বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম

ঝালকাঠিতে বিএনপির কাউন্সিল ঘিরে উত্তেজনা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম

ঝালকাঠিতে বিএনপির কাউন্সিল ঘিরে উত্তেজনা

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কাউন্সিলে আলোচিত ৪ প্রার্থী। ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলীয় রাজনীতিতে দেখা দিচ্ছে জটিল মেরূকরণ। কাউন্সিল ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা মতপার্থক্য ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন পদের প্রার্থী ও নেতাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। 

কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কিছু অভিযোগ দলীয় পরিবেশকেও সরগরম করে তুলেছে। এসব ঘটনায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনাসহ উত্তেজনার পারদ বাড়ছে। পাশাপাশি কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ স্থগিত করার চিঠি মিথ্যা বলে ফেসবুকে পোস্ট করানোর অভিযোগ উঠেছে মাহাবুবুল হক নান্নুর বিরুদ্ধে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় দুই নেতার বিরুদ্ধেও ২-১ দিনের মধ্যেই পাল্টা অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

জেলা বিএনপির কাউন্সিল যত এগিয়ে আসছে, ততই দলের মধ্যে একের পর এক ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। 

সম্প্রতি চাঁদাবাজি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজাম মীরবহরের পদ স্থগিত করা হয়েছে। তার বিষয়ে ব্যবস্থা না নিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর অনুরোধ সত্ত্বেও পদ স্থগিত এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে নতুন করে পুরোনো অভিযোগ দেওয়ার ঘটনায় দলীয় হাওয়া গরম হয়ে উঠেছে।

শুরু হয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ। তাই শেষ পর্যন্ত প্রায় সাত বছর পর কাউন্সিল শান্তিপূর্ণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন নেতা-কর্মীরা। 

তবে এসব ঘটনার প্রভাব পড়লেও কাউন্সিল বাধাগ্রস্ত হবে না বলে মনে করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। যেকোনো সময় যেকোনো দিন ঘোষণা হতে পারে কাউন্সিলের দিন-ক্ষণ। অপেক্ষা শুধু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশের। 

কিন্তু তার আগেই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম প্রধান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর একটি চিঠি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

গত ৫ এপ্রিল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নিজাম মীরবহর কাঠালিয়ার আমুয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন খলিফার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তা না দেওয়ায় ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সুমনকেও আসামি করা হয়। এ ঘটনা জানিয়ে তারেক রহমানের কাছে ৪ ডিসেম্বর অভিযোগ দেন তিনি। 

এ ছাড়া সুমন খলিফা আমুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন সন্দেহে মিথ্যা মামলায় আসামি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কারণ দর্শাতে বলা হয় নিজামকে।

এরপর চলতি বছরের ৭ এপ্রিল দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু কারণ দর্শানোর জবাব বিষয়ে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে একটি চিঠি দেন। 

এতে তিনি সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজামের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিতে বলেন। কিন্তু কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেই গত ২৩ এপ্রিল নিজাম মীরবহরের দলীয় পদ স্থগিত করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।

এতে উল্লেখ করা হয়, নিজাম মীরবহরের বিরুদ্ধে উল্লিখিত অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। 

এ বিষয়ে তার দেওয়া জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় পদ স্থগিত করা হয়। তার অপতৎপরতার দায় দল নেবে না। পদ স্থগিতের পরদিন কাঠালিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে নেতা-কর্মীরা আনন্দমিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন।

ফলে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর চিঠিতে প্রমাণ হয়, তাকে ভুল বুঝিয়ে জেলা বিএনপির সঠিক সিদ্ধান্তকে বাধাগ্রস্তের চেষ্টা হয়েছিল। 

এমনটাই মনে করেন আমুয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন খলিফা।

জেলা কাউন্সিলের আগে নিজাম মীরবহরের বিষয়ে এরকম সিদ্ধান্তে মাঠপর্যায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না এবং কাঠালিয়ার ভোটাররা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে সুমন খলিফা জানান।
  
