নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেখানে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরেও ৫-৬ বছর অনায়াসেই থাকতেন, সেখানে স্নাতকোত্তরের ফল প্রকাশের ৩ দিনের মাথায় হল ছেড়ে এক অনন্য নজির গড়লেন ঢাবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে তার আসবাবপত্র নিয়ে হল ত্যাগ করেন বলে নিজেই ফেসবুক পোস্টে নিশ্চিত করেছেন ।
ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে মহিউদ্দিন খান বলেন, হলের সুন্দর এই পরিবেশ চলমান থাকবে যদি ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর আমরা নিয়ম মেনে হল ছেড়ে দিয়ে অনুজদের অধিকার বুঝিয়ে দিই। আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় সিদ্ধান্তটা কঠিন মনে হলেও, যারা ছাত্রলীগের জুলুম সহ্য করেছে, তারা আর নতুন জুলুমের জন্ম দিতে পারে না।
তিনি আরও জানান, প্রথম বর্ষে হলে ওঠার ১২-১৩ দিনের মধ্যে গেস্টরুমের ভয়াবহতায় তাকে হল ছাড়তে বাধ্য করেছিল। এরপর দ্বিতীয় বর্ষের শেষদিকে লিগ্যাল এলিমেন্টে থাকার সুযোগ পেলেও ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি এক ভয়াবহ রাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, শাহরিয়াদ ও মাহমুদের ওপর ছাত্রলীগ যে নির্যাতন চালায়, তার জেরে আমাকেও ঝুঁকির মুখে হল ছাড়তে হয়েছিল। মাসের পর মাস হলমুখো হওয়া যায়নি।
স্নাতকোত্তর শেষ করার পর নিয়ম অনুযায়ী হল ত্যাগ করেছেন বলেও জানান তিনি। তার ভাষায়, ছাত্রলীগ হলে সিট নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষার্থীদের ওপর দখলদারি কায়েম করত। কিন্তু জুলাইয়ের পর হলে এখন নিয়মতান্ত্রিকতা ফিরে এসেছে। গণরুম-গেস্টরুমের সেই জঘন্য চর্চা আর নেই। এখন সবাই নিয়মমাফিক হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।
মহিউদ্দিন খানের হল ছাড়ার এই পদক্ষেপকে ব্যাপক ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে—এমন উদ্যোগ ছাত্ররাজনীতিতে একটি মাইলফলক এবং তা একটি সুস্থ সংস্কৃতি গড়তে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
তার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকের এক মন্তব্যে সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি হিসেবে এখনো হলে অবস্থান করলে হয়তো বাধা দেওয়ার সাহস কারও থাকত না। কিন্তু নিজের থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো হল ছাড়ছেন এটাই বড় মানসিকতা।
মেহেদুল ইসলাম নামে আরেকজন লেখেন, সেই ছাত্রলীগের ভয়াল গণরুম-গেস্টরুম কালচার আর ফিরে না আসুক। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হল ছেড়ে দেওয়া নতুন বন্দোবস্তের ক্ষুদ্র পদক্ষেপ।
এর আগে, গত ২২ এপ্রিল প্রকাশিত স্নাতকোত্তর ফলে মহিউদ্দিন খান ৩.৯৭ সিজিপিএ নিয়ে ব্যাচে প্রথম হন। এ ছাড়া, স্নাতকে তিনি ৩.৯৩ সিজিপিএ পেয়ে এককভাবে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। মহিউদ্দিন খান ঢাবির লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। যদিও ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়ে দীর্ঘদিন তিনি হলে থাকতে পারেননি।