বাংলা সাহিত্যের বিস্ময় তিনি। যতটা সাহিত্যমনস্ক, ততটাই সমাজ ও বিজ্ঞানমনস্ক। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের কৃতী ছাত্র ছিলেন। সাহিত্য জগতে করেছিলেন বাবার পথ অনুসরণ। তাঁর প্রতিটি বই আজও পাঠকমহলে সমাদৃত। তবে একটি বইও তিনি নিজে দেখে যেতে পারেননি। প্রথম বই `আবোল তাবোল` প্রকাশের আগেই চলে যান না ফেরার দেশে। বলছিলাম, বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে ‘ননসেন্স ছড়া’র প্রবর্তক সুকুমার রায়ের কথা। আজ ৩০ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন।
১৮৮৭ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুকুমার রায়। তাঁর আদিনিবাস ছিল ময়মনসিংহ জেলার মসুয়ায়। বাবার নাম উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। ১৯১১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নে অনার্সসহ বিএসসি পাস করেন তিনি।
ফটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গুরুপ্রসন্ন ঘোষ স্কলারশিপ’ নিয়ে বিলেতে যান। সেখানে তিনি প্রথমে লন্ডন এবং পরে ম্যানচেস্টারে স্কুল অব টেকনোলজিতে লেখাপড়া করেন। প্রবাসে থাকা অবস্থায় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখিত প্রবন্ধ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১৩ সালে দেশে ফিরে তিনি বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইউ রায় অ্যান্ড সন্সে যোগ দেন।
তিনি একাধিক গুণের অধিকারী ছিলেন। মুখে মুখে ছড়া রচনা ও ছবি আঁকার সঙ্গে ফটোগ্রাফির চর্চা এবং কলেজজীবনে তিনি ছোটদের হাসির নাটক রচনা ও অভিনয় করতেন। তিনি শান্তিনিকেতনে একবার রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে ‘গোড়ায় গলদ’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি পিতৃপ্রতিষ্ঠিত ‘সন্দেশ’ পত্রিকা পরিচালনা ও সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। বিলেতে থাকা অবস্থায় তিনি এ পত্রিকার জন্য নিয়মিত গল্প, কবিতা ও নিজের আঁকা ছবি পাঠাতেন।
তার প্রধান অবদান শিশু-কিশোর উপযোগী বিচিত্র সাহিত্যকর্ম। কবিতা, নাটক, গল্প, ছবি সবকিছুতেই তিনি সূক্ষ্ম ব্যঙ্গ ও কৌতুকরস সঞ্চার করতে পারতেন। তার কাব্যে হাস্যরসের সঙ্গে সমাজচেতনাও প্রতিফলিত হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রচনা ‘আবোলতাবোল’, ‘হ-য-ব-র-ল’, ‘পাগলা দাশু’, ‘খাই খাই’ ইত্যাদি। ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :