১। আমার এক বন্ধুর আত্মীয় একটি স্কুলের শিক্ষক। একটি বিশেষ কারণে তার কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। তিনি ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা তুলে হাত ব্যাগে করে নিয়ে বাসায় আসছিলেন। সঙ্গে কেউ ছিল না। আসার পথে রাস্তায় ছোট একটি দুর্ঘটনার শিকার হলে দুইজন ব্যক্তি উনাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভর্তি করে তারা চলে যান। তিনি ভেবেছিলেন তারা উপকারী বন্ধু। বিপদে ফেরেশতারা এসে তার উপকার করে গেছেন। ডাক্তার হাঁটুতে, হাতে, মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার কিছু সময় পর তিনি হাত ব্যাগটির ভেতরে দেখলেন, সবকিছুই ঠিক আছে। শুধু সেই তিন লাখ টাকা নেই। বুঝতে পারলেন, যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন, তাদের দুইজনের কেউ সেই টাকা সরিয়ে ফেলেছে। কারণ হাসপাতালে আনার সময় তাদের কাছেই হাত ব্যাগটি ছিল। দুর্ঘটনার পর তিনি প্রায় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন। একজন স্কুল শিক্ষকের কাছে তিন লাখ টাকা কতটা মূল্যবান, সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারি। আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করার দরকার হয় না।
২। গত বছর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। এক একজন দোকানদারের কোটি কোটি টাকার কাপড় নিমেষেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেকেই এই বিপদে এগিয়ে এসে বিপদগ্রস্ত মানুষদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন। আবার এদের মধ্যেও কিছু মানুষ সুযোগ বুঝে কাপড় চুরি করতে এসেছে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন কেউ কাপড় চুরি না করে। কতটা অমানুষ এরা!
৩। মাদারীপুরের শিবচরে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা হলো। সেখানেও দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হওয়া গাড়ির মধ্যে আটকে থাকা ব্যক্তির কাছে একজন এসে হাজির। আহত ব্যক্তি ভেবেছিলেন, সামনে এসে হাজির হওয়া ব্যক্তি হয়তো ফেরেশতা। তাকে উদ্ধার করতেই হাজির হয়েছে। কিন্তু ধারণা ভুল করে দিয়েছিল সেই আগন্তুক। সে মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন নিয়ে হাওয়া হয়ে গেল। যে কোনো বাস, লঞ্চ দুর্ঘটনায় যখন আহত মানুষগুলো নড়তে-চড়তে পারে না, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে, তখন কাছে আসা কেউ কেউ তাদের সাহায্য করার বদলে তাদের হাতঘড়ি, সোনার চেইন, মানিব্যাগসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে চলে যায়। এরাও বিপদের সময় কাছে আসে, কিন্তু বন্ধুরূপে নয় ডাকাত রূপে।
যে কোনো বিপদে, অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ কে যে বিপদের বন্ধু এবং কে বিপদের সময় সুযোগসন্ধানী, সেটা বুঝতে গেলেও সময়ের প্রয়োজন। আর তত সময়ে ক্ষতি যা হওয়ার, সেটা হয়ে যায়। কারণ বিপদের সময় সুযোগসন্ধানীরাও কাছে আসে!
আপনার মতামত লিখুন :