ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অধ্যাপক থেকে সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস

সানজিদা আফরিন সোনিয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৪, ০৭:৫১ পিএম

অধ্যাপক থেকে সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা ছোট্ট ইউনুস এখন বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বে সমান সম্মানিত ও সমাদ্রিত। ছিলেন শিক্ষকতা পেশায়। সেখান থেকে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা। পরে ওই ব্যাংককে সাথে নিয়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেই থেকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বেও সুনাম কুড়িয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজ দেশেই ছিলেন কোণঠাসা। কর্তৃত্ব হারিয়েছিলেন নিজেরই প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের। নোবেল পুরস্কার অর্জনের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রম করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বেশ আলোচনায় ছিল। ২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন। ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার পেছনে অধ্যাপক ইউনূসকে একজন মাস্টারমাইন্ড মনে করতেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাংকের কর্তৃত্ব হারানোসহ বিভিন্ন মামলায় আদালতে বারবার হাজিরা দিতে হয়েছে অধ্যাপক ইউনূসকে। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায়ও ছিলেন তিনি। গত মার্চে এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সে সময় রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ ভুল ছিল। যে ভুলের খেসারত তাকে দিতে হচ্ছে এখনো।

জন্ম হতে বেড়ে ওঠা
১৯৪০ সালের ২৮শে জুন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় মুহাম্মদ ইউনূস মেধা তালিকায় ১৬তম স্থান অধিকার করেন এবং চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই বিএ এবং এমএ পাশ করেন। পড়াশোনা শেষে তিনি ব্যুরো অব ইকোনমিক্স-এ যোগ দেন গবেষণা সহকারী হিসাবে। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। পরে ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন। এই সময়ের মধ্যেই ১৯৭৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষুদ্রঋণের ধারণার মাধ্যমে সারাবিশ্বে একটি সাড়া ফেলে গ্রামীণ ব্যাংক।

জোবরা গ্রাম থেকে নোবেল জয়
চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামের সেই নবযুগ খামার থেকে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার থেকে শুরু হয় গ্রামীণ ব্যাংকের। যেখান থেকে ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এর কার্যক্রম।অধ্যাপক ইউনূস সেই জোবরা গ্রামের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে জানাচ্ছিলেন সে সময়কার কথা। সেসময় তখন এই জোবরা গ্রামে বাস করতো হত দরিদ্র অনেক মানুষ। কিন্তু তিনি অর্থনীতির শিক্ষক হয়েও সে সব মানুষের জন্য কিছু করতে না পারার আক্ষেপ ছিল তার। আলোচিত সেই জোবরা গ্রামটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক পাশে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষে প্রতিদিনই জোবরা গ্রামে যাওয়া শুরু করলেন অধ্যাপক ইউনূস। কৃষকদের সাথে কথা বলতেন, তাদের চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করতেন। তখন কৃষিকাজের জন্য কোন পানির ব্যবস্থা ছিল না এই গ্রামে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, “তখন বাংলাদেশে প্রথম আসত ইরি ধানের চাষ। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে জমিতে ইরি ধানের চাষ করার জন্য উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু তখন সেখানকার বাসিন্দারা বললেন সেখানে পানির সমস্যা। পরে টিউবয়েল বসিয়ে ইরি ধানের চাষ শুরু করেন ড. ইউনুস”। তেভাগা পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা শুরু করেন কৃষকদের নিয়ে। এখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সেই সামাজিক ব্যবসা ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। যে সামাজিক ব্যবসা শুরু হয়েছিল সেই জোবরা গ্রাম থেকে। যে কাজ জোর করে কাউকে করতে হয়নি। সরকারের হুকুম দিয়ে দিতে হয়নি। মানুষ সেটা পছন্দ করে আনন্দিত হয়ে করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন মানুষ এখন এই ধরনের সামাজিক ব্যবসায় নেমেছে”।

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গ্রামীণ ব্যাংক
দেশের বাইরে পড়াশোনা শেষে অধ্যাপক ইউনূস প্রথমে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। নতুন বিভাগ হওয়াতে তখন বিভাগে তেমন বেশি কোন কাজ ছিল না। বিভাগে ঘোচানোর পাশাপাশি তিনি আশপাশের গ্রামে ঘুরতেন। সেখানকার মানুষের জন্য কিছু করতে চাইতেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ‘রুরাল ইকনোমিকস প্রোগ্রামের’ প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস তখন জোবরা এবং সংলগ্ন গ্রামগুলোতে শুরু করেছিলেন একটি মাঠ গবেষণা, যেখানে তিনি যাচাই করতে চেয়েছিলেন সমাজের একেবারে নিচুতলার মানুষের মধ্যে ব্যাংকঋণ সরবরাহের সম্ভাব্যতা। সেখানে শুরুতে তেভাগা পদ্ধতি কৃষকদের খামার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমের কার্যক্রম শুরু করেন অধ্যাপক ইউনূস। যার নাম ছিল নবযুগ তেভাগা খামার।

