শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ১০:৫৫ এএম

‘যতদিন বেঁচে আছি জীবনটাকে বোনাস মনে হয়’

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ১০:৫৫ এএম

‘যতদিন বেঁচে আছি জীবনটাকে বোনাস মনে হয়’

আশরাফুল ইসলাম রবিন। ছবি: সংগৃহীত

দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে মাতৃভূমি থেকে এক স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। কঠিন দিন কেটে গেছে তবুও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে সেই রাত্রিগুলো। এই অভিজ্ঞতা আমাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে। যতদিন বেঁচে আছি জীবনটাকে বোনাস মনে হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রবিন।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রবিনের স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো—

বিরোধী দলের রাজনীতির কারণে স্বাভাবিক জীবন হারিয়েছিলাম অনেক আগেই। সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ফ্যাসিবাদী শাসন বন্দুকের নল, জেল জুলুমের তোয়াক্কা না করে রাজপথেই শপে দিয়েছিলাম নিজেকে। সারা জীবনের সাধ ছিল আমার সর্বোচ্চ ত্যাগ দিয়ে হলেও ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনাশাহীর আমল থেকে দেশকে মুক্ত করব। জুলাইয়ে কোটা সংস্কার ও তার প্রেক্ষিতে হাসিনার পুলিশের দ্বারা ছাত্র খুন আমাকে প্রবলভাবে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছিল।

রংপুরে আবু সাঈদ আর চট্টগ্রামের ওয়াসিমের প্রাণদান আমাকে আরও তীব্র বেগ এনে দিয়েছিল। দৃঢ়ভাবে মনে হয়েছিল খুনি হাসিনার মসনদ ভাঙার এটাই মোক্ষম সময়। গত বছরের ১৯ জুলাই সারা দেশে সহিংসতা কারফিউ চলছে। কারফিউয়ের মধ্যে অনেক জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

আমাদের দলীয় নির্দেশনা সেদিন জাতীয় প্লেসক্লাবে আমাদের কর্মসূচি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের নির্দেশনায় জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ি। খবর এলো রুহুল কবীর রিজভী ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তখন সেগুন বাগিচা এলাকায় শরিফ উদ্দিন জুয়েল ভাইয়ের নেতৃত্বে মিছিল সহকারে অবস্থান নেই। চারপাশে খুনি হাসিনার রক্ষীবাহিনী পুলিশ ঘিরে ফেলে। শুরু হয় গুলি টিয়ারশেল। সংঘর্ষের একপর্যায়ে কাকরাইল পৌঁছাই। পৌঁছে দেখি হাজার হাজার নেতাকর্মী সেখানে অবস্থানরত। উপস্থিত আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের কর্মী সমর্থকরা।

মির্জা আব্বাস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, আমিনুল হক, নুরুল ইসলাম নয়ন ভাইরাসহ অন্য নেতৃবৃন্দ নেতৃত্বে ছিলেন। রাজপথের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা পুলিশের গুলি টিয়ারশেলের বিপরীতে দাঁড়াবার প্রশিক্ষণ বহু আগেই রপ্ত করেছিলাম। ১৯ জুলাই কাকরাইলে আমাদের সাথে পুলিশের তীব্র সংঘর্ষ হয়। চলে টিয়ারশেল গুলি সাউন্ড গ্রেনেড। কিন্তু পিছু হটিনি। সাহসের সাথে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিরোধ করে গিয়েছি।

১৯ জুলাইয়ের সংঘর্ষে আমার তীব্র সক্রিয়তা ও অতীতে রাজপথের প্রতিরোধের কারণে ডিবি পুলিশের টপ খাতায় নাম লেখা হয়ে গিয়েছিলো। অতীতেও গ্রেপ্তার নির্যাতন গুমের শিকার হয়েছি। তাই জুলাইয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ কৌশলে ছিলাম। জানতাম কোনোভাবেই ধরা পড়া যাবে না। রাজপথে থেকে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। তবে ডিবি পুলিশও হাল ছাড়েনি আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। একের পর এক টিম আমাকে ধরার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। আমার সম্ভাব্য সব অবস্থানে তারা তালাশ করে, আমাকে না পেয়ে ২১ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত আমার কাছের ১১ জনকে আটক করে ফেলে। ১১ জনকে আটক নির্যাতন করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। তাদের আমাকে লাগবেই। কারণ তারা পরখ করেছে বাড্ডা, ভাটারা এলাকা, কুড়িল এলাকায় আন্দোলনে আমার শক্ত ভূমিকা সক্রিয়তা।

