ঢাকা শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫

নতুন বছরের প্রত্যাশা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

নতুন বছরের প্রত্যাশা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সময়ের কালস্রোতে আমরা নতুন বছরে। নতুন বছরে প্রত্যেকের মনেই থাকে নতুন পরিকল্পনা। সেটা হতে পারে ব্যক্তিগত কিংবা রাষ্ট্রীয়। এটাই নিয়ম। ভুল এবং ভুল শোধরানোর জন্য থেকে যাবে এসব হিসাব। নতুন বছর মানে সবকিছুকে নতুন করে বরণ করে নেওয়া। অতীতের ক্রটিগুলো শুধরে নতুন করে শুরু করা। প্রতিটি বছরে আমাদের দেশ অর্জন করছে নতুন নতুন সাফল্য। এবারের নতুন বছর এসেছে নতুনভাবে। বছরের মাঝামাঝি ঘটে গেছে ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থান। দেশে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন চলছে কাক্সিক্ষত সংস্কার। যদিও সংস্কার বিষয়টি এক দীর্ঘমেয়াদি এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, সেটা অব্যাহত থাকুক। সফলতা এবং ব্যর্থতা উভয় নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে। এ যেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায়, ‘জ¦লে পুড়ে মরে ছাড়খার তবু মাথা নোয়াবার নয়’। আমরা মাথা নোয়াইনি কোনো অন্যায়ের কাছে। বাংলাদেশ কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়ায় না। যত বাধা বিপত্তি আসুক না কেন আমরা এগিয়ে যাবই। দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসাই আমাদের একদিন চূড়ান্ত অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে। কেমন পার করেছি একটি বছর? পেছনে কেবলই হারানোর স্মৃতি। আমরা একটি যুদ্ধাক্রান্ত বছর পার করেছি।

অর্থনীতিতে ছিল না খুব বেশি গতি। সারা বছর মুদ্রাস্ফীতি ভুগিয়েছে। আগামী বছরের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা। বিশেষ করে খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি কমাতে হবে দ্রুত।  

দেশে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এক শ্রেণির কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তৈরি হয়েছে কিশোর গ্যাং। তারা সব ধরনের অপরাধ করছে। সমাজে নানা ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। আমাদের কোনো সন্তান সন্ত্রাসী হবে না। তারা মানুষ হবে। আমাদের কাছে সব থেকে চিন্তার বিষয় ছিল কিছু ছাত্র-ছাত্রীর সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত এসব তরুণ-তরুণী সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়েছে। আমাদের এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা কেবল দেশ গড়ার কারিগর হয়েই বের হয়। দেশকে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করতে পারে সে প্রচেষ্টাই করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হবে একেকজন সম্পদ হয়ে। কারণ বৃহৎ জনসংখ্যার এই দেশে মানুষই হলো বড় সম্পদ। প্রতিটি মানুষকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই এদেশ এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে।

নারী নির্যাতনও হয়েছে ফেলে আসা বছরে। ধর্ষণ, গণধর্ষণের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। ফেলে আসা বছরে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। তবু ধর্ষণের ঘটনা কমছে না। প্রতিদিন পত্রপত্রিকা খুললেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। এর সঙ্গে রয়েছে যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহের মতো ঘটনা যা নারী অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিচ্ছে। এসব সামাজিক সচেতনার মাধ্যমে দূর করতে হবে। সবকিছু ছাড়িয়ে আমাদের আশা। সামাজিক অবক্ষয়ের একটি রূপ হলো এসব নির্মম হত্যাকাণ্ড।

আমাদের তরুণ সমাজকে বিপথে যাওয়া থেকে আটকাতে হবে। বিপথগামী তরুণ সমাজের কাছ থেকে দেশ কেবল খারাপ কিছু পেতে পারে। ভালো কিছু দুরাশা মাত্র। আমরা আশা করি এদেশ সন্ত্রাসীদের নয়, এদেশ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের। এদেশ সবার।  

আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি একদিন আমরা দেশকে উন্নত দেশে পরিণত অবশ্যই করতে পারব। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে, অর্থনীতিও শক্তিশালী হচ্ছে। খুব শিগগিরই আমরা আর শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশের প্রত্যাশা করতে পারি। আমাদের দেশে চাকরির নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের দেশ এগিয়ে চলেছে। দেশের চলমান বেকার সমস্যার সমাধান হবে তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরেই। ইতোমধ্যেই দেশে বহু ফ্রি ল্যান্সার তৈরি হয়েছে, যারা ঘরে বসেই তাদের আয়ের কাজটি করে চলেছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ আজ এক মডেলের নাম। অবকাঠামোগত উন্নয়নেও আমরা এগিয়ে চলেছি।  

