ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষায় ইউনিসেফ

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪, ০৮:৩৪ পিএম

আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষায় ইউনিসেফ

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল তখন। সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং শিশুর অধিকার রক্ষা করতে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের ত্রাণ সাহায্য প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনিসেফ। জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা- যা বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের সেবা প্রদান করে। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, মৌলিক শিক্ষা, স্যানিটেশন ও নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে। বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রদানকারী সংস্থা। জাতিসংঘ জরুরি শিশু তহবিলে জরুরি শব্দ যুক্ত থাকলেও পরে বাদ দেওয়া হয়। সংক্ষেপে ইউনিসেফ প্রচলিত অবস্থায় থেকে যায়। 

জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থার নাম। শিশুদের উন্নতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রথম অধিবেশনে এই সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৫০ সালের পর থেকে এটি বিশ্বের স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের কল্যাণ ও উন্নয়নে কাজ করে আসছে। ইউনিসেফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত। ১৯৬৫ সালে ইউনিসেফ তাদের কল্যাণমুখী ভূমিকার কারণে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়। ১৯৫১ সালে ঢাকায় ইউনিসেফের অফিস প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৭৭ সাল থেকে তারা নিয়মিতভাবে এ দেশের মা-শিশুর উন্নয়নে কাজ করছে।

শিশু অধিকার সনদের আওতায় প্রতিটি শিশুকে সুরক্ষা দিতে ইউনিসেফ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ১৯০টিরও বেশি দেশ এবং অঞ্চলজুড়ে, শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত শিশুদের বেঁচে থাকা, বেড়ে ওঠা এবং তাদের সম্ভাবনা বিকাশে সহায়তা করছে। এ ছাড়াও শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাষণ, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষায় আমরা কাজ করি।

বাংলাদেশে এবারের বন্যায় বাড়িঘর, স্কুল ও গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দেশের পূর্বাঞ্চলের ২০ লাখের বেশি শিশু এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিগত ৩৪ বছরে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়ংকর এই বন্যায় ৫৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউনিসেফ দুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফের সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ প্রাথমিক যাচাই পর্ব চালায়। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিসেফ এ পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার শিশুসহ তিন লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে।

এসব মানুষের মধ্যে তারা জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন উপকরণ যেমন ৩৬ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানি ধরে রাখার জন্য ২৫ হাজার জেরিক্যান এবং দুই লাখ ৫০ হাজারের বেশি ওরাল রিহাইড্রেশন সল্টের (মুখে খাবার স্যালাইন) ব্যাগ বিতরণ করেছে। যা বন্যার্তদের প্রভূত উপকারে এসেছে। তবে এসবের বাইরেও আরও কিছু করা যে প্রয়োজন, সে কথা বলাবাহুল্য।

২০০৭ সালের ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সিডরে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সময় ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি চাহিদা পূরণ ও ত্রাণ সহায়তায় দুই কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় করেছিল ইউনিসেফ।

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাপ্রবাহের সংখ্যা, তীব্রতা এবং অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাংলাদেশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ কারণে জলবায়ু সংকটকে মৌলিকভাবে একটি শিশু অধিকার সংকট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি ইনডেক্স (চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স) অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিশুরা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকির শিকার।

গুটিবসন্ত গোত্রীয় এমপক্স নিয়ে উদ্বিগ্ন সারা পৃথিবী। আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে স্বস্তির খবর হলো জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এমপক্স ভ্যাকসিন কেনার জন্য জরুরি দরপত্র আহ্বান করেছে। যেসব দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, তাদের সহায়তার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএফপি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ও আফ্রিকা সিডিসির (সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) সঙ্গে যৌথভাবে ইউনিসেফ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এখন এমপক্স প্রতিহত করার জন্য যেসব ভ্যাকসিন আছে, সেগুলো যাতে শিগগির সবার কাছে পৌঁছানো যায় এবং একইসঙ্গে উৎপাদন যাতে আরও বাড়ানো যায়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।’

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশে দুর্যোগ শুরু হওয়ার পরপরই বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফের সঙ্গেও প্রাথমিক যাচাইপর্ব চালায় ইউনিসেফ। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিসেফ বন্যার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার শিশুসহ তিন লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ৩৬ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানি ধরে রাখতে ২৫ হাজার জেরিক্যান ও দুই লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মুখে খাবার স্যালাইনের ব্যাগ বিতরণ করেছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য এসব সহায়তা ছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে নগদ অর্থসহায়তা, নিরাপদ পানীয় জল, স্বাস্থ্য উপকরণ, জরুরি ল্যাট্রিন ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ দরকার।

জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি যথার্থই বলেছেন, বছরের পর বছর বন্যা, তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশুর জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই শিশুদের জীবন পরিবর্তন করছে। বেশি দেরি হওয়ার আগেই, শিশুদের জন্য বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দকে জরুরিভাবে কাজ করা এবং তাদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো প্রশমিত করার জন্য সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিতে ইউনিসেফ আহ্বান জানিয়েছে।

তিন বছর আগে মানসম্পন্ন শিক্ষায় মেয়ে শিশু এবং তরুণদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ডলার সহায়তা দিয়েছিল ইউনিসেফ। বাংলাদেশের মানুষ আশা করে, অতীতের পরম মিত্রের মতো ইউনিসেফ এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সুরক্ষায় তহবিল গঠনে সফল হবে। ইউনিসেফের আহ্বানে নিশ্চয়ই সাড়া দেবে উন্নত বিশ্ব।
 

সম্পাদক, রূপালী বাংলাদেশ
 

আরবি/জেডআর

Link copied!