ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্যে আশাবাদী হলেও নির্বাচনের রোড ম্যাপ না থাকায় নিজের অভিমত ব্যক্ত করলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেন বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘একটা জিনিস আমি এখনো আমি ধোঁয়াশাতে, সেটা আমার পরিস্কার হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম যে, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় তিনি একটা রোডম্যাপ দেবেন। সেই রোডম্যাপ আমরা কিন্তু ফর ট্রানজিসেন টু ডেমোক্রেসি এটা আমরা কিন্তু উনার বক্তব্যের মধ্যে পাইনি।
‘রিফর্মসের কথা বলেছেন, সেই রিফর্মসগুলো কোন কোন বিষয়… সেটারও কিছু কিছু তিনি আভাস দিয়েছেন… আমি জানি, সেগুলো এই অল্পসময়ের মধ্যে সম্ভব না। তবে সেটা সম্পর্কে একটা ধারনা থাকলে আরো বেশি করে ধারণা করতে পারতাম ঘটনা আসলে ভালোর দিকে যাচ্ছে। যাই হোক আমাদের প্রত্যাশা ভালোর দিকে যায়… এটা জনগনের প্রত্যাশা।’
কবে নির্বাচন হবে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ উনি সঠিক বলেছেন। অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তো রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, বলে জানান তিনি।
‘আমি আশা করব, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়াটির দিকে যাবেন খুব দ্রুত যাবে এবং তিনি রাজনৈতিকগুলোর সাথে কথা বলবেন। যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চাই বলে, ফখরুল বলেন, আমাদেরকে এখন অত্যন্ত ধরয ধরে, অত্যন্ত সর্তকতার সাথে পা বাড়াতে হবে। এই সরকার এসেছে, এই সরকার অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। সেই কাজ করার সুযোগ তাদেরকে দিতে হবে। এই কথা আমরা বার বার বলছি, যৌক্তিক সময় অবশ্যই তাদেরকে দিতে চাই। নির্বাচন ছাড়া তো সম্ভব নয়… নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু অবাধ হয়, সবাই যেন ভোট দিতে পারে এবং এই নির্বাচনের ফলে এমন একটা অবস্থা তৈরি না হয় যে আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে তাহলে সেটা কখনই জনগন মেনে নেবে না। সেজন্য ধরয ধরে আমরা অপেক্ষা করছি, জনগন অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেটা অবশ্যই একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, সেই যুক্তিক সময়ের মধ্যে অবশ্যই একটা নির্বাচন হবে, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কাজী জাফর আহমদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এই আলোচনা সভা হয়।
‘আমরা পুলিশ স্টেট হতে চাই না’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, পুলিশ স্টেট যাতে কেউ না বানাতে পারে সেই অবস্থা তৈরি করবেন। অত্যন্ত ভালো কথা। আমরা এটাই চাচ্ছি সব সময়… যে আমরা পুলিশ স্টেটে পরিণত হতে চাই না, আমাদেরকে পুলিশ আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবে, পুলিশ প্রতিমুহুর্তে আমাদেরকে বলে দেবে যে, এটা করা যাবে, এটা করা যাবে না অথবা আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে আমাদের থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা-বানিজ্যে করে আমাদের সর্বনাশ করবে…. আমাদের ছেলেদেরকে গুলি করবে… এটা আমরা আর দেখতে চাই না।এটা যদি উনারা করে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে।”
‘‘ তিনি(প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, জাস্টিস টু বি এনসিউর অল এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিংস এনফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস…আমরা এটাই চাচ্ছি, বার বার করে বলছি এই বিচার করতেই হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘ একই সঙ্গে বলছি, আজকে এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, গায়েবী মামলা হয়েছে সেগুলোকে অবিলম্বে তুলে ফেলতে হবে। আমরা পত্রিকায় দেখলাম যে, প্রধান উপদেষ্টার মামলা চলে গেছে… উঠানো হয়েছে, আরেকজন উপদেষ্টার মামলা উঠানো হয়েছে…সাজা ছিলো সেই সাজা বাতিল করা হয়েছে।”
