ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

হাসিনার আগেই দেশে ছেড়েছেন বেশির ভাগ আ.লীগ নেতা

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ০১:১৫ পিএম

হাসিনার আগেই দেশে ছেড়েছেন বেশির ভাগ আ.লীগ নেতা

ফাইল ছবি

ঢাকা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তার আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে সারাদেশে ডজন-ডজন মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি। হাসিনার দেশ ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় দশকের ক্ষমতাশালী আত্মীয়স্বজনরাও যেন হারিয়ে গেছেন। গুঞ্জন রয়েছে, বেশির ভাগ স্বজন হাসিনার আগেই দেশ ছেড়েছেন। আবার অনেকে দেশেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় হওয়া হাসিনার স্বজনদের মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

এক মাস পরও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

একাধিক সূত্র থেকে জানাযায়, গত সপ্তাহে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন।

এঁদের আগে ৫ আগস্টের পর দেশ ত্যাগ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ (নাসিম) ও আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অনেকে।

যাঁরা পালিয়ে গেছেন বা পালানোর চেষ্টায় আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, সরকার পতনের এত দিন পরও কীভাবে এসব ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালাতে পারছেন। তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে থেকেই দলের মন্ত্রী-এমপি ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা কেউ দেশ ছেড়েছেন, কেউ আছেন আত্মগোপনে চলে যান। জানা গেছে, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শেখ হাসিনার আত্মীয়স্বজনদের বেশির ভাগ সদস্যই এখন আর দেশে নেই। ৫ আগস্টের আগেই তারা দেশ ছেড়ে গেছেন। গত ৫ আগস্ট সামরিক বিমানে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। ওই দিন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া তাদের আত্মীয়স্বজনদের আর কোনো সদস্য দেশে ছিলেন না।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত। সরকারের পতনের সময় তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। দিল্লিতে যাওয়ার পর তার মা এবং খালার সঙ্গে সায়মার সাক্ষাৎ হয়। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ মন্ত্রী, তিনি লন্ডনে বসবাস করা। শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক সরকার পতনের সময় দেশে ছিলেন না। ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও যুক্তরাজ্যে থাকেন।

গত ৩ আগস্ট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনার আত্মীয় সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। শেখ ফজলে নূর তাপসের বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে এ নিয়ে সংগঠনের কারও কাছে তথ্য নেই। যুবলীগের একজন নেতা জানিয়েছেন, ফজলে শামস পরশ আন্দোলন চলাকালে কোনো একসময় তিনি বিদেশে গেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দেশ ছাড়তে পারেনি বলে জানা গেছে। শেখ সেলিমের সন্তানেরাও দেশে লুকিয়ে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে বরিশালে প্রভাবশালী নেতা আবদুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে গেছেন। তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে আছেন।

বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরের ছেলে ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন। তবে তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশ ছাড়তে পারেননি। তিনি দেশেই আত্মগোপনে আছেন। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় আছেন বলে জানা গেছে।

শেখ হাসিনার ভাতিজা মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এবং তার ভাই ফরিদপুর-৪ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এসব মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও তাদের সন্তানেরাও আত্মগোপনে রয়েছেন। ৫ আগস্টের পর তাদের প্রকাশ্য দেখা যায়নি।

জানা গেছে, শেখ পরিবাররে সদস্যদের মধ্যে যারা দেশে আত্মগোপনে তাদের অনেকেই গোপালঞ্জ জেলায় আবার অনেকেই রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাদের আত্মগোপনে থাকতে গোয়েন্দা সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সদস্যদের শেল্টারে রয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে অনেকে ক্যান্টনমেন্টে আশ্রিত অবস্থায় আছেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৫০০ অধিক রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রাণহানির ভয়ে সেনাবাহিনীর আশ্রয় পান। সেনাপ্রধান আশ্রয় নেওয়াদের সংখ্যা বললেও তাদের নাম প্রকাশ করেনি।
 

আরবি/এস

Link copied!