ঢাকা বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

মানবিক করিডোরের উদ্দেশ্য কি? 

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে স্থাপিত একটি মানবিক করিডোর। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইনদের জন্য ‘মানবিক করিডোর’ করতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে  অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন খবরে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল বলছে, মানবিক করিডোরের উদ্যোগ অনির্বাচিত সরকার নিতে পারে না। আবার কোন কোন দল বলছে, এমন উদ্যোগ নিতে হলে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিতে হবে।

কেউ কেউ এও আশঙ্কা করছেন, করিডোর দিলে বাংলাদেশ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়বে।

এমন নানামুখী  আলোচনার মধ্যে অনেকেই জানতে চাচ্ছেন মানবিক করিডোর কি এবং সেখানে কি করা হয়? 

আসলে মানবিক করিডোর হলো একটি বিশেষ নিরাপদ পথ বা এলাকা। যা সংঘাতপূর্ণ বা দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে আটকে পড়া সাধারণ জনগণ, আহত ব্যক্তি বা মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত হয়।

এটি সাধারণত যুদ্ধ, সামরিক অভিযান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট সংকটের সময় আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর চুক্তির মাধ্যমে স্থাপন করা হয়।

মানবিক করিডোরের মূল উদ্দেশ্য

নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া- যুদ্ধ বা সহিংসতায় আটকে পড়া সাধারণ মানুষ যেন প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদে পালাতে পারে।

মানবিক সহায়তা পৌঁছানো- খাদ্য, ওষুধ, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম যেন ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছায়।

আহতদের চিকিৎসা- আহত মানুষদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করা।

আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ- যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অন্যতম অনুষঙ্গ।

মানবিক করিডোর হলো জীবন বাঁচানোর পথ, যা একটি নাজুক ও সাময়িক উদ্যোগ হলেও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ।

মানবিক করিডোর কিভাবে কাজ করে

চাহিদা চিহ্নিতকরণ- যুদ্ধ বা সহিংসতা চলমান এলাকায় দেখা যায় যে, সাধারণ মানুষ, আহত ব্যক্তি বা শিশু-বৃদ্ধরা আটকে পড়েছে।

খাদ্য, ওষুধ, পানি বা চিকিৎসার প্রবল সংকট তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা (যেমন: জাতিসংঘ, রেড ক্রস) বা সংবাদমাধ্যম সংকটের কথা তুলে ধরে।

আলোচনা ও চুক্তি- সংঘাতরত পক্ষগুলোর মধ্যে (সরকার ও বিদ্রোহী/বাহিনী) সাময়িকভাবে আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা (যেমন জাতিসংঘ, তুরস্ক, কাতার বা কোনো নিরপেক্ষ দেশ) সাহায্য করে।

চুক্তিতে বলা হয়:

#কোন পথে মানুষ যাবে।

#কত সময়ের জন্য করিডোর খোলা থাকবে।

#কোন সংস্থা তদারকি করবে।

#কেউ সেখানে হামলা চালাবে না।

নিরাপত্তা ও নজরদারি : করিডোর এলাকায় সেনা হস্তক্ষেপ বন্ধ রাখা হয়। সেখানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধান থাকে (জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক, রেড ক্রস কর্মী ইত্যাদি)। কখনো সময়মতো হোয়াইট ফ্ল্যাগ বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় নিরাপদ পথ বোঝাতে।

মানুষ স্থানান্তর বা ত্রাণ সরবরাহ : বেসামরিক মানুষ, আহত ব্যক্তি বা বিশেষ ঝুঁকিতে থাকা জনগণ (যেমন শিশু, গর্ভবতী নারী) নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়। জরুরি ত্রাণসামগ্রী (খাবার, পানি, ওষুধ, জেনারেটর ইত্যাদি) দুর্গত এলাকায় পৌঁছানো হয়।

করিডোর বন্ধ বা পুনর্মূল্যায়ন : নির্ধারিত সময় শেষে করিডোর বন্ধ হয়ে যায়। যদি পরিস্থিতি উন্নত না হয়, তখন নতুন করে আলোচনা করে করিডোর আবার খোলা হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ গাজায় সালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মানবিক করিডোর খোলা হয় কয়েক ঘণ্টার জন্য, যাতে বেসামরিকরা দক্ষিণে সরে যেতে পারে এবং ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়।

এদিকে, সিরিয়া গৃহযুদ্ধের সময় জাতিসংঘ ও রেড ক্রস মানবিক করিডোর স্থাপনে কাজ করেছে,যাতে বেসামরিক মানুষদের নিরাপদে সরানো হয়েছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও কিছু সময়ের জন্য মানবিক করিডোর স্থাপন করা হয়েছিল ইউক্রেনীয় শহর থেকে মানুষ সরানোর জন্য।

এই করিডোরগুলো নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে এগুলো প্রায়ই রাজনৈতিক দরকষাকষির অংশ হয়ে যায়।