রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত শহীদি সমাবেশে পিলখানা, শাপলা চত্বর ও জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
এ সময় আওয়ামী লীগকে ‘গণহত্যাকারী দল’ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের জোর দাবি জানান তারা।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টার পর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে ‘জুলাই, পিলখানা ও শাপলা চত্বর গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি’ শীর্ষক সমাবেশটি হয়।
সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে সাভারের আশুলিয়ায় নিহত সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওরা পুড়িয়ে মেরেছে। আমি এর বিচার চাই। এই খুনিদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম হান্নান বলেন, ‘আমরা একত্রিত হয়েছি একটি দাবিতে, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ যেন আর কখনো রাজনীতি করতে না পারে। যে দল ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের ছেলেদের হত্যা করতে পারে, তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।’
শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে নিহত আল আমিনের ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বুঝি না কে ক্ষমতায় আছে বা আসবে। আমরা শুধু চাই, যত শহীদ পরিবার আছে, তারা বিচার না পাওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুললে বিভিন্ন মহল আমাদের ‘আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয় দেখায়। তাদের বলতে চাই, যখন বিডিআর বিদ্রোহ, শাপলা চত্বর কিংবা শাহবাগ ও উত্তরা এলাকায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তখন সেই পশ্চিমা বিশ্ব কোথায় ছিল? হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার না হলে উন্নয়ন কিংবা সমঝোতা অর্থহীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের প্রেসক্রিপশনেই বিডিআর ও শাপলার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো ইস্যুই প্রাসঙ্গিক নয়।’
সারজিস আলম দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এ প্রজন্মকে ভয় করুন। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আবেগ নিয়ে খেলা করলে তারা সব ক্ষমতার উৎসকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যেকোনো শাসককে টেনে নামাতে পারে।’
সমাবেশের সভাপতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি চার দফা দাবি তুলে ধরে বলেন
১. আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশ, আদালত ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. শাপলা চত্বর গণহত্যাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় তদন্ত কমিশন গঠন, শহীদদের তালিকা প্রকাশ এবং বিচার প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করতে হবে।
৩. পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. দেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি স্পষ্টভাবে থাকতে হবে।
শরিফ ওসমান হাদি বলেন, ‘এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১০০ দিন দেশের ৬৪ জেলায় গণসংযোগ চালাবে ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময়ের মধ্যে সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে, আগামী ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায় শাহবাগ থেকে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে।’
সমাবেশে ৫০টির বেশি শহীদ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনেকেই আবেগঘন বক্তব্য দেন।
আপনার মতামত লিখুন :