কিছু মানুষের জন্য আমরা সবাইকে দোষ দিতে পারি না। এদেশ বহু আগে থেকেই হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষের শান্তিতে বসবাস করার জায়গা। এখানে কোনো হিংসাবিদ্বেষ থাকবে না। থাকবে হাতে হাত রেখে কাজ করে যাবার প্রত্যয়। সেই প্রত্যয় থেকে বলছি, সংখ্যালঘুদের ওপর আর কোনো হামলা যাতে না ঘটে, সবাই যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।

আমরা থেমে থাকব না। আমরা এগিয়ে যাবই দুর্বার গতিতে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিতে চাই যে, আমরা সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।

যে সংস্কারের পথে বাংলাদেশ হাঁটছে সেখানে একটি স্বপ্নের দেশ গড়ে উঠবে যদি লক্ষ্য ঠিক থাকে। সেই বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সমাজের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করা জরুরি। যে সমস্যাগুলো সমাজকে বিপথে ধাবিত করছে। কারণ আমাদের প্রধান শক্তি তারুণ্য। তাদের হাতেই নতুন বাংলাদেশ। আর সমস্যাগুলো সেই তারুণ্যকেই গ্রাস করছে। যেমন- দুর্নীতি, ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, মাদক, কিশোর গ্যাং, সাইবার বুলিং ইত্যাদি নানা সমস্যা। দুর্নীতি আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। দেশটা যখন উন্নতির দিকে ধাবমান তখন এসব দুর্নীতিবাজ মানুষের জন্য উন্নয়নের সুফল দেশের প্রান্তিক মানুষ পর্যায়ে পৌঁছায় না। ফলে উন্নয়নের সুফল তারা কমই ভোগ করতে পারছে। তাদের প্রাপ্য সুবিধা নিয়ে ওপর মহলের কিছু দুর্নীতিপ্রবণ মানুষ আরাম আয়েশে বিলাসবহুলভাবে জীবন কাটাচ্ছে। দুর্নীতির ঘুণপোকা দেশের উন্নয়নকে কেটে শেষ করে ফেলছে। দেশের নৈতিক অধঃপতনের পেছনে অন্যতম প্রধান দায়ী মাদকদ্রব্য।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধী মাদকসেবী বা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার খোঁজ পাওয়া যায়। যখন একজন ব্যক্তি মাদক গ্রহণ শুরু করে তখন তার চিন্তা করার স্বাভাবিক ক্ষমতা কমতে থাকে। একসময় মাদকের জন্য অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে প্রথমে পরিবারে চাপ সৃষ্টি করে এবং পরিবার যখন তা দিতে অস্বীকার করে তখনই সে বাইরে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এই অপরাধ ছোট থেকে বড় হতে থাকে। সে সমাজে একজন সন্ত্রাসী, মাদকসেবী বা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পায়। এভাবেই মাদক একটি সমাজকে অসুস্থ করে দেয়। অসুস্থ সমাজে নানা রকম অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, সমাজে মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধ করা।

নারী যখন সমানতালে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল হচ্ছে, তখন বাল্যবিবাহ আমাদের অভিশাপ হয়ে ঘাড়ে চেপে বসেছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। আর সেই কিশোরীর মতো পরিণতি না হলেও বাল্যবিবাহের ফলে এক কিশোরীর স্বপ্নের যে মৃত্যু ঘটে তাও তো মৃত্যুই। আধুনিক সভ্যতার অগ্রযাত্রায় নারীর অবদান অনস্বীকার্য। আর এই অগ্রযাত্রায় এখন প্রধান বাধা হলো, বাল্যবিবাহের মতো বাধা। যার জন্য সেই কিশোরীর পরিবার দায়ী থাকে। মাঝে মধ্যেই পত্রিকায় বাল্যবিবাহের অপরাধে শাস্তিও হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক সচেতনতা গড়ে না ওঠার দরুণ তা রোধ করা যাচ্ছে না। আজও সেই একই মানসিকতা রয়েছে বহু পরিবারে। মেয়েকে যত দ্রুত বিবাহ দেওয়া যায় ততই মঙ্গল! এই ধরনের আদি মনমানসিকতা থেকে আমরা আজও অনেকেই বের হতে পারিনি। সেই চেষ্টাও করছি না।

আমাদের সামনে কিশোর গ্যাং বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিশোরদের হাতে মাদক উঠছে, তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে, যখন তাদের হাতে থাকার কথা বই। এটা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার। তারা এই মাদকের জোগান বা অস্ত্রের জোগান কোথায় পায়? একটি সুস্থ প্রজন্মকে কারা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামাচ্ছে? এই দেশকে প্রকৃত অর্থে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব এই তরুণ প্রজন্মের হাতে। নতুন বছরে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশা করি।

আরবি/জেআই

Link copied!