হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমিত হয়ে আছে আমাদের শ্রমবাজার। যদিও সরকারি নথিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের তালিকায় ১৬৮ দেশের নাম রয়েছে। বিদেশে পাঠানো মোট কর্মীর ৯৭ শতাংশ গেছেন মাত্র ১০টি দেশে। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশে পাঠানো কর্মীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, পাঁচ বছরে অন্তত একজন কর্মী পাঠানো হয়েছে, এমন দেশ যুক্ত করলেও কর্মী পাঠানো হয়েছে মোট ১৩৭ দেশে। বিদেশে কর্মী যাচ্ছে অনেক কম। ইউরোপের দেশগুলোয় কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না তেমন একটা। নতুন শ্রমবাজার তৈরির চেষ্টা নেই। তালিকায় থাকা দেশের মধ্যে ৩১টি দেশে কোনো কর্মী যায়নি গত পাঁচ বছরে।
মূলত মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশই বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান গন্তব্য। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান ও কাতার- এই চার দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে বেশি। এর বাইরে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর বড় কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। তবে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভালো সম্ভাবনা থাকলেও তা মুখে মুখে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগ নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে নিয়মিত কাজ করছে। যেসব দেশে কর্মী কম যায়, সেখানেও বাড়ানোর চেষ্টা আছে। তবে বেশি কর্মী পাঠানোর চেয়ে দক্ষ কর্মী পাঠানোর দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি। অনেক দেশ কম কর্মী পাঠিয়ে বেশি প্রবাসী আয় নিয়ে আসে। তাই দক্ষ কর্মীর শ্রমবাজার নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
গত দেড় দশকে ৯৭ দেশ থেকে বাড়িয়ে ১৬৮টি দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। নতুন সম্ভাবনাময় বাজার ধরতে না পারলে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে অভিবাসন খাত। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা মেটাতে পারলে প্রবাসী আয় বাড়বে। বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গত দুই বছর নতুন রেকর্ড হয়েছে। তবে এর মধ্যে কমেছে নারীর কর্মসংস্থান। প্রতি মাসে গড়ে লাখের বেশি কর্মী গেছেন বিভিন্ন দেশে। ২০২৩ সালে বিদেশে মোট কর্মী গেছেন ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে নারী কর্মী গেছেন ৭৭ হাজার ২৬৩ জন। এ ছাড়া গত বছর প্রতারিত হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন তিন হাজার নারী কর্মী।
অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সৌদিতে নারী কর্মী পাঠানোর আগে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক থাকলেও তা কোনো ক্ষেত্রে মানা হয় না। আবার প্রশিক্ষণের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রতিবছর অনেক নারী দেশে ফিরে নির্যাতন-নিপীড়নসহ নানা অভিযোগ করছেন। এ কারণে নারী কর্মী পাঠানো কমে গেছে বলে মনে করছেন তারা। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, দুই বছরের চুক্তিতে সৌদি গেলেও তা শেষ হওয়ার আগেই ফিরে আসছেন কেউ কেউ। অধিকাংশই পালিয়ে এসে সেফ হোমে আশ্রয় নেন। দূতাবাসের সেফ হোম থেকে তাদের সৌদি সরকারের সেফ হোমে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, এক বছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন নারী কর্মী বিদেশে যান ২০১৭ সালে। এর আগের বছর এটি ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮ জন। এর আগের বছরেও এক লাখের বেশি ছিল বিদেশে নারীর কর্মসংস্থান। বছরে এক লাখের বেশি কর্মী পাঠানোর এ ধারা অব্যাহত ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর এটি কমতে থাকে। পরের দুই বছর আবার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ২০২২ সালে এটি এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু গত বছর কমে গেছে। ১৯৯১ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে নারী কর্মী পাঠানো শুরু হয়। নির্যাতনের অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। নারী কর্মীদের সিংহভাগ যায় সৌদিতে গৃহকর্মী হিসেবে। কর্মী বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থতা, বাড়ির জন্য কাতর হওয়া, কম বেতন কিংবা বিনা বেতনে কাজ করা, খাদ্যাভ্যাস ও ভাষার সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ বাড়তে থাকে ব্যাপক হারে। নারী কর্মীদের নিয়ে দেশে একটা নেতিবাচক প্রচারও আছে। তাই নতুন কর্মীদের কারও কারও মধ্যে অনাগ্রহ দেখা যায়। আবার চাহিদা দেওয়ার পর দ্রুত কর্মী চায় সৌদির নিয়োগকর্তারা। নানা দীর্ঘসূত্রতার কারণে পাঠানো যাচ্ছে না। তাই তারা অন্য দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, দুই বছরের চুক্তিতে