ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

এমপক্সে কেন জরুরি অবস্থা জারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৪, ০৯:১২ পিএম

এমপক্সে কেন জরুরি অবস্থা জারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এমপক্স। এমপক্স রোগের জন্য দায়ী মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। এটি স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের জন্য দায়ী ভাইরাসের একই শ্রেণিভুক্ত। তবে তা গুটিবসন্তের ভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই কম ক্ষতিকর। তবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্সের একটি অতিসংক্রামক নতুন ধরন। এ নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এবার মূলত ক্ল্যাড-১ এমপক্সের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এটি মারাত্মক। এর আগেরবার ক্ল্যাড-১ এমপক্সে আক্রান্তদের ১০ শতাংশ পর্যন্ত মারা গিয়েছিল। অর্থাৎ, এতে মৃত্যুর হার দ্বিগুণেরও বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে ভাইরাসটিতে পরিবর্তন আসে। মিউটেশনের ফলে ক্ল্যাড-১বি নামের একটি নতুন ধরন সৃষ্টি হয়। এটি অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নতুন এই ধরনটিকে এক বিজ্ঞানী ‘এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে ডিআর কঙ্গোতে ১৩ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি এমপক্সে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৪৫০ জন মারা গেছে। সেখান থেকে রোগটি বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া ও রুয়ান্ডাসহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে এমপক্সের হালকা ধরন ক্ল্যাড-২ ইউরোপ ও এশিয়াসহ প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেবারই প্রথম ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সে সময় ৮৭ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। এতে মৃত্যু হয়েছিল ১৪০ জনের।

মাঙ্কিপক্স ভাইরাস প্রথম পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। কিন্তু বর্তমানে মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমণ ঘটছে। রোগটি ফ্লুর মতো উপসর্গ। ত্বকের ক্ষত সৃষ্টি করে। যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এই রোগে মৃত্যুহার ৪ শতাংশ, অর্থাৎ আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের বা যারা সংক্রামিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছেন তাদের ভ্যাকসিন নিতে হবে। এমপক্সের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে ক্ল্যাড-১ ও ক্ল্যাড-২।  চলতি বছরের শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত এমপক্সে ১৪ হাজার ৫০০-এর বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন অন্তত ৪৫০ জন। ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় সংক্রমণের এ হার ১৬০ শতাংশ বেশি এবং মৃত্যুর হার বেশি ১৯ শতাংশ। আফ্রিকার বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় এ ভাইরাসের বেশি প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো)। এমপক্সে এ অঞ্চলে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান কয়েকশ। বিশেষ করে ১৫ বছরের নিচের বয়সী শিশু-কিশোররা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। এর আগে ২০২২ সালে এমপক্স নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য সংস্থা। ক্ল্যাড-২ ধরনের তুলনামূলক মৃদু সংক্রমণে জারি করা হয়েছিল এ জরুরি অবস্থা। তবে এখন আরও বেশি প্রাণঘাতী ক্ল্যাড-১ এর সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। আগে এ ধরনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এখন মৃত্যুহারও বাড়ছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে এমপক্সের মৃদু ক্ল্যাড-২ ধরন প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে ছিল এশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশও। ঝুঁঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় ওই সংক্রমণ। গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে এমপক্সের ভাইরাসের রূপবদল হয়। এই রূপবদলে তৈরি হওয়া নতুন ধরনের নাম ক্ল্যাড-১বি। তখন থেকেই এটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এটিকে একজন বিজ্ঞানী ‘এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এমপক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ। যৌন মিলন, ত্বকের সংস্পর্শ এবং খুব কাছে এসে কথা বলা বা শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায়। সংক্রমণের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে। বহুগামী কিংবা নতুন যৌনসঙ্গীরা সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। অবশ্য সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে যাওয়া যে কেউ সংক্রমিত হতে পারেন এ ভাইরাসে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কমিউনিটির মধ্যে এ রোগ দেখা দিলে নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ সেরে না ওঠা পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিকে সঙ্গনিরোধ অবস্থায় থাকতে হবে। এমপক্সের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার সেরা উপায় টিকা গ্রহণ। এর টিকা রয়েছে। কিন্তু সাধারণত তাঁরাই শুধু এটি নিতে পারেন, যাঁরা সংক্রমণের ঝুঁঁকিতে বা রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে রয়েছেন। সম্প্রতি ডব্লিউএইচও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জরুরি ব্যবহারের জন্য এ টিকার সরবরাহ বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানিয়েছে; এমনকি ওইসব দেশেও, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ টিকার অনুমোদন দেয়নি। 

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মাঙ্কিপক্স এখন মধ্য এবং পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগের একটি নতুন রূপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এর উচ্চ মৃত্যুর হার নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস বলেছেন, আফ্রিকা এবং তার বাইরে আরও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 

সম্পাদক, রূপালী বাংলাদেশ
 

আরবি/জেডআর

Link copied!