ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

পরিবেশ সুরক্ষায় সদিচ্ছাই জরুরি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৪, ০৩:৫১ পিএম

পরিবেশ সুরক্ষায় সদিচ্ছাই জরুরি

ছবি: রুপালী বাংলাদেশ

জাতিসংঘ দুনিয়াজুড়ে পরিবেশ বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় ১৯৭৪ সাল থেকে। সামুদ্রিক দূষণ, জনসংখ্যা, বিশ্বে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, বুনোপ্রাণীদের প্রতি মানুষের সচেতনতা বাড়ানো ছিল এর উদ্দেশ্য। পৃথিবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও নগরায়ণ বেড়ে চলেছে। আর নগরায়ণ বাড়ার কারণে বসতবাড়ি তৈরির জন্য ধ্বংস হচ্ছে, বনাঞ্চল। সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে আমরা শহরের গাছপালা কেটে ফেলছি। রাস্তা তৈরি করছি, সবুজ কমিয়ে ফেলছি। এর ফলে নানা সময়ে নানা রকম প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হচ্ছে। ভোগ করছি নানা রকম যন্ত্রণা। জলাবদ্ধতা, বজ্রপাত, অতিবৃষ্টি, খরা, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতÑ নানাভাবে পরিবেশ আমাদের ওপর তার আক্রোশ মেটাচ্ছে।

তবে এসবের জন্য তো আমরাই দায়ী। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক যুক্ত হয়েছিল মহামারি করোনা। সবমিলিয়ে পৃথিবীর মানব সম্প্রদায় কঠিন এক সময় অতিক্রম করছে। কিন্তু প্রকৃতি যতই বিরূপ হোক না কেন, যুগে যুগে মানুষ এই বিরূপ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে। আর এই লড়াই করতে করতে পরিবেশ যেভাবে বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, তাতে মানব সম্প্রদায়ের জন্য আরও ভয়াবহতম কঠিন সময় আসছে সামনে।

অস্ট্রেলিয়ার কাটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশের তাপমাত্রা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা হয়েছে কয়েক বছর আগে। ওই গবেষণায় কানাডার ক্যালগরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের গবেষকরাও যুক্ত ছিলেন। নগর-বিষয়ক সুপরিচিত আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘সাসটেইনেবল সিটিজ অ্যান্ড সোসাইটির এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। আর সেই গবেষণা থেকে যা জানা গেল, তাতে বোঝা গেল ভীষণ বৈরী সময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিশেষ করে যারা শহরে বাস করেন, তাদের জন্য তো কঠিন সময় আসছে। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ নগরে বসবাস করবে। অথচ এর জন্য বাংলাদেশের শহরগুলোয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। ওদিকে গত ২০ বছরে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে সারা বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া কাটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ড. আশরাফ দেওয়ান জানিয়েছেন, ‘অত্যধিক গরম হয়ে পড়বে শহরগুলোর জন্য পরিবেশগত বাড়তি সমস্যা। বাংলাদেশের সরকারি নীতিমালা তৈরি হয়েছে মূলত ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কেন্দ্র করে। কারণ এতদিন এই দুটোই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এখন আরও নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নগরাঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি।’

তার মতে, ‘শহরগুলো ঠান্ডা রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে এয়ারকন্ডিশনার ও পানি ব্যবহার করার দরকার হবে। অর্থাৎ শক্তি-সম্পদ ও পানি-সম্পদের ওপরেও অত্যধিক চাপ বেড়ে যাবে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে।’ এর ফলে দেশের বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা আগামী ২০ বছরে গ্রামের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় ডিগ্রি বেড়ে যাবে। শহরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। তা ছাড়া এমনিতেই মানুষের ঘনবসতির কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটা ব্যাপার তো আছেই। প্রত্যেক মানুষের শরীরের নিজস্ব একটা তাপমাত্রা আছে। যাকে বলে মেটাবলিক হিটিং। প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১০০ ওয়াট। কাজেই শহরে মানুষের চাপ যত বাড়বে, স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা তত বাড়বে। অতিরিক্ত মানুষের জন্য ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটও বানাতে হবে বেশি। কাজেই মানুষের তাপ, ইট-রডের তাপ, রাস্তার তাপ-সবমিলিয়ে দিন যত যেতে থাকবে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে। এখন থেকেই তাপ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দিন-রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকবে না। সবসময় গরম অনুভূত হবে।

গত কয়েকদিন ধরে দেশে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেও এই তাপপ্রবাহ যাচ্ছে না। ওদিকে একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতাসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সোজা কথা, নানাধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়ও জানিয়েছেন গবেষকরা। পরিকল্পিত নগরায়ণ তো আছেই, পাশাপাশি শহরে সবুজের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন। আমাদের শহরগুলো থেকে সবুজ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বসতবাড়ি থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। আর যত বেশি সবুজ কমতে থাকে, ততবেশি গরম বাড়তে থাকে। আমাদের ছেড়ে দেওয়া কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেওয়ার মতো গাছপালা কমে গেছে। ইচ্ছে করলে আমরা গাছপালার সংখ্যা বাড়াতে পারি। এটা কোনোভাবেই সরকারের একার দায়িত্ব নয়। আমাদের সবারই দায়িত্ব। শহরের যেখানেই ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানেই গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদে বাগান করার চর্চা বাড়ানো যেতে পারে।

আসলে গাছপালার বিকল্প কিছু নেই। গাছপালা থাকলে আমরাও স্বস্তিতে থাকব। শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলতে পারব। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাব। যতবেশি গাছপালা, ততবেশি অক্সিজেন। আর যতবেশি অক্সিজেন, ততই আমাদের স্বাভাবিক দম নেওয়া। নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই চারপাশের পরিবেশ সুন্দর ও সবুজ করে তুলতে পারি।

 

আরবি/জেআই

Link copied!