সৌদি গেলেও তা শেষ হওয়ার আগেই ফিরে আসছেন কেউ কেউ। অধিকাংশই পালিয়ে এসে সেফ হোমে আশ্রয় নেন। দূতাবাসের সেফ হোম থেকে তাদের সৌদি সরকারের সেফ হোমে পাঠানো হয়। সৌদি সরকারের অর্থায়নেই দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে সৌদিতে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যেই কেউ ফিরে আসতে চাইলে তাদের নিয়োগদাতা সৌদি কোম্পানির মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কাজের চাপ, আবহাওয়া, ভাষা ও স্থানীয় খাবারের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরেও কেউ কেউ পালিয়ে আসেন। তাই নতুন কর্মীদের কারও কারও মধ্যে অনাগ্রহ দেখা যায়। আবার চাহিদা দেওয়ার পর দ্রুত কর্মী চায় সৌদির নিয়োগকর্তারা। নানা দীর্ঘসূত্রতার কারণে পাঠানো যাচ্ছে না। তাই তারা অন্য দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে। দেশের অভিবাসী আইন সংশোধন হলেও নারীদের সুরক্ষার বিষয়টি তাতে আলাদা করে বলা হয়নি। বিদেশে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।
দেশে ফিরে আসা প্রবাসী নারীদের বিভিন্ন সহায়তা দিতে নিয়মিত কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি। তারা বলছে, সৌদিতে গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে মালিকের হাতে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরার ঘটনা কোনোভাবেই থামছে না। দেশে ফিরে নির্যাতন-নিপীড়নের নানা অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। যৌন নির্যাতনের শিকার কেউ কেউ ফিরছেন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে। কাজের নিরাপদ পরিবেশ না থাকায় সৌদি আরব থেকে প্রায় প্রতি মাসেই নারী গৃহকর্মীরা ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদেশ থেকে ফিরে আসা কর্মীদের কোনো হিসাব নেই সরকারি সংস্থার কাছে। তবে যারা পাসপোর্ট হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আউটপাস (ভ্রমণের বৈধ অনুমতিপত্র) নিয়ে ফেরেন, তাদের হিসাব রাখে ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক। বিমানবন্দরে কাজ করে এ ডেস্ক।
গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে খালি হাতে দেশে ফিরে এসেছেন ৮৬ হাজার ৬২১ কর্মী। এর মধ্যে নারী কর্মী আছেন ২ হাজার ৯০২ জন। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরেও ফিরেছেন ২৪৯ জন নারী। ভেবে আশ্চর্য হতে হয়, ৩২ বছর ধরে নারী গৃহশ্রমিকদের বিদেশে পাঠানো হলেও এ খাতে এখনো এমন দুরবস্থা! যে দেশের সরকারের চোখ কেবল অভিবাসীদের ডলারের দিকে, সে দেশে শ্রমিকস্বার্থ দেখা হবে না, সেটাই যেন স্বাভাবিক। দেশে অভিবাসী আইন সংশোধন হলেও নারীদের সুরক্ষার বিষয়টি আলাদাভাবে বলা হয়নি। বিদেশে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। তারা নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হন। ভীতি থেকে নারীরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাই বিদেশে কর্মী পাঠানো বাড়লেও নারী কর্মী পাঠানোর হার কম। সরকার কি আসলেই নারীদের অভিবাসনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে চায়? নারীরা গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সে সম্পর্কে সরকার খুব ভালোভাবে জানে। কিন্তু সমাধানের কোনো ইচ্ছা বা উদ্যোগ সরকারের আছে বলে মনে হয় না। নারী অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানোয় যে চুক্তি হচ্ছে, সেই চুক্তি কি শ্রমিকস্বার্থের বিবেচনায় করা হচ্ছে? প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না- এই অভিযোগ আছে। সরকার কি এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নিয়েছে? যে প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের পাঠাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে কি যথেষ্ট খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে? নারী শ্রমিকেরা খালি হাতে, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসার পর অভিযুক্ত জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে।
সৌদিফেরত নারীদের অনেকেই বলেছেন, বিদেশে পাঠানোর আগে তাদের যে মাসখানেকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেটি যথেষ্ট নয়। তাদের আরও দীর্ঘ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কেউ কেউ লেখাপড়া জানেন না। অনেকে আছেন স্বাক্ষরও করতে পারেন না; শুধু টিপসই দিতে পারেন। যে দেশে কাজ করতে যান, সে দেশের ভাষাও তাদের অপরিচিত। প্রায় অদক্ষ এবং প্রায় অশিক্ষিত এই নারীদের জন্য বিদেশবিভুঁইয়ে কাজ করতে যাওয়াটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমরা নারীদের অভিবাসনের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জীবনের নিরাপত্তা, মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে আগে। যদি আমাদের উদ্দেশ্যই হয় নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থান, তাহলে সর্বোচ্চ পেশাদারির সঙ্গে কাজ করা জরুরি। ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এমনকি পাশের দেশ ভারতও সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় অঞ্চল- হংকং, সিঙ্গাপুরে নারী অভিবাসীদের গৃহশ্রমিক হিসেবে পাঠাচ্ছে। তারা আমাদের নারীদের মতো এত নির্যাতনের শিকার হন না। কারণ রাষ্ট্র, সরকার তাদের পাশে শক্তভাবে দাঁড়ায়। তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দুই-ই আমাদের নারীদের চেয়ে গড়ে বেশি। সরকার অভিবাসনের গতিপ্রকৃতি বিবেচনা করে বাজারগুলো চিহ্নিত করতে পারে। যেমন, বিশ্বজুড়ে বৃদ্ধদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সেবা প্রদানকারীর চাহিদা বেড়েছে। সেই বাজারটা ধরার চেষ্টা কি সরকার করছে? কোনো চিন্তাভাবনাও কি আছে? আমরা আশা করি, সরকার রেমিট্যান্স হিসেবে পাওয়া ডলার গোনার পাশাপাশি নারী অভিবাসীদের মর্যাদা রক্ষায় মনোযোগী হবে।
বিদেশে লোক যাওয়া বা পাঠানো এবং তাদের দেখভালের কাজটিতে আমাদের সরকার বেশ পিছিয়ে। পৃথিবীর বহু দেশে কর্মীর চাহিদা আছে, আমরা সেই বাজার ধরতে ব্যর্থ। ওরা ডলার পাঠায়, সেটা পেতে গিয়ে ঢেকুর তুলি। কিন্তু কারোর ডেডবডি আনার সময়ে বলি, বৈধভাবে যায়নি। ওদের যেতে-আসতে হয়রানি, পাসপোর্ট পেতে হয়রানি, বিদেশের মিশনে বাঙালি কর্তাদের আচরণ; কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। মিশনগুলোয় পররাষ্ট্র ক্যাডারের হুজুররা আভিজাত্য নিয়ে থাকে। এখন মূলত প্রশাসন থেকে পাসপোর্ট, লেবার, কমার্স উইনিংয়ে যারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশ হয় ঘুষে অভ্যস্থ, নয় খারাপ ব্যবহার করে। কয়েকটা দেশের মিশন-সার্ভিস নিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন ১১ লাখ ৭০ হাজার নারী কর্মী। বেশির ভাগ নারী যান গৃহকর্মী হিসেবে। সেখানে গিয়ে অতিরিক্ত কাজের চাপ, শারীরিক-মানসিক নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে কেউ কেউ ফিরে আসেন। তবু প্রতিবছর কর্মীরা যাচ্ছেন। অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব থেকে ভাগ্য ফেরানোর আশায় বাধ্য হয়েই বিদেশে যান ৭৩ শতাংশ নারী কর্মী। গৃহকর্মী, কেয়ারগিভার, স্বাস্থ্যসেবিকা, তৈরি পোশাক খাত ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতে বিদেশে যান নারীরা। তাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ গেছেন সৌদি আরবে। এ দেশে নারীরা মূলত গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যান। যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ নারী গৃহকর্মীর কাজ ছেড়ে পালিয়েছেন। যেসব নারী কর্মী দেশে ফিরে আসেন, তাদের ৩৭ শতাংশের বেশি বেতন বকেয়া রেখেই ফিরে আসেন। আর ৪৭ শতাংশের কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকে না। নারী অভিবাসীর অধিকার সংরক্ষণে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩ (সংশোধিত ২০২৩) মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, নারী কর্মীদের যৌন নির্যাতনসংক্রান্ত কোনো বিষয় তাতে আলাদা করে রাখা হয়নি। দেশেও গৃহকর্মীরা নির্যাতিত হন। বিদেশে তো যোগাযোগের অদক্ষতাও থাকে। তাই প্রশিক্ষণে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশে পাঠানোর একটা প্রবণতা আছে রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে। এ ছাড়া দক্ষ নারী কর্মী তৈরি করতে হবে। সৌদি আরব নিলেও আর কোনো দেশ গৃহকর্মী খাতে দক্ষ কর্মী ছাড়া নিতে চায় না।
স্ট্রেংদেনড অ্যান্ড ইনফরমেটিভ মাইগ্রেশন সিস্টেমস নামের প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সাল থেকে অভিবাসীদের অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৯৭টি অভিযোগ পড়েছে। এর মধ্যে ৯০টি অভিযোগ করেছেন নারী কর্মী, যার ১২টি অভিযোগ যৌনসহ শারীরিক নির্যাতনের। ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সহিংসতাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে মারা গেছেন ৭০৫ জন নারী কর্মী। এই প্রেক্ষাপটে ব্যাপক সচেতনতা বাড়ানো ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে নারীরা নানা খাতে কাজ করেন। নির্মাণ অবকাঠামো খাতেও কাজ করেন তারা। অথচ বিদেশে দাসত্ব এবং অমানবিক জায়গায় কাজ করতে যাচ্ছেন নারী কর্মীরা। একজন নারী কর্মীও বিদেশে গিয়ে কেন প্রতারিত বা নির্যাতিত হবেন? এটি প্রতিরোধে গন্তব্য দেশে কেন জোর দেওয়া যাচ্ছে না, কেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমঝোতা করতে পারছে না? এগুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার। আবার দেশে ফিরে আসার পরও তাদের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব দেশে নারী কর্মীরা যাচ্ছেন, সেসব দেশের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। সেখানকার আইনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য ওই সব দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা দরকার।
আপনার মতামত লিখুন :