‘‘আমাদের একজন মানুষও নাই… বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, এখানে আমরা যারা বসে আছি যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নাই। আমাদের আশা এই মামলাগুলো ১ লক্ষ ৪৫ হাজার মামলা অবিলম্বে তুলে দিতে হবে।”
পুলিশ রিফর্মের বিষয় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সমর্থন করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরাও এটি চাই। সেদিন আইজিপি বলেছেন, পুলিশকে জনগনের পুলিশ তৈরি করা হবে, এটাকে আর্দশ পুলিশ তৈরি করা হবে। আমরা এটা চাই, খুব দ্রুত চাই।”
‘সচিবালয়ের ঘেরাও ঘটনা অশনিসংকে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গতকাল(রোববার) যে ঘটনা ঘটেছে সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার এবং কিছু লোকজন… পোষাকধারী লোক তারা গোলযোগ সৃষ্টি করে তারা সেখানে সমস্যা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো। ছাত্ররা সেটাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে।”
‘
‘এটা কিন্তু অশনিসংকেত… এটা ভালো লক্ষন নয়।অর্থাৎ যারা পরাজিত তারা এখন আবার বিভিন্নভাবে সেই চক্রান্ত করছে এ বিজয়কে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য। তাই জনগনকে আহ্বান জানাব যে, আপনারা সবাই সর্তক থাকবেন, এই বিষয়গুলোকে কখনো কোনো প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমি দেশের বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যারা সমস্যায় আছেন সব জায়গাতে তাদের কাছে অনুরোধ করব, যখন ফ্যাসিবাদ ছিলো তখন দাঁড়াবার কথা তো চিন্তাই করতে পারতেন না, কথা বলার সুযোগ পেতেন না। এখন সুযোগ এসেছে…সময় দিন নতুন সরকারকে। তারা এই বিষয়গুলো দেখবে।”
‘‘ কিন্তু এভাবে ঘেরাও করে সচিবালয় ঘেরাও করে, বাধ্য করে কোনো কিছু আদায় করা এই মুহর্তে করবেন না। জনগন সেটাকে ভালো চোখে দেখবে ন।”
‘শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমি ছাত্র ভাইদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই।সব সময় ছাত্ররাই সব পরিবর্তনগুলো নিয়ে এসেছে। ’৫২ সাল থেকে শুরু করে ’২৪ সাল পর্যন্ত এবং সেই পরিবর্তনের মূল ধারাটা সেটা তারা সেট করে দিয়েছে।সেজন্য বাংলাদেশের মানুষ সবসময় ছাত্রদের আলাদা চোখে দেখে, সন্মান করে ভালোবাসে, তাদের প্রতি আস্থা তাদের সবসময় থাকে।”
‘‘ একইসঙ্গে আমি একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের স্কুল কলেজ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, অযথা বল প্রয়োগ করে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না যাতে প্রশাসন নষ্ট হয়ে যায়। আমরা দেখলাম যে, কিছু স্কুল কলেজ বাধ্য করছে শিক্ষকদের রিজাইন করে চলে যাওয়ার জন্য। এটার তো ব্যবস্থা আছেই… অভিযোগ করেন অভিযোগ প্রমাণ হলে চলে যাবে। কিন্তু তাকে কাজ করতে দিতে হবে।”
‘তাদের চেহারা দেখতে চাই না’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা এখনো প্রশাসনে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের দেখতে পাচ্ছি যারা এই ফ্যাসীবাদী সরকারকে মদদ দিয়েছে, তাদেরকে সাহায্য করেছে এবং বিভিন্ন হত্যাকান্ডের সাথে তারা জড়িত…. তাদের চেহারা আমরা দেখতে চাই না।”
‘‘ আবারো বলছি, দয়া করে অতি দ্রুত এদেরকে অপসারিত করে যারা দেশপ্রেমিক, যারা কাজ করতে চায়, যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের নিয়ে এসে সেই প্রশাসন চালানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এটার জন্য জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।”
জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের সঞ্চলনায় আলোচনা সভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, প্রেসিডিয়াম সদস্য নবাব আলী আব্বাস খান, মাওলানা রুহুল আমিন, মজিবুর রহমার, সেলিম মাস্টার, হোসেনে আরা, প্রয়াত কাজী জাফরের বড় মেয়ে কাজী জয়া, ভাতিজা কাজী মো. নাহিদ বক্তব্য রাখেন।
আপনার মতামত লিখুন :