ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
রোহিঙ্গা সংকটের সাত বছর

বৈষম্য ও নিপীড়নের সম্মুখীন হচ্ছে রোহিঙ্গারা: জাতিসংঘ

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম

বৈষম্য ও নিপীড়নের সম্মুখীন হচ্ছে রোহিঙ্গারা: জাতিসংঘ

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ২০১৭ সাল থেকে সহিংসতার কবলে পড়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির সংকট গুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের আজ সাত বছর। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের বাস্তুচ্যুত হওয়ার সপ্তম বার্ষিকীতে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র সংঘাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্য ও নিপীড়নের সম্মুখীন হচ্ছে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়ানমারে সংঘাতের সব পক্ষকে সহিংসতার অবসান এবং প্রযোজ্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের জন্য ২০২৪ সালের যৌথ পরিকল্পনার মাধ্যমে আঞ্চলিক সুরক্ষা প্রচেষ্টা জোরদার, সংঘাত-আক্রান্ত সম্প্রদায়গুলোতে অ্যাক্সেস প্রদান এবং আয়োজক দেশগুলোকে আরও সহায়তা করার জন্য তার আবেদন পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান করেছেন।

২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে। প্রায় ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং প্রত্যাবাসনের তাৎক্ষণিক সম্ভাবনা ছাড়াই এই অঞ্চলজুড়ে আরও এক লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সামরিক ও আধাসামরিক (বর্ডার গার্ড) বাহিনী কর্তৃক নিপীড়িত হয়ে স্বল্পপরিসরে রোহিঙ্গা টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ২০১৭ সালের শুরুতে আবারও দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে, যা একই বছরের ২৫ আগস্ট প্রকট আকার ধারণ করে। তখন সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রাথমিক অবস্থায় টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীকালে তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়। সংকটের শুরুতে শুধু কক্সবাজারবাসী নয়, সারা দেশ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন এসব অসহায় মানুষের জন্য সাহায্য নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে যায়।

বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সংকট নির্দিষ্ট ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭৮ সালে ২ লাখ ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়, তবে তারা দুই বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসিত হয়। ১৯৯১-৯২ সালে আবারও ২ লাখ ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ২০১৬ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন শুরু হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে সে বছরের সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার সরকারের আহ্বানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট Advisory Commission on Rakhine State গঠন করা হয়। কিন্তু কমিশনের কার্যক্রম চলাকালেই রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনী নিপীড়ন জোরদার করে। যা ২৫ আগস্ট ২০১৭ ভয়াবহ রূপ নেয়।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে পালানোর সময় কয়েকশ বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ফলকার টুর্ক। জেনেভা থেকে শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন ফলকার টুর্ক। তিনি বলেন, এই নৃশংসতায় দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে এবং এ ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, নৈতিক দায়িত্ব এবং আইনি বাধ্যবাধকতা হিসেবে অতীতের অপরাধ ও ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি অবশ্যই রোধ করতে হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান বলেন, চলতি মাসে মিয়ানমারে সামরিক অভিযানের সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে। ওই অভিযানে সীমান্ত পেরিয়ে সাত লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। বিশ্ব বলছে, ‘আর পুনরাবৃত্তি নয়’, তারপরও রাখাইনে হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতি দেখা যাচ্ছে। সশস্ত্র সংঘাতের পক্ষগুলো রোহিঙ্গা ও অন্যদের বিরুদ্ধে হামলার দায় অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। তারা এমন আচরণ করছে, যেন তাদের রক্ষা করার ক্ষমতা নেই। এটি বিশ্বাসযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়েছে। ফলকার টুর্ক বলেন, রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে তার জন্য সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি উভয়েই সরাসরি দায়ী। তিনি বলেন, উভয় পক্ষকে অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধ করতে হবে। সংঘাত থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে হবে। তাদের জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা পাওয়ার অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

 

সম্পাদক, রূপালী বাংলাদেশ

আরবি/জেডআর

Link copied!