২৫ জুলাই আমার জন্য নেমে আসে দুর্বিষহ রাত। আমি বাংলাদেশের কোনো মোবাইল সিম ব্যবহার করতাম না। তবুও তারা কোনোভাবে আমার অবস্থান টের পেয়ে যায়। আমার অবস্থান শনাক্তের পর ডিবির কুখ্যাত অফিসার হারুণের নেতৃত্বে খিলগাঁও জোনের এডিসিসহ অন্যান্য অফিসাররাসহ ২০০-২৫০ ডিবি পুলিশ ভাটারা এলাকায় আমার অবস্থানরত বাসা শনাক্ত করে ফেলে। সেদিন আমি বাসায় একা অবস্থান করছিলাম। ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন ১২টা ৪০ মিনিটের কিছু বেশি। নিচে হৈহুল্লোড় শব্দ শুনে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখি নিচে অসংখ্য ডিবি পুলিশের সদস্য বাসায় ঢুকার চেষ্টা করছে। নিজের প্রাণ বাঁচাতে সেদিন আমাকে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে পরখ করতে হয়েছে। আমি বাসার ২য় তলায় অবস্থান করছিলাম, প্রাণ বাঁচাতে ৯ তলা বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠি। 

বিল্ডিংয়ের পেছন দিয়ে ৯ তলা থেকে এসির রড বেয়ে নামার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তড়িঘড়ি করে একের পর এক পা ফেলছি। জানি ধরা পড়লে জীবন যাবে এদিক নিচে পড়লেও পৃথিবী ছাড়া। ৯ তলা ৮ তলা করে যখন ৭ তলায় পৌঁছাই তখন পা পিছলে নিচে পড়ে যাচ্ছিলাম। আল্লাহ রহমতে হাত ফসকে যায়নি, এসির রডে ঝুলছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার দুনিয়া এখানেই বন্ধ হয়ে আসছে। তখনো আরও ৬ তলা বাকি, ভয়ডর জয় করে শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম নিজের মায়ের কথা মনে করছিলাম। আমাকে যে করেই হোক নামতে হবে। গ্রিল বেয়ে এসির রড ধরে প্রথম তলায় পোঁছাই। শরীর আর কুলাচ্ছে না, সারা শরীর অবশ হওয়ার দরুন। তবুও হাত চেপে ঝুলে রয়েছি, আমাকে বাঁচতে হবে। যখন মাটি অতি নিকটে তখন পা পিছলে ভবনের পিছনে ফাঁকা প্লটে পড়ে যাই। 

হাতে পায়ে ব্যথা পা চলছে না। স্থবির দেহ মনের জোরে এগিয়ে নিয়ে গেছি। রাত্রি তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘড়িতে তখন সময় হয়তো ১টার কাছাকাছি। কার কাছে যাব কীভাবে বেরুবো কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সেদিন রাতে আশ্রয় নিয়েছিলাম একটি ফাঁকা প্লটে। পানি ঘন ঘাস কচুরিপানা। মশা আর পোকামাড়কের কামড়। সেদিনের রাত্রি পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ রাত্রি মনে হচ্ছিল। কচুরিপানা আর কাদা এসব গায়ে জড়িয়েই বাকি রাত্রি পার করেছি।একদিকে মৃত্যুর ভয় আরেকদিকে এখান থেকে বাঁচার পথ খোঁজা। ভোরের আলো আর মসজিদে আযানের ধ্বনি যেন আশা দেখাচ্ছিল। খুব সকালে পাথরের ট্রাকে করে ভাটারা এলাকা ছাড়ি। তখন আমি খালি পায়ে পড়নে লুঙ্গি আর একটা টিশার্ট। এই বেশেই আমাকে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে। আমি জানতাম আমাকে পেলে নির্ঘাত মেরে ফেলবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের পর এক অফিসারের মাধ্যমে জেনেছিলাম, সেদিন আমাকে শেষ করে দেওয়ার অর্ডার ছিল। আমাকে না পেয়ে দরজা কেটে বাসায় ঢুকে তছনছ করেছিল সব। নিয়ে গিয়েছিল আমার পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, নগদ অর্থ সহ মূল্যবান সব কাগজ পত্র। 

বিল্ডিংয়ের রড বেয়ে নয় তলা থেকে নামা কচুরিপানায় জড়িয়ে রাত্রি অতঃপর স্থান ত্যাগ। জীবন আমার কাছে ধরা দিয়েছিলো সিনেমার চেয়ে কঠিন বাস্তবে। যে গল্প সিনেমায় দেখেছি তা আমার জীবনে বাস্তবে ঘটে গেছে। আজ জুলাইয়ের অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। তবে সেই দুর্বিষহ রাত কঠিন স্মৃতি ছাদ থেকে পড়ার গল্প আমাকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বারংবার স্মৃতিতে ভাসে নতুন জীবন পাওয়ার মুহুর্ত। 

দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে মাতৃভূমি থেকে এক স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। কঠিন দিন কেটে গেছে তবুও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে সেই রাত্রিগুলো। এই অভিজ্ঞতা আমাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে। যতদিন বেঁচে আছি জীবনটাকে বোনাস মনে হয়।বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর জীবনে জনগণ চায়তো সরকারি দলের তকমা লাগবে। আমাদের অভিভাবক তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে নব বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমরা দেখছি তা বাস্তবায়ন করবো। ৩১ দফার প্রতিটি কথা প্রতিশ্রুতি জনগণকে আমরা পূরণ করবো। যে কঠিন জীবন যে ত্যাগ অত্যাচার আমাদের সইতে হয়েছে সে বাংলাদেশকে পথ হারাতে দিবো না। আল্লাহ সর্বশক্তিমান।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!