ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নয়াপল্টনের সমাবেশ রূপ নেয় জনসমুদ্রে

মাইদুর রহমান রুবেল

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৪, ০৮:৪৯ পিএম

নয়াপল্টনের সমাবেশ রূপ নেয় জনসমুদ্রে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দীর্ঘদিন পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ। এই উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা’সহ আশপাশের জেলা থেকে আসতে থাকে নেতাকর্মীরা। সমাবেশের সময় ২ টায় ঠিক করা হলেও সকাল ১০ টার আগেই আসতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। বেলা ১২ টা বাজতেই সমাবেশ স্থল পূর্ন হয়ে যায় কানায় কানায়। বেলা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। সব পথের মোহনা মিলিত হয় নয়াপল্টনে। বেলা বাড়ার সাথে সমাবেশ রূপ নেয় জনসমুদ্রে। সমাবেশটি একদিলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন, অন্য দিকে নাইটিংগেল ফকিরাপুর, শান্তিনগর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। আর আশপাশের গলিতে ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীদের ঢল।যতদূর দৃষ্টি যায় চোখে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের অংশগ্রহন।

উৎসবে রূপ নেয় নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা। বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবী দীর্ঘদিন পর মুক্ত আকাশের নিচে মন খুলে নিশ্বাঃস নিতে পারছেন তারা।মনের অনন্দ ছিলো, কারন গ্রেফতারের ভয় ছিলো না আজ।কর্মীদের দাবী আগে সমাবেশে আসলে গ্রেফতার করা হতো। শান্তিতে শ্লোগানও দেয়া যেত না। এমন সমাবেশের আশপাশে নেই পুলিশের সাজোয়াযান। নেই কোন পুলিশের উপস্থিতি।অথচ এর আগের সমাবেশের চারপাশে অক্টোপাশের মতো ঘিরে রাখতো পুলিশ। সমাবেশ করতে বেধে দেয়া হতো ২০ থেকে ৩০ টি শর্ত। আজ  শর্তের বেড়াজাল নেই, গ্রেফতারের ভয় নেই।      

নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকাজুড়েই নেতাকর্মীদের ঢল । খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন। তাদের হাতে জাতীয় পতাকা এবং বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুন দেখা গেছে। বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত ছিলো পুরো এলাকা।

ঢাকার বাইরে থেকে প্রায় ১০০ বাস ও প্রায় ৫০ এর বেশি ট্রাক সমাবেশস্থলেত অদুরে পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। সারাদেশ থেকে বাস এবং ট্রাকে করে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়ছেন।

পুরো সমাবেশ কেন্দ্র করে পুলিশের কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে একটি সেনাবাহিনীর টহল গাড়িকে কয়েকবার রাউন্ড দিতে দেখা গিয়েছে

দুপুর পৌনে তিনটায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে: সেলিমা তরুণদের নিয়ে দেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।

আজ বুধবার (০৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।

বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সেলিমা রহমান বলেন,তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে- এই স্লোগান আপনারাই বাস্তবায়ন করবেন। দেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছি, তা আপনারা তরুণদের নিয়ে বাস্তবায়ন করবেন।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাদের প্রতি আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের সব কয়টি অঙ্গ-সংগঠনকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি আরও বলেন, আজকের দিনের তরুণ সমাজ আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যেসব তরুণ স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন হয়েছি। ছাত্র-জনতার এই অর্জন ধরে রাখতে হবে।

 সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে-খসরু: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার সকলকে সমানভাবে দিতে হবে। সকল জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে।

আমির খসরু বলেন, আজকে সমগ্র জাতির জন্য কাজ করতে হবে। কোনো বিভেদ রাখা যাবে না, সকলের চিন্তাভাবনার প্রতিপালন করতে হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সাংবিধানিক অধিকার সব নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। কোনো মহলের স্বার্থের প্রতিফলন ঘটানো যাবে না। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, জনগণের স্বার্থে কোনো আপস করা যাবে না। নতুন যে বাংলাদেশ হয়েছে তা গণ্ডগোল করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে-আব্বাস: দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

মির্জা আব্বাস বলেন, নেতাকর্মীদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে-বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার কাছে হামলার অভিযোগ আসছে। আমার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও আমার কাছে অভিযোগ আসছে, অনেকে সুযোগ সন্ধানী হয়ে বিভিন্ন জায়গায় গণ্ডগোল থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম করতে চাচ্ছে। এসব সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। বহু লোক এখন খোলস পালটে সুযোগ-সুবিধা নিতে চাইবে, তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি। আল্লাহতায়ালার কাছে লাখো শুকরিয়া। আমরা প্রতিনিয়ত দোয়া করতাম ফ্যাসিবাদ থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য। আল্লাহতায়ালা আমাদের সে দোয়া কবুল করে নিয়েছেন। যারা এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

