরিমাণ নিয়েও রয়েছে অস্পষ্টতা। চাহিদার চেয়ে বাড়তি উৎপাদন হলে আলু, পেঁয়াজ, ডিম ইত্যাদি বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রয়োজন পড়ত না। বাস্তবে দেখা যায়, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছরই এসব পণ্য আমদানি করতে হয়। কাজেই নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে, দেশে এসব পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের সঠিক পরিসংখ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দেশে যেসব পণ্যের উৎপাদন কম হয়, সেগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে কিংবা সময়মতো আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে হবে। সংকটের সময় বাড়তি মুনাফার লোভে বড় ব্যবসায়ীরা অনেক সময় তাদের হাতে থাকা নিত্যপণ্য বাজারে বিক্রি না করে মজুত করেন, ফলে বাজারে ওইসব পণ্যের সংকট বেড়ে যায় এবং রাতারাতি মূল্যবৃদ্ধি পায়। একবার সংকট শুরু হয়ে গেলে পরে আমদানি করে অনেক সময় লাভ হয় না, কারণ ব্যবসায়ীরা আমদানি করা পণ্যও মজুত করতে থাকেন।
এ জন্য সংকট তৈরি হওয়ার আগেই বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন- কৃষকেরা উৎপাদিত আলুর অধিকাংশই মার্চ-এপ্রিলে বিক্রি করে দেন। এরপর আলুর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হিমাগার ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের হাতে। তারা জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বাজারে ছাড়তে থাকেন। এই সময়ে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি যেন করতে না পারেন, সে জন্য হিমাগারে আলুর মজুত, হিমাগার থেকে বাজারে আলুর সরবরাহ ইত্যাদির ওপর নজর রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে সময়মতো আলু আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। একইভাবে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পেঁয়াজের সংকট বেশি হয় বলে এই সময়টুকুতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মজুতদারি বিষয়ে তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের আরেকটি পদ্ধতি হলো, গণবণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যার আওতায় সরকার কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যপণ্য কিনে নিয়ে ভোক্তাদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করবে।
এতে একদিকে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি এবং দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে বাজারে এসব পণ্যের মূল্যও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। দেশে টিসিবি ও ওএমএসের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির যে ব্যবস্থা আছে, তার পরিধি ও গভীরতা যথেষ্ট নয়, সেই সঙ্গে দুর্নীতিতে জর্জরিত। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক একটি গণবণ্টন ব্যবস্থা রয়েছে, যার আওতায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেশন কার্ডের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের নাগরিকরা সারা বছর স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ক্রয় করতে পারেন। সেই সঙ্গে সংকটের সময় ভোক্তাদের জন্য বাজারে কম দামে পণ্য সরবরাহে প্রাইস স্টেবিলাইজেশন ফান্ড (পিএসএফ) নামের একটি তহবিল রয়েছে।
এই তহবিলের মাধ্যমে বাজারে যখন পেঁয়াজ, আলু, ডাল, গম ও চাল ইত্যাদি পণ্যের দাম তুলনামূলক কম থাকে, তখন সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে সংকটের সময় তুলনামূলক কম দামে বাজারে বিক্রি করে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে, শুল্ক-কর হ্রাস করে ও বিপিসির মুনাফা কমিয়ে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত জ্বালানি ডিজেলের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো, হাট-বাজারে, পথে-ঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে রসিদ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, নিত্যপণ্যের উৎপাদন-সরবরাহ-আমদানি-মজুত-বিক্রয়ের ওপর নিয়মিত তদারকির কাঠামো গড়ে তোলা। এ ছাড়া বাজারে কারসাজির পেছনে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলোকে দ্রুত বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :