ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪

দোদুল্যমানতায় মার্কিন নির্বাচন

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৪, ০৪:৫১ পিএম

দোদুল্যমানতায় মার্কিন নির্বাচন

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনের বাকি আর বেশিদিন নেই। এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি মুহূর্তেই পাল্টে যাচ্ছে নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে এমন এক নির্বাচন এবার হচ্ছে, যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, অন্য অনেক বিষয়ের মতো বিশ্বের ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করবে। ফলে এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ট্রাম্প কি আবারও জয়লাভ করতে পারবেন না কি হোয়াইট হাউসে এশীয়-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ কমলা হ্যারিস নতুন ইনিংস শুরু করবেন?

বিভিন্ন জরিপে বাইডেনের চেয়ে বড় ব্যবধানেই এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ একসময় ধরেই নিয়েছিলেন এবারের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠেকানোর কোনো পথ নেই। তবে জো বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার পর ডেমোক্র্যাট শিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রার্থী করে। আর তাকে প্রার্থী করার পর থেকে অবস্থা বদলে যেতে শুরু করে ডেমোক্র্যাটদের।

কট্টরপন্থি ট্রাম্প মার্কিন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কাছে আস্থার জায়গা হারিয়েছিলেন বহু আগেই। দেশে-বিদেশে তার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জনমনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। যে চার বছর ক্ষমতায় ছিলেন, সে সময় তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘শত্রু’ আর ন্যাটোকে ‘অচল’ বলে ঘোষণা করছিলেন। যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোটকে প্রকাশ্যে স্বাগত জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন অন্য দেশগুলোরও উচিত সে পথে হাঁটা। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বৈশ্বিক বিভিন্ন চুক্তি থেকেও প্রত্যাহার করে নেন যুক্তরাষ্ট্রকে। অন্যদিকে, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হার মানবেন না বলে গোঁ ধরার পর, তার উগ্র সমর্থকেরা কংগ্রেস লণ্ডভণ্ড করে ছেড়েছিল।

এই ব্যাপারগুলো সামনে তুলে ধরে প্রথম থেকেই কমলা ট্রাম্পকে আক্রমণ করার কৌশলে আগাতে থাকেন। নির্বাচনী প্রচারে নেমে প্রথম সমাবেশেই নভেম্বরের নির্বাচনকে ‘প্রাক্তন প্রসিকিউটর এবং দোষী সাব্যস্ত অপরাধীর মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার’ লড়াই হিসেবে বর্ণনা করেন। তাছাড়া, কমলা প্রার্থী হওয়ায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের নারী, কৃষ্ণকায়, লাতিন ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হতে শুরু করে। যে চার গ্রুপেরই সমর্থনই হারিয়েছিলেন বাইডেন। এই সমর্থনই মূলত কমলাকে তর তর করে এগিয়ে দেয়। ফলে দ্রুতই জরিপগুলোও কমলার পক্ষে কথা বলতে শুরু করে। তবে টানা দুই মাস বিভিন্ন জনমত জরিপে কমলা হ্যারিস এগিয়ে থাকলেও অক্টোবরের শুরু থেকে জনমত সমীক্ষায় জনপ্রিয়তার পারদ ওঠা-নামা করতে শুরু করে দুই প্রার্থীরই। আর শেষ ভাগের জরিপে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।

দেশটির তিনটি কলেজ- ফ্রাঙ্কলিন, মার্শাল ও মেরিস্ট এবং সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পরিচালিত সর্বশেষ জরিপ জানাচ্ছে, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে গেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি ডেমোক্র্যাট-সমর্থিত মিডিয়া হাউস হিসেবে গণ্য হওয়া নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা কলেজ পরিচালিত সর্বশেষ জরিপেও দুই প্রার্থীকে সমান অবস্থানে রাখা হয়েছে। যারা তাদের আগের জরিপগুলোতে হ্যারিসকে ট্রাম্পের চাইতে বড় ব্যবধানে এগিয়ে দেখিয়েছিল। সাম্প্রতিক হওয়া এসব জরিপের ফলাফল জানাচ্ছে, দোদুল্যমান রাজ্যগুলোও নির্বাচনের আগে কপালের ভাঁজ বাড়াচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের।

যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গরাজ্য পঞ্চাশটা। কোনো রাজ্যে যে প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন, তিনিই সেই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট পাবেন। এই হিসাবটি এমন- ধরা যাক, একটি রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে ২০টি। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যে ব্যবধানেই জয়লাভ করুন না কেন, সব কটি ইলেকটোরাল ভোট তিনি পেয়ে যাবেন। ফলে পপুলার ভোট কম পেয়েও ইলেকটোরাল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড আছে। ২০১৬ সালেই যেমনভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প।

যা বলছিলাম, এ পঞ্চাশটা রাজ্যের ভেতরে এমন কতগুলো স্টেট বা রাজ্য আছে যেগুলোকে রিপাবলিকান রেড স্টেটস বা রিপাবলিকানদের ঘাঁটি বলা হয়। এখানে ট্রাম্প প্রচারণা না চালালেও খুব সহজেই জিতে যাবেন। অপরদিকে কিছু রাজ্য আছে যেগুলোকে ডেমোক্র্যাটিক ব্লু স্টেটস বলা হয়। নিশ্চিতভাবেই সেখানে কমলা হ্যারিস জয়লাভ করবেন। এসবের পাশাপাশি নীল ও লালের কিছু স্টেটস বা রাজ্য আছে, যারা কখনো ডেমোক্র্যাটদের কখনো রিপাবলিকানদের নির্বাচিত করে। এগুলোকে বলা হয় দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য বা সুইং স্টেট। এরাই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। এ রকম রাজ্যের সংখ্যা সাতটি।

এসব রাজ্যের মধ্যে আছে- পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, অ্যারিজোনা, নেভাদা, মিশিগান এবং উইসকনসিন। যেহেতু শুধু নীল বা লালের অধ্যুষিত রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল ভোট দিয়ে কোনো প্রার্থীই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন না, ফলে এই দোদুল্যমান রাজ্যগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হার-জিতের নির্ধারক হয়ে ওঠে।

এই সুইং স্টেটগুলোর মধ্যে অন্যতম ১৫টি ইলেকটোরাল কলেজের রাজ্য মিশিগানে ১৯৯২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হওয়া সাতটি নির্বাচনের মধ্যে ছয়বারই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জয়লাভ করে। ২০২০ সালের নির্বাচনেও বাইডেন এখানে জয়লাভ করেছিলেন। তবে ভোটের ব্যবধান বেশি ছিল না। কুইনিপ্যাক ইউনিভার্সিটির করা সাম্প্রতিক এক জরিপে কমলা হ্যারিস এখানে ৩ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও ডেমোক্র্যাটদের চিন্তার কারণ হচ্ছেন এখানকার মুসলিম এবং আরব-আমেরিকান ভোটাররা। এই রাজ্যে আরব-আমেরিকান ভোটারদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গাজা এবং লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ করতে বাইডেন প্রশাসনের নীরবতা রাজ্যটির ৩ লাখ আরব-আমেরিকান ভোটারকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। আর এর জন্য বাইডেনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকেও সমানভাবে দায়ী করছেন তারা। ফলে জরিপে এগিয়ে থেকেও এখানে স্বস্তিতে নেই কমলা।

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আরেক ব্যাটল গ্রাউন্ড অ্যারিজোনার অবস্থান। এই রাজ্যের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ আফ্রিকান-আমেরিকান, সমসংখ্যক রেড ইন্ডিয়ান। এ ছাড়া হিস্পানিক মানুষ আছে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। যে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প সবসময় উচ্চকণ্ঠ, সেই অভিবাসীদের বড় অংশটি এই রাজ্যেই। বলা হচ্ছে, এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গেম চেঞ্জার হতে পারে এই অ্যারিজোনা। ১১টি ইলেকটোরাল ভোট থাকা এই রাজ্য প্রথাগতভাবে রিপাবলিক পার্টির ঘাঁটি হলেও ১৯৯৬ সালে বিল ক্লিনটন এবং ২০২০ সালে জো বাইডেনের পক্ষে রায় দিয়েছিল। তবে এ বছর অ্যারিজোনা পুরোনো শিবিরে ফেরার পূর্বাভাস মিলেছে। মেরিস্ট কলেজ, ইউএসএ টুডে ও সাফোক বিশ্ বিদ্যালয়ের সর্বশেষ জরিপ বলছে, অ্যারিজোনায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের চেয়ে ১ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই রাজ্যের প্রচারে অভিবাসনবিরোধী নীতিকে শক্তভাবে কাজে লাগাতে চাইছেন ট্রাম্প।

১০ ইলেকটোরাল ভোটের আরেক দোদুল্যমান রাজ্য উইসকনসিনে গত ছয় নির্বাচনের পাঁচটিতে জয়লাভ করেছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীরা। তবে যে একটিতে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন, সেই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ভালো করলেও প্রতিবারই জিতেছে খুবই সামান্য ব্যবধানে। এবারের রিপাবলিকান পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশন হয়েছে এই রাজ্যে, ট্রাম্প দলীয় নমিনেশনও নিয়েছেন এখান থেকেই। রাজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ শ্বেতাঙ্গ। ফলে উইসকনসিনের ১০টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোটকে টার্গেট করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট-শচার স্কুল পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে এখানে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে কমালা হ্যারিস। তাকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৫০ ভোটার আর ট্রাম্পকে ৪৭ ভাগ ভোটার।

দোদুল্যমান আরেক রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় এবার ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন ইহুদি ভোটাররা। অধিকাংশ মার্কিন ইহুদি ভোটার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দিয়ে থাকলেও গাজা যুদ্ধের কারণে এবার তেমনটি হবে না বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটিতে মুসলিমবিদ্বেষের মতো ইহুদিবিদ্বেষও সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশের মতো ইহুদি হলেও পেনসিলভানিয়ার মোট জনসংখ্যার ৩.৩ শতাংশ ইহুদি। ট্রাম্প এবং তার দলের কর্মীরা স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনবিরোধী হলেও কমলা ফিলিস্তিনিদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল। তা ছাড়া, রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে পেনসিলভানিয়াতে। যে ঘটনা পরিণত হয় অন্যতম নির্বাচনী ইস্যুতে। ১৯টি ইলেকটোরাল কলেজের এই রাজ্য সর্বশেষ দুই নির্বাচনেই নিয়েছে বিজয়ীর পক্ষ। এবারও বিজয়ী নির্ধারণে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এবিসি নিউজের জরিপে এখানে ১ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট-শচার স্কুল পরিচালিত জরিপে এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা।  

৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিয়ে গঠিত দক্ষিণ-পশ্চিমের রাজ্য নেভাদার গভর্নর একজন রিপাবলিকান। দুই সিনেটর আবার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির। ভোটারদের মধ্যে দুই দলের সমর্থক প্রায় সমান। সর্বশেষ নির্বাচনে ট্রাম্পকে মাত্র ৩৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন বাইডেন। ওয়াশিংটন পোস্ট-শচার স্কুল পরিচালিত জরিপে এখানে দুই প্রার্থীই সমান সমর্থন পেয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ আরেক ব্যাটল গ্রাউন্ড নর্থ ক্যারোলাইনা প্রথাগতভাবে রিপাবলিকানদের ঘাঁটি বলেই বিবেচিত। সর্বশেষ নির্বাচনেও এখানে জিতেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে গত কয়েকটি নির্বাচন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এখানে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে ব্যবধান কমছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির। তাছাড়া, এ রাজ্যে ২২ শতাংশ আফ্রিকান আমেরিকানের পাশাপাশি ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে হিস্পানিক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। তদুপরি, মোট ভোটারের ৫১ শতাংশই নারী। এসব ইকুয়েশনের কারণে এটি রূপ নিয়েছে সুইং স্টেটে। এ রাজ্যে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা বারবার পরাজিত হলেও এসব সমীকরণই এবার আশা দেখাচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের। যদিও মেরিস্ট কলেজের সর্বশেষ জরিপে এখানে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প।

অন্যদিকে, দোদুল্যমান রাজ্য জর্জিয়ায় আগস্টের শুরু থেকে বেশ কয়েকবার উভয় প্রার্থীর অবস্থান পরিবর্তন হলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। যদিও মেরিস্ট কলেজের সাম্প্রতিক এক জরিপে ট্রাম্প এবং কমলা উভয়ের জনসমর্থন দেখানো হয়েছে ৪৯ শতাংশ করে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখানে জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে মাত্র ১২ হাজার ভোটের সামান্য ব্যবধানে জিতেছিলেন জো বাইডেন।

জরিপের ফলাফল এবং বিভিন্ন ইকুয়েশনই বলে দিচ্ছে কতটা হাড্ডাহাড্ডি হতে যাচ্ছে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রার্থী হিসেবে কমলা একজন নারী ও কৃষ্ণকায়। এই সুবিধাটা ট্রাম্প নিতে চাইছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে মূলত শ্বেতাঙ্গদের ভোটেই নির্বাচিত হন ট্রাম্প। একজন অশে^তাঙ্গ নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেওয়াটা মার্কিন সমাজের রক্ষণশীল এবং খ্রিস্টীয় মৌলবাদী অংশটি- যাদের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে তারা পছন্দ করবে না। এই অংশটা ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকবে। ট্রাম্পও সেভাবেই ছক কষছেন। আর এ কারণেই ২০১৬ সালের নির্বাচনের মতো শে^তাঙ্গদের আবারও একবার একই ছাতার তলে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। তিনি আমেরিকা বলতে কলম্বাসের আবিষ্কৃত সেই আমেরিকাকেই বুঝিয়ে যাচ্ছেন, যা শে^তাঙ্গ আধিপত্যেরই নামান্তর। তবে কমলা ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। অভিজ্ঞতার কোনো কমতি তারও নেই। বিতর্কিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনায় নিশ্চিতভাবেই কিছু সুবিধা তিনি পাবেন।

অবশ্য বাস্তবতা হলো বিভক্তির সূত্রকে মার্কিন সমাজে এখন পর্যন্ত যথার্থভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছেন ট্রাম্প। আর সেই সূত্র প্রয়োগ করে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এতসব অভিযোগ নিয়ে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দ্বিতীয় মেয়াদে জিতে আসার কথা না। তবে ট্রাম্পকে ঘিরে জয়ের স্বপ্ন দেখছে রিপাবলিকানরা। এর বড় কারণ হচ্ছে, মার্কিনিরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো নারীকে দেখতে চান না এমন একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এর আগে সাবেক ফার্স্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করে বেশি ভোট পাওয়া সত্ত্বেও এই ট্রাম্পের কাছেই পরাজিত হয়েছিলেন প্রয়োজনীয় ইলেক্টোরাল ভোট না পাওয়ায়। তবে আমেরিকার নির্বাচন বলে কথা। কখন যে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা বলা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ট্রাম্পের প্রতি বিরাগকে কাজে লাগিয়ে কমলা হ্যারিস যদি জয়লাভ করে আসেন তাতেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। 
 

আরবি/জেআই

Link copied!