মির্জা আব্বাস বলেন, মঙ্গলবার আমাদের অনেক নেতা কারামুক্ত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকার পানির স্রোতের মতো করে আমাদের নেতাকর্মীদের জেলে ঢুকিয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর গতকাল (মঙ্গলবার) আমাদের নেতাকর্মীরা শান্তিতে ঘরে ঘুমাতে পেরেছেন। আমিও অনেক শান্তিতে ঘুমিয়েছি।

হাসিনা পালিয়েছে, প্রেতাত্মা রয়েছে-গয়েশ্বর: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে তবে তার প্রেতাত্মা এখনো দেশে রয়েছে। তাদের হাত হতে সাবধান। বুধবার বিকালে রাজধানীর নায়াপল্টনে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, আজকের যা অর্জন হয়েছে তার সকল কল্যাণ ছাত্রদের জন্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রদের কোন আন্দোলন ব্যর্থ হয় নাই। তিনি বলেন, কে প্রধান উপদেষ্টা হবে সেটা আমাদের ভাবার বিষয় না। আমাদের দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। পাড়া মহল্লায় নব্যো বিএনপি সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে লুটপাট করছে। একসাথে বিএনপি‍‍`র কোন সম্পর্ক নাই। আপনারা যারা হামলা মামলা শিকার হয়েছেন, ভাই হারিয়েছেন আর একটু কষ্ট করে মানুষের বাড়িতে হামলা ঠেকাতে হবে বলে ও মন্তব্য করেন তিনি।পুলিশ ভাইদের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সবাই অন্যায় করেছেন বিষয়টি সঠিক নয়। সুতরাং আপনাদের সকলের ভয় পাওয়ার কিছু নাই।

 দেশের ছাত্র- যুব সমাজ, সাধারণ মানুষ একটি পরিবর্তনের জন্য আশা করছে-নজরুল ইসলাম খান: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এদেশের ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ, সাধারণ মানুষ একটি পরিবর্তনের জন্য আশা করছে। যেহেতু শহীদ জিয়ার সঙ্গে রাজনীতিকরেছি, তার আদর্শ আমাদের মাঝে আছে। তাই আমাদের বিশ্বাস সেই পরিবর্তন আমরাই করতে পারব। বুধবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির আয়োজিত এক সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশনেত্রীকে আমরা জীবিত অবস্থায় মুক্ত করতে পেরেছি বলে আমরা আনন্দিত। আমাদের ভাই তারেক রহমানকে একই ভাবে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনবো।

 যে তরুণরা এই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, তাদের অবদানের কথা স্বিকার করে আমরা একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলব। জনগনের কাছে দায় থাকবে এমন একটি সরকার আমরা গঠন করতে চাই।তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ পতন হয়েছে, দাম্ভিক হাসিনার পতন হয়েছে। আমাদের যে ফেসিবাদের প্রতি আন্দোলন তা শেষ হয়েছে। আজকের যে আন্দোলন তা আগামি দিনের নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার আন্দোলন। আগামীদিনের নির্বাচনের জন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে।

 বিমানবন্দর থানা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মাসুদ আহমেদ খান বলেন, দীর্ঘদিন পর আমরা ভয়মুক্তভাবে সমাবেশে অংশ নিলাম। আজ গ্রেফতারের ভয় নেই। সমাবেশের আশপাশে কোন পুলিশ নেই।মনে হচ্ছে স্বাধীন দেশে মনভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি।স্বৈরচার সরকারকে তাড়ানোর জন্য আমরা লড়াই করছি প্রায় দেড় যুগ ধরে।ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পালিয়ে গেছে শেখ হাসিনা।

নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন দারুন আনন্দ লাগছে আজকের সমাবেশে এসে।আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় সমাবেশে আসতে কোন গাড়ী ভাড়া দিতো না।লুকিয়ে পালিয়ে আসতে হতো সমাবেশে আজ নেই সেই চাপ।পারিয়ে গেলে হাসিনা,দেশের মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পাবে সেটাই আমাদের সফলতা।

 মগবাজার থেকে সমাবেশে এসেছিলেন হাতিরঝিল থানা বিএনপির নেতা হেলাল উদ্দিন আহমেদ হেলাল, তিনি বলেন বিএনপি করায় আমরা বাড়ীতে থাকতে পারতাম না।গাজীপুরে গিয়ে পালিয়ে থাকতাম। একটার পর একটা মামলা, কোন বিএনপি নেতা ঘরে ঘুমাতে পারতো না। এখন দেশ স্বাধীন, মামলার ভয় নেই, গ্রেফতারের ভয় নাই।  

আরবি/জেডআর

Link copied!