এদিকে, পদ স্থগিত চিঠির একদিন পর ২৪ এপ্রিল চিঠির ওপর ক্রস দেওয়া মাহাবুবুল হক নান্নুর একটি অডিও রেকর্ড এবং চিঠির নিচে ‘বাড়াবাড়ি বেশি হচ্ছে’ লিখে পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।

ঝালকাঠি-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও বিএনপির নিউইয়র্ক দক্ষিণ শাখার সভাপতি সেলিম রেজা মোবাইল ফোনে জানান, জেলা বিএনপির সম্মেলন উৎসবমুখর পরিবেশে এগিয়ে যাচ্ছিল। 

কিন্তু দু’জন কেন্দ্রীয় নেতা হঠাৎ প্রার্থিতা ঘোষণা করার পর পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তারা যখন বুঝতে পারেন, তাদের জয় নিশ্চিত নয়, মাঠপর্যায়ে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তখনই তারা কেন্দ্রীয় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন অভিযোগ তৈরি করে সম্মেলন বানচালের পাঁয়তারা করছেন।  
   
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, পদ স্থগিতের চিঠি দেওয়ায় নান্নু ভাই আমাকে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। নিজাম মীরবহরের জবাব সন্তোষজনক ছিল না এবং কোনো প্রমাণ দাখিল করেনি। তাই কেন্দ্রে অবহিত করেই তার পদ স্থগিতের চিঠি দিয়েছি। 

এ চিঠির নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে লিখে কেন্দ্রীয় নেতা নান্নু আমার হোয়াটসঅ্যাপ আইডিতে পাঠিয়েছেন। এভাবে সম্মেলন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। যারা অভিযোগে স্বাক্ষর করেছে, তারা সবাই বিগত ১৫ বছর ছিল নিষ্ক্রিয়। এদের কাউন্সিলে ভোট নেই। তাই তারা চাচ্ছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। 

কাঠালিয়ার কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম আজম সৈকত বলেন, নিজাম মীরবহরের পদ স্থগিতে ক্ষুব্ধ হন নান্নু ভাই। তাই তিনি বিভাগীয় সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য এবং জেলা কাউন্সিলে সম্পাদক প্রার্থী হয়েও সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর করা অভিযোগ আমার উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দিয়ে যান। যেটা দুঃখজনক।

সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবল হক নান্নু বলেন, ‘সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে রাজাপুর, কাঠালিয়া, নলছিটি উপজেলার বর্তমান ও সাবেক নেতারা চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক সাইফুল্লাহ পনিরের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন বিগত দিনে।’

‘এরপর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের জামিন করিয়েছেন। কাঠালিয়ার নিজাম মীরবহরের বিষয়ে তদন্ত শেষে রিপোর্ট দিতে বলেছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। কিন্তু তার নির্দেশ উপেক্ষা করে তদন্তের আগেই চিঠি দিয়ে নিজামের পদ স্থগিত করেছে শাহাদাত হোসেন। তাই আমি বলেছি, এটা বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমি তো তাকে গালাগাল করিনি। সে তো ওই চিঠি দিতে পারে না। তাই সেই চিঠির ওপর ক্রস দিতে বলেছি।’    

বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন্ন কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কাউন্সিল প্রস্তুতকমিটির আহ্বায়ক হায়দার আলী লেলিন বলেন, ‘ক’দিনের ব্যবধানে কিছু ঘটনায় এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিষয়গুলো নিয়ে কিছু জটিলতা হয়েছে। আমাদের টিমপ্রধান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর তদন্ত করার আগেই কাঠালিয়ার নিজামের পদ স্থগিতের চিঠি কেন দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে শাহাদাত সাহেবের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘এরপর মিন্টু ভাই সিদ্ধান্ত দেবেন। এ ছাড়া শাহাদাত সাহেবের বিরুদ্ধে উপজেলা নেতাদের অভিযোগের বিষয়টি নিয়েও পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে। এর প্রভাব পড়বে কাউন্সিলে। তবে তারপরও সব সমস্যার সমাধান করেই কাউন্সিল হবে শিগগিরই।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!