ঢাকা শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

তারুণ্যই শক্তি-সমৃদ্ধির সোপান

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ১১:৫৭ এএম

তারুণ্যই শক্তি-সমৃদ্ধির সোপান

ছবি: রুপালী বাংলাদেশ

আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আমাদের যুব সমাজ কালবিলম্ব না করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ ছিল ছাত্র, কেউ কৃষক, কেউ বা শ্রমিক। আর এই মুক্তিযোদ্ধাদের ৯৫ শতাংশের বেশিই ছিল তরুণ। অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া নিয়মিত সেনা-নৌ, বিমান-ইপিআর, পুলিশ-আনসার প্রভৃতি বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের মধ্যেও অনেক যুবক ছিলেন। বাংলা মায়ের সেই অকুতোভয় যুবকরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নিতে একটুও ভয় পাননি। মূলত আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ বাংলাদেশের যুবকদের শক্তি এবং উৎসর্গেরই প্রমাণ।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই তরুণ। দেশের বর্তমান লোকসংখ্যার হিসাবে সাড়ে চার কোটির বেশি তরুণ রয়েছে। আমাদের প্রতিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে তরুণদের ভোট ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উপজেলা পর্যায়ে ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেডে যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ‘কর্মঠ প্রকল্প’ ও ‘সুদক্ষ প্রকল্প’ নামে দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়ার উল্লেখও পাওয়া যায়। গবেষণার জন্য বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হবে। ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’ প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় ঋণ ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা তরুণ সমাজকে উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করবে। যুব সমাজকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে দূরে রাখতে প্রয়োজনীয় পরামর্শদান এবং মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকশিত হওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের কাজে তরুণদেরও সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই।

তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের কর্ম-উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তবে আমাদের দেশে সে ধরনের পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এটা সত্য যে, বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার একটি প্রশংসনীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, যদিও এ অর্জন দেশের বেকারত্বের হার তেমন হ্রাস করতে পারেনি। এর মূল কারণ হলো, দেশের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এমন একটি জাতীয় পরিকল্পনা থাকা উচিত, যাতে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে কাজ খুঁজে পায়। কর্মধর্মী শিক্ষা পরিকল্পনা তরুণদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং কর্মের ব্যবস্থা করতে সহায়ক হবে।

প্রশিক্ষণ বা দক্ষতার জন্য তরুণ সমাজকে উচ্চশিক্ষিত, মধ্যম শিক্ষিত এবং কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত গ্রুপে বিভক্ত করে তৈরি করা উচিত। উচ্চশিক্ষিতদের দলটি ছোট হবে এবং তারা নিজেদের পছন্দমতো কর্ম খুঁজে নিতে পারে। মেধাবী তরুণরা গবেষণা-সুবিধা পেলে দেশের পাশাপাশি বিশ^ সম্প্রদায়ের জন্যও অবদান রাখতে সক্ষম হবে। তবে অন্যান্য গ্রুপের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিভিন্ন খাত অনুযায়ী বিন্যস্ত করা যায়, যেমন ক. কৃষি বা শিল্প খ. সেবা গ. উদ্যোক্তা ঘ. বিদেশে চাকরি এবং ঙ. রাজনৈতিক ও সামাজিক। প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত এবং বিদ্যমান কাঠামোতে তা করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।

বেকারত্ব হ্রাস করতে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন। আমরা জানি, তিনটি উপায়ে আমাদের যুবকদের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে, যেমন ক. সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মসংস্থান খ. আত্মকর্মসংস্থান এবং গ. বিদেশে কর্মসংস্থান। যদি এই ক্ষেত্রগুলো সম্প্রসারিত না করা যায়, তাহলে কীভাবে আমরা বেকারত্বের হার হ্রাসের আশা করতে পারি?

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমেই শুধু এই সংকট নিরসন সম্ভব। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা। একইভাবে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

প্রশিক্ষণের পর উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী তরুণদের জন্য ব্যাংকঋণ, আর্থিক সহায়তা এবং প্রশাসনিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। এমনকি উদ্যোক্তা হওয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া যেন প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে থাকতেই শুরু করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এসব তরুণ উদ্যোক্তাকে আর্থিক ছাড় প্রদান তাদের ভবিষ্যৎ ব্যবসার ভিত্তিকে দৃঢ় করবে। আর প্রশিক্ষিত তরুণদের ছোট আকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়।

আমরা জানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা হোক বা যে কোনো চাকরির জন্য ইন্টারভিউ হোক, একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি দিতে হয়। এ ধরনের ফি আদায়ের পেছনে কী যুক্তি রয়েছে, জানি না। কারণ, ওই সব পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রয়োজনে বা স্বার্থেই করা হয়ে থাকে (যেমন পরীক্ষার্থী বা চাকরিপ্রার্থীর গুণগত মান যাচাই বা আসন অথবা পদের চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে)। তবে প্রত্যেক প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। এই ব্যয় অনেক গরিব পিতা-মাতার জন্যও বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সরকার এ ধরনের ফি নেওয়া থেকে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে বিরত রাখতে পারলে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে সবার কাছে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে গৃহীত হবে।

আমাদের তরুণ সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবশ্যই রক্ষা করবে। আমরা তাদের দেশপ্রেমিক, নিবেদিত, কঠোর পরিশ্রমী, উদ্ভাবনী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেখতে চাই। তারা ভবিষ্যতে যেন বাংলাদেশকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে, সরকারকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ১৯৭১ সালে এই দেশ আমাদের তরুণদের রক্তে সিক্ত হয়েই জন্ম নিয়েছিল এবং সেই চেতনার সঙ্গে কোনো আপস নেই।

অনেক কারণেই তরুণরা আমাদের দেশের জন্য এক অসীম শক্তি। সেই শক্তি দেশের উন্নয়নের জন্য, সঠিক পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। সর্বোপরি তারাই বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। আমাদের তরুণদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একদিন উন্নত বিশে^র কাতারে স্থান করে নেবে।

 

 

আরবি/জেআই

Link copied!