আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো ধরনের অনুষ্ঠান বাতিলের ক্ষমতা রাখে না এবং এ ধরনের ক্ষমতা ব্যবহারের যে সংস্কৃতি রয়েছে তা পুরোপুরি ভাঙতে আমরা বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে সংগঠনটির উত্তরা জোন।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে `বাধার মুখে বাতিল উত্তরায় বসন্ত উৎসব` শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্বনামধন্য একটি গণমাধ্যম। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে নিজেদের অবস্থান জানায় নাগরিক কমিটি।
নাগরিক কমিটির উত্তরা জোনের পক্ষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ শুক্রবার বিকেলে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠান গণমাধ্যমটিকেকে।
সেখানে বলা হয়, “আজকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘বাধার মুখে বাতিল উত্তরার বসন্ত উৎসব’ নামক শিরোনাম আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এখানে উল্লেখ আছে যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের তুরাগ থানার ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান ইমন।”
ওই অনুষ্ঠান বন্ধের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির সংশ্লিষ্টতা নাকচ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “সকল ধরনের নাগরিক সংগঠন, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও পড়ে, আমরা তাদের সব ধরনের সাহায্য করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। যে সাংস্কৃতিক স্থিরাবস্থা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, সকল স্তরের জনগণকে নিয়ে আমরা সেটা আবার গতিশীল করতে চাই।”
প্রতি বছরের মত এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলা এবং পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পাশাপাশি উত্তরায় উন্মুক্ত মঞ্চে বসন্ত বরণের প্রস্তুতি নিয়েছিল `জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ`।
আয়োজকরা বলছেন, যথাযথ নিয়মে অনুমতি নেয়ার পরও তারা উত্তরার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে পারেননি।
উদযাপন পরিষদ-এর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আবেদন করেছি, তারা আমাদের অনুমতিও দিয়েছে। আমরা বরাদ্দকৃত ভেন্যুর জন্য ভাড়ার টাকাও পরিশোধ করেছি। পুলিশ থেকেও অনুমতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার কারণে আজকে সেখানে অনুষ্ঠান করতে পারিনি।”
মূলত ইমন রহমান ফরহাদ নামের একজনের নেতৃত্বে ওই উৎসব আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে ইমনকে ফোন করা হলে তিনি নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুরাগ থানার মুখপাত্র হিসেবে পরিচয় দেন।
উৎসবে বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “এই উৎসব আয়োজনে উত্তরায় উনাদের যে প্রতিনিধি, তিনি আওয়ামী লীগের দোসর।”
যাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলা হচ্ছে তার নাম চাইলে ইমন বলেন, “উনার নামটা জানি না।”
বাধা দেওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে ইমন দাবি করেন, আয়োজকেরা মঞ্চটির সঠিক নাম ব্যানারে ব্যবহার করছে না।
তার ভাষ্য, “আমরা ৫ অগাস্টের পর এই মঞ্চটিকে ‘মীর মুগ্ধ মঞ্চ’ নাম দিয়েছি। কিন্তু বসন্ত উৎসবের লোকজন সব জায়গায় এটিকে উন্মুক্ত মঞ্চ বলে পরিচয় দিচ্ছে। সাত মাস ধরে আমরাই মঞ্চটির রক্ষণাবেক্ষণ করছি।”
সিটি করপোরেশন থেকে মঞ্চটির নাম কি ‘মীর মুগ্ধ মঞ্চ করা হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা সিটি করপোরেশনে বলেছি। একজন কর্মকর্তা এসে জায়গাটা দেখে গেছেন। এটা করা হবে।”
জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে বলেও দাবি করেন ইমন।
এ বিষয়ে নাগরিক কমিটির অবস্থান ব্যাখ্যা করে সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজের পাঠানো বক্তব্যে বলা হয়, “এই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি যে গতকাল, ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায়, সেক্টর ৭ এর একদল ছেলে উত্তরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ইমন নামের একজনকে অবহিত করে যে উত্তরায় বসন্তবরণ উৎসবে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন পতিত স্বৈরাচারী দল আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত।
“পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক কমিটি উত্তরার দুজন সদস্যকে আমরা তাদেরকে আরো ভালোভাবে খতিয়ে দেখে প্রমাণ সহকারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে জানাতে বলি। এরপরে এই বিষয়ে আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা আজকে সকালে জানতে পারি যে উত্তরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি স্থানীয় প্রতিবাদের কথা জানিয়ে উপসচিবের কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি প্রোগ্রামটি স্থগিত করতে বলেন।”
তবে বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা রাতেও বাধাদানকারীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। আয়োজকদের মধ্যে একজনকে আওয়ামী লীগের দোসর বলার পর তাকে আয়োজনের সংশ্লিষ্টতা থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও শেষপর্যন্ত উৎসবটি করা সম্ভব হয়নি।
নাগরিক কমিটির বার্তায় বলা হয়, “আমরা আবারো বলতে চাই, ফ্যাসিবাদকে সামাজিকভাবে রোধ করতে হলে সাংস্কৃতিক জাগরণ লাগবে এবং আলোচ্য ট্যাগিং কাণ্ড কেবল নতুন ফ্যাসিবাদকেই জাগাবে। আমরা পরবর্তীতে দায়িত্ব নিয়ে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার কাজ করব।”
আপনার মতামত লিখুন :