ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য উইক’ নিউজ ম্যাগাজিনের চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘Destiny's Child’ বা ‘নিয়তির সন্তান’।
দ্য উইকের নয়াদিল্লি ব্যুরো চিফ নম্রতা বিজি আহুজা রচিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের বিএনপি ভাঙার প্রচেষ্টার বিপরীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দলটি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
তার নেতৃত্বেই দল আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ তার জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসন্ন পরিবর্তন হতে পারে তারেক রহমানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করলেও দেশের রাজনীতিতে তার সক্রিয়তা অনেক বেশি। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সমর্থকদের কাছে ‘তারেক জিয়া’ নামে পরিচিত। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র।
১৯৮১ সালে সেনা বিদ্রোহে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ও শেখ হাসিনা ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যার ফলশ্রুতিতে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটে।
৫৭ বছর বয়সী তারেক রহমান এখন তার মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। দেশের গণতান্ত্রিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তার সক্রিয় অংশগ্রহণ বিএনপিকে বড় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছে।
ঢাকায় তার প্রত্যাবর্তন নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। বর্তমানে তিনি ভার্চুয়ালি দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন।
ঢাকায় প্রত্যাবর্তন তার জীবনের ‘পূর্ণ চক্র সম্পন্ন হওয়ার’ ইঙ্গিত বহন করছে বলে মনে করছেন অনেকেই। খালেদা জিয়া আশা করছেন, আসন্ন নির্বাচনে তারেকই হবেন দলের প্রধান মুখ।
তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানান, তারেক এরই মধ্যে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা করেছেন।
তারেক রহমানের আরেক উপদেষ্টা ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক ও উন্নয়নকেন্দ্রিক রাজনীতি গড়ে তুলতে চাই। শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী সব শ্রেণির মানুষের জন্য সমান সুযোগ, ন্যায্য মজুরি ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য।’
জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী বলেন, ‘তারেক রহমান নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। সামরিক ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়েছিল যে, তিনি রাজনীতিতে আর সক্রিয় হবেন না, যা ছিল তার রাজনৈতিক অধিকারের লঙ্ঘন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের বিএনপি ভাঙার চেষ্টার বিরুদ্ধেও তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন।’
প্রতিবেদনে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পথচলার ধারাও তুলে ধরা হয়। ১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে যুক্ত হলেও ১৯৯১ সালে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার পর কিছুটা নিস্ক্রিয় থাকেন।
২০০১ সালে তিনি আবার সক্রিয় হন এবং ওই নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ জয় লাভ করে। তবে এ সময় তার বিরুদ্ধে সরকারে অনানুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে।
২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলে তারেক রহমান ও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান।তখন থেকেই তিনি প্রবাসে রয়েছেন।
১৬ বছরের নির্বাসনকালীন তিনি ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারান এবং নানা আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন। তারপরও তিনি দলকে সংগঠিত রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়, বাংলাদেশে আসন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তন তারেক রহমানের জন্য একটি নতুন সুযোগ। প্রশ্ন হলো তিনি কেমন নেতা হয়ে উঠবেন?