ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

একটি হারিয়ে যাওয়া নিরব নক্ষত্রের গল্প

রূপালী বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ০৪:৫০ এএম

একটি হারিয়ে যাওয়া নিরব নক্ষত্রের গল্প

এড.শামিনা মালবিকা মান্নান। একজন বিশিষ্ট আইনজীবী। ঢাকায় আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর ডাক নাম ইমা। দেশে-বিদেশে বাঙ্গালিদের নিকট তিনি ইমা নামেই বেশ পরিচিত। তাঁর আদি বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। স্কুল, কলেজের লেখা পড়া করেছেন ঢাকায়। ছিলেন বরাবরেই মেধাবি। তিনি বুঝদার স্বভাবের শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি ১৯৮৫ সালে কিয়েভ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে পড়তে যান। তিনি ১৯৯১ সালে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার আগে আগেই লেখা পড়া শেষ করে দেশে ফেরেন। ১৯৮৫-১৯৯১ কিয়েভে ছিল তাঁর শিক্ষাকাল। ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অ’জন করেন। তিনি থাকতেন লামানোসভ সড়কে বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট সিটিতে । এখানে কেটেছে ৬টি বছর। ছিল ৩৮ নম্বর বাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া-আসা, লাইব্রেরীতে ও স্টাডি হল রুমে লেখা পড়া নিয়মিত করার স্মৃতি এখনো ঝাপসা হয়ে আসছে না, সব মনে পড়ে । স্থানীয় গাস্ত্রানোমে (ডিপার্মেন্টাল স্টোর) খরচ করা। বিশেষ বিশেষ ছুটিতে সবাই মিলে ভিস্তাভকাতে (প্রদশর্নীতে) আপেল, নাসপাতি বাগান ঘুড়ে বেড়ানো, ইচ্ছামত খেয়ে নেওয়ার স্মৃতি। মাঝে মধ্যে বাঙ্গালি অনুষ্ঠানে সবাই মিলে এক হওয়া, রান্না করে খাওয়া এবং কোন কোন বিশেষ রান্না নিয়ে যাওয়া নিত্য ব্যাপার হলেও, হৃদয় কাড়ে সেই দিনগুলোর ভাবনার কথায়। শীত, গ্রীষ্ম কোন কালের কথা্ই আসলে হারিয়ে যায় না, স্মৃতিপটে রয়ে যায়। এভাবেই এড. শামিনা মালবিকা মান্নানের জীবন অন্যদের মতও কষ্ট ও আনন্দের মধ্য দিয়ে প্রবাস জীবনে বিস্তর সময় কেটেছে। তবেই তো সনদ বা ডিগ্রি মিলেছে, বেড়েছে জীবন অভিজ্ঞতা। তাঁর পরম বন্ধু হিসেবে দেশে ছাত্র জীবনে ছিলেন মন্ত্রী এড.তারানা হালিম, আর কিয়েভ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এড. সেলিনা আক্তার লিনা (এখন প্রবাসী)। এছাড়াও, আছে দুনিয়া ব্যাপি তাঁর অসংখ্য ভাল বন্ধু ও শুভাকাঙ্খী। এড.শামিনা মালবিকা মান্নান অকালে ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ মারা গেলেন। শেষের দিকে তিনি নানান রোগে ভুগছিলেন। ডায়াবেটিস, ফুসফুসে পানি জমা, নিউমোনিয়া, কিডনী ও রক্তে সংক্রমণ বা ইনফেকশন আর পরিশেষে হৃদরোগেও আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে ছোট ভাই আলেন্দে জানান। এই নানা অসুবিধা নিয়ে প্রায় গত তিন মাস তিনি মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে হেরেই গেলেন বেঁচে থাকার যুদ্ধে। দুই দফা তিনি হাসপাতালে থাকলেন। শেষের ক' দিন তিনি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টেও ছিলেন। যখন তাঁর সব অর্গান অচল হয়ে যাচ্ছিল, তখন আর আশা করার মত কিছু ছিল না। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ১৭.০৯,২০১৮ সকাল ১০টায় পারিবারিক সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন। বিকাল ৫:১৫ মি: এ বড় মগবাজারের বাসার নিচে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, পাশেই মসজিদ- কিন্তু সেখানে নেওয়া হয়নি, মরহুমাকে বাসায় রাখা হয়েছিল জানাজা অবদি। অতপর বনানীর পথে রওয়ানা। ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. জহির ফোন করে শেষ সময়ে আসতে চাইলে বলা হলো, বনানীর কবরস্থানের দিকে চলে যাওয়াই ভাল। সে মোতাবেক ড. জহির সরাসরি সেই গন্তব্যে চলে আসে। আমরা পৌছে যাই বনানী কবরস্থানে প্রায় সন্ধ্যা ৬:১০ মি: এর দিকে, কাঁধে করে লোহার এক বিশাল খাটলীতে এড.মালবিকার অনেকটা হেভি ওয়েট লাশ নিয়ে চলতে যেন কারো কারো কাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছিল সে প্রান্ত পযর্ন্ত নিতে (হাটার পথটা একটু দূর), কারণ কবরস্থানের পাশে চিপা রাস্তায় সহজে বড় গাড়ি সহজে ঢোকানো যায় না। পরিশেষে সন্ধ্যা ৬:২০ মি: এ বনানীর কমলা রঙ্গের মাটির ঘরে শুয়ে গেলেন বিশাল দেহের এই মানুষটি। কবরে নেমেছিলেন আলেন্দে, গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপুস্কনিক আলী (ইনার ছেলে) এবং অন্য আর একজন নামটি জানা হয়নি। এখানে কবরের আশ পাশে জানামতে হাত ধোয়ার পানির ব্যবস্থা ছিল না। হাত না ধুইয়েই মাটি দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে ঈমাম সাহেব মোনাজাত করলেন বেশ খানিকটা সময় নিয়ে।

Link copied!