উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার হৃষিকেশ দাশ রোডের ঝুলনবাড়িতে জন্ম তাঁর।
৫১ বছরের জীবনের ২৫ বছরই চলচ্চিত্র নিয়ে কাটিয়েছেন ঋত্বিক ঘটক। এই সময়ে ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ১০টির মতো তথ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য বানিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ভান্ডার যাঁদের হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে, ঋত্বিক ঘটক তাঁদের মধ্যে একজন। তিনি ছিলেন যুগসচেতন চলচ্চিত্রকার, গল্পকার, নাট্যকার ও অভিনেতা। দৃশ্যশিল্পের প্রায় সব রূপেই তিনি ছিলেন এক মহামানব। ঋত্বিক ছিলেন আগাগোড়া চলচ্চিত্রপাগল মানুষ। তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। সব সময়ই চেয়েছেন কীভাবে নিজের বক্তব্যকে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। কখনো খ্যাতি, পুরস্কার কিংবা জনপ্রিয় ঘরানার সঙ্গে আপস করেননি।
ঋত্বিক ঘটক নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘নাগরিক’ (১৯৫২), ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮), ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৯), ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০), ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১), ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২), ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩) এবং ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ (১৯৭৪)।
তাঁর তৈরি প্রথম চলচ্চিত্র ‘নাগরিক’ ভারতীয় ইতিহাসে অন্যতম প্রধান একটি চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। ঋত্বিকের চলচ্চিত্রে মঞ্চ, সাহিত্য ও প্রামাণ্যচিত্রের সংমিশ্রণ প্রবাদতুল্য।
ঋত্বিকের প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র ‘অযান্ত্রিক’-এ ছিল হাস্য-রসের সঙ্গে সায়েন্স ফিকশনের মেলবন্ধন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এটি এমন এক অভিনব সিনেমা, যেখানে গল্প তৈরি হয়েছে একটি গাড়িকে কেন্দ্র করে।
১৯৬৬ সালে ঋত্বিক ঘটক কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায়। ১৯৭০-এর দশকে আবার ফিরে আসেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। সে সময় বাংলাদেশি প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান অর্থ লগ্নি করেন ঋত্বিকের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এ। তাঁর শেষ চলচ্চিত্র ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ অনেকটা নিজেরই আত্মজীবনী।
অনেক স্বল্প ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অসমাপ্ত রেখে ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মারা যান ঋত্বিক ঘটক।
আপনার মতামত লিখুন :