সে সময় অধ্যাপক ইউনূস চেয়েছিলেন, “জমি যার সে ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ পাবে। আর যে বীজ দেবে সার দেবে সে পাবে এক ভাগ। আর চাষ করবে, পানি দেবে সে পাবে এক ভাগ। এরকম করেই তখন যত্রা শুরু করেছিলেন। পরে গ্রামের অবহেলিত নারী ও পুরুষদের নিয়ে একটা সমিতি শুরু করেন। সেই সমিতিতে সঞ্চয় করতো সবাই। এই কৃষকদের খামার থেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের ভিত্তি রচিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। পরবর্তীতে ‍‍`ক্ষুদ্রঋণ‍‍` নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারনা নিয়ে বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালের ২রা অক্টোবর একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবে আনুষ্ঠানিক জন্ম হয় গ্রামীণ ব্যাংকের। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ভূমিহীন এবং দরিদ্র নারীদের পাঁচ জনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গঠনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে এবং এ ঋণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে। ব্যাংকের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে দরিদ্রদের রক্ষা করতে ব্যাংক অন্যান্য পদ্ধতিও প্রয়োগ করে। ক্ষুদ্রঋণের সাথে যোগ হয় গৃহঋণ, মৎস্য খামার এবং সেচ ঋণ প্রকল্প সহ অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা। গরিবের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য উন্নত বিশ্ব এমন কি যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশসমূহকে গ্রামীণের এই মডেল ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হয়।

অধ্যাপক ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের এই কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করলে ২০০৬ সালে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন অধ্যাপক ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অধ্যাপক ইউনূসের সাথে বৈরিতা তৈরি হয় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সাথে। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অধ্যাপক ইউনূসকে ‘রক্তচোষা’ ও ‘সুদখোর’ বলতে দেখা গেছে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের। এ নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন “যখন আমরা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ শুরু করেছি তখন লোকে বলতো আমরা রক্তচোষা। এখন তো এই ব্যবসা সবাই করছে। সরকারও করছে। সরকার নিয়ম নীতি করে দিচ্ছে। এখন কে কার রক্ত চুষছে?”

ওয়ান-ইলেভেনে অধ্যাপক ইউনূস
২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সমর্থনে এবং ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। তখন সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল মইন ইউ আহমেদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ফখরুদ্দীন আহমেদ এবং সেনাপ্রধান উভয়ে মিলে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নামে একটি তত্ত্ব বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। যেখানে ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেত্রীদ্বয়কে নির্বাসিত বা বন্দী রেখে নতুন একটি সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। সেই সময় অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে একটি দল গঠনের আলোচনাও ছিল জোরালো। সে সময়কার সেনাবাহিনী তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবার দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। তবে তিনি তা নাকচ করে দিয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক শক্তি নামে একটি দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সেই প্রক্রিয়া থেকেও সরে এসেছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। গত মার্চে বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বিরকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল গঠনের এই উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। ২০০৬ সালে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলেন তখন একই সাথে গ্রামীণ ব্যাংকও পেয়েছিল নোবেল পুরস্কার। অধ্যাপক ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল পুরস্কার অর্জন করায় সে সময় বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ সবার আগেই শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। তবে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে থাকে দলটি এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার প্রথমটা শুরু হয় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়ার মধ্য দিয়ে।

২০১১ সালের দোসরা মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে অব্যাহতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ জারি করে। এর বিরুদ্ধে ড: ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের নয়জন পরিচালক দু’টি রিট মামলা করেছিলেন। দু’টি রিট আবেদনই খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট ডঃ ইউনূসকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশ বহাল রাখে। পরে ওই বছরের ১২ই মে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা দেন অধ্যাপক ইউনূস। ক্ষমতায় আসার পরই পদ্মাসেতু তৈরিতে প্রকল্প প্রস্তুত করে বাংলাদেশ। সে সময় অর্থায়নে রাজিও হয় বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু মাঝপথে সেই অর্থায়ন আটকে যায় দুর্নীতির অভিযোগে। এরপর বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ তোলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রভাবিত করার কারণেই আটকে গিয়েছিলো পদ্মাসেতুর অর্থায়ন। তবে ডঃ ইউনুস এ বিষয়ে সমর্থন করেননি। এই সময় অধ্যাপক ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কয়েকটি মামলায় খালাস দেয়া হয়েছে তাকে।

আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ ও শপথ পাঠ করবেন  নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আরবি/জেডআর

Link copied!