ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪

বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ে ভাবে না ধনী দেশগুলো

দীপঙ্কর গৌতম

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৪, ০১:০৬ পিএম

বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ে ভাবে না ধনী দেশগুলো

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রতিনিয়ত আমরা দেখি কী নির্মম সব চিত্র সারা দেশে। পরিবেশ চিন্তা কোনোমতেই কারও মাথায় ঢুকছে না। চলছে খাল-বিল, পুকুর দখল, বন উজাড় করা, গাছ কাটা, জলাধার ভরাট করা, এমনকি দেশের অন্যতম প্রধান ও বড় নদী যমুনার বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে পাড়ের মানুষকে বিপন্ন করে তুলছে কিছু দুর্বৃত্ত। এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন কখনো হয়। তারপর সব শেষ এভাবে আমাদের দেশের স্বাভাবিক আবহাওয়া আর নেই। তারপরও পত্রিকায় দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে দুটো শব্দ ইদানীং বেশি শোনা যায় তা হলো- জলবায়ু সম্মেলন।

আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করার আয়োজন কোথায় কে করছে।  আমার শৈশবের কথা মনে আছে, গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম পড়ত। রোদ্দুরের প্রচণ্ড তাপ ছিল। আমরা স্থানীয় ভাষায় বলতাম ঠাটা বা ঠাডা রোদ্দুর। স্কুল থেকে এসে বাড়ির দক্ষিণদিকে বৃক্ষের শীতল ছায়ায় আমরা পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যেতাম। তখন গরমেরও একটা মায়াবি দিক ছিল, খরতাপ ছিল তবে সহনীয়। গ্রীষ্মের রোদে তেজ যেমন থাকত একটা ম্লানভাবও থাকত। যা তালের পাখার বাতাসে নিয়ন্ত্রণ করা যেত এখন এসিতেও সেটা হয় না। শীতের সকালে মিঠে রোদে বসে লেখাপড়া বা পান্তা খাওয়ার মধ্যেও শীতলতা ছিল, তারও একটা মায়া ছিল। বৃষ্টির একটা নিয়ম ছিল। এখন কোনো কিছু নিয়মে নেই।

শীত-গ্রীষ্ম, বর্ষা মায়াহীন ঋতুতে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ঋতুর এই বৈচিত্র্যহীনতা দেখে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে আরও বদলে যাবে আমাদের জীবনযাপন। পানির সংকট তৈরি হবে। খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে। কোনো কোনো অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে পড়বে, এবং সেই সঙ্গে সমুদ্রের পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে। ফলে সেসব জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।  চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া অতিরিক্ত গরমের পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। জীবন এবং জীবিকা পড়বে হুমকিতে। গরিব দেশগুলোতে এসব বিপদ মোকাবিলার সক্ষমতা কম বলে তাদের ওপর এই চরম আবহাওয়ার ধাক্কা পড়বে সবচেয়ে বেশি। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উত্তর মেরুর জমাট বাঁধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে উপকূলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

এছাড়া সাইবেরিয়ার মতো অঞ্চলে মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে, মিথেনের মতো আরেকটি গ্রিন হাউজ গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর উষ্ণতা তাতে আরও বাড়বে, এবং বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে। চিরচেনা বসতির আবহাওয়া বদলের কারণে অনেক জীব-জন্তু প্রাণী নতুন জায়গায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করবে। জলবায়ুর এই পরিবর্তন এত দ্রুত হারে এখন ঘটছে যে অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যেমন- বরফ গলতে থাকায় পোলার বিয়ার বা উত্তর মেরুর শে^ত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে তার জন্য মানুষের কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী। মানুষ যখন থেকে কলকারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করল সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ঊনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়। আমাদের দেশে পুঁজির অসম বিকাশের ধাক্কা গ্রাম পর্যন্ত লেগেছে। গাছ, বন-জঙ্গল সাফ করে, জলাধার ভরাট করে বাড়ি, সুউচ্চ ভবন, শপিং মল করার প্রতিযোগিতা চলছে। অন্যদিকে বনাঞ্চল উজাড় করছে বনদস্যুরা। সঙ্গে আছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ। এটা ছাড়া যে এমন হয় না সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।

মানুষ যত উচ্চাভিলাষী হচ্ছে। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক হচ্ছে পরিবেশ ততই ধ্বংস হচ্ছে। পুঁজির কোনো মানবিকতা নেই। পুঁজির মালিকরা নিমেষে খাল-নদী দখল করছে অবাধে। তারা এতই অপ্রতিরোধ্য যে সন্তানের নিঃশ্বাস ছাড়ার বিষয়টিও তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। দেশের এসব দস্যুদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে যেসব দেশ কার্বন নিঃসরণ করছে তাদের বিরুদ্ধে বলা সহজ হয়। শিল্পবিপ্লব শুরুর আগে বিশে^র যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ^জুড়ে মানবস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। বায়ুদূষণের মতো পরিবেশগত ঝুঁকি প্রতিবছর এক কোটি ৩৭ লাখ মৃত্যুর জন্য দায়ী।

জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নিরাপদ, পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পরিবেশ’কে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ফিজি এবং মালদ্বীপের মতো জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো আনা এই রেজ্যুলেশনের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। জলবায়ু সংকটে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি, চরম আবহাওয়া দূষণ এবং বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার ব্যাঘাতের কারণে বছরে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায় বলেও এক তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের রাশ টেনে ধরতে এক ঐতিহাসিক ঐকমত্যে পৌঁছেছিল পৃথিবী। প্যারিসে শেষমেশ যা হয়েছিল তার সারসংক্ষেপ আজ তুলে ধরতে গেলে এই দাঁড়ায় যে, বিশ্বের দেশগুলো তখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আর সেটাকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার জন্য দেশগুলো নানা পদক্ষেপ নেবে, এমন প্রতিশ্রুতিও তারা দেয়। এতে উন্নত দেশগুলোকে বাধ্য করা হয়েছে, তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার চাঁদা দেবে। কিন্তু চূড়ান্ত আলোচনায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক নম্বর বিষয়টিই বাদ পড়ে গেছে, নিঃসরণের হার বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। পৃথিবী নামক গ্রহের তাপমাত্রা কোনো একপর্যায়ে স্থিতিশীল রাখতে হলে আমাদের আর প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হার বাড়ানো চলবে না।

পৃথিবীর পরিবেশ-সমুদ্র ব্যবস্থা অনেকটা বাথটাবের মতো হয়ে গেছে, যেটি ক্রমাগত কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্য গ্রিনহাউস গ্যাসে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এর মাত্রা যত বেশি হবে, ততই তার তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। বিজ্ঞানীরা প্রায় সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ওপরে চলে গেলে পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নেবে। কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণকারী শিল্পকে বন্ধ করতে হবে। মানে উন্নত দেশগুলোর ব্যবসা বদলাতে হবে, অথবা তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। আর আমাদের ভবিষ্যৎ নিহিত রয়েছে কার্বন নিঃসরণহীন প্রযুক্তি ও ব্যবসার ওপর। এই সংকট এতকালেও কাটাতে পারেনি বিশ্ব। ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ শুধু বেড়েছেই। উন্নত দেশগুলো তাদের কথা রাখেনি।

বিশ্বের বেশি কার্বন নির্গমনকারী উন্নত দেশগুলো বছরে কী পরিমাণ কমাবে, তার যে পরিকল্পনা দিচ্ছে- তাতে লক্ষ্য অর্জন দূরে সরে যাচ্ছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে বেশ আগেই। বাংলাদেশ আগে অবস্থান নিয়ে জানিয়েছিল, যারা বেশি কার্বন নির্গমন ঘটাচ্ছে, তাদের উচ্চাভিলাষী এনডিসি (ন্যাশনাল ডিটারমিন্ড কন্ট্রিবিউশন) প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ^ব্যাপী দায়বদ্ধতা ভাগ করে নেওয়াসহ লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অবশ্যই সমাধান করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী নির্গমনের মাত্রা দশমিক ৪৭ শতাংশেরও কম রাখার পরেও বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। ২০১৫ সালে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে যে কথা বিশ্বনেতারা বলেছিলেন তারা সে কথা রাখেননি। একইভাবে আমরা দেখি আমাদের দেশেও বৃক্ষ, নদী-খাল, বিল সব দখল করে দেশের পরিবেশের বারোটা বাজাচ্ছে একটা গোষ্ঠী। আমাদের জঙ্গল অবধি খেয়ে ফেলছে এই চিহ্নিত গোষ্ঠী। আমাদের পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে- এটা বলেই যেন সবাই খালাস। আমাদের পরিবেশ বিপর্যযের কারণ জীবজগৎ পর্যন্ত বিপন্ন। জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। হাইব্রিড মাছ সবজি, মুরগি সব জায়গা করে নিচ্ছে এখানে। এসব চাষ করতে যেসব সার, কীটনাশক, বিষ ব্যবহার করা হচ্ছে তা জলে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে যার কারণে দেশজ বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। বিষ মেশানো সবজি, ফল খেয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রাণনাশী রোগ বাড়ছে।

অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো আমাদের দেশে তাদের মার্কেট বাড়াতে একের পর এক সর্বনাশ করে যাচ্ছে। এক হাইব্রিড খাবার, তাতে মিশছে কত রকমের বিষ আবার বাজারজাত করতে ব্যবহার করছে কারবাইড ফরমালিন। জীবনবিনাশী এসব রোগের ওষুধও সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো বিক্রি করছে। চিকিৎসার খরচও তাদের দেশে হচ্ছে। এ বড় বিশাল প্যাঁচে আমরা। এসব সংকটের কথা, খাদ্যে বিষ বা ভেজালের কথা সবাই জানে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

পরিবেশ রক্ষায় আমরা কতটা সচেতন সেটাও ভাবনার ব্যাপার। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে জাতীয় মাত্রা নির্ধারণের জন্য উন্নত দেশগুলোকে তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য বার্ষিক একশ’ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণেরও আহ্বান রয়েছে বাংলাদেশের। কার্বন নির্গমন ২০৫০ সালের মধ্যে কার্যত শূন্যে নামিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশকে এখন কার্বন নির্গমন ব্যাপকহারে কমাতে হবে, এ ছাড়া বিকল্প নেই। অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের ৫০: ৫০ বরাদ্দসহ বার্ষিক একশ’ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা আবশ্যক।

ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতি উন্নত দেশগুলোর সমর্থন ও সহায়তা প্রয়োজন। এ দাবি বিশে^র জলবায়ু সংকটে নিপতিত দেশগুলোর। কিন্তু এই সম্মেলনের পর বিশ্বের বড় দেশগুলো কি তাদের প্রতিশ্রুতি রাখবে না? নাকি এর পরিণতি ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনের রূপ নেবে? একই সঙ্গে আমরা বলি আমাদের দেশের জলবায়ু রক্ষায় ও তাপমাত্রা কমাতে খাল-বিল, নদীসহ জল-জঙ্গল ধ্বংস করছে যারা, যারা বিরান করছে ফসলের মাঠ; তাদের দমন করতে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে।

লেখক

দীপঙ্কর গৌতম

গবেষক-প্রবন্ধকার ও সাংবাদিক।

আরবি/জেআই

Link copied!