ঢাকা: শেখ হাসিনার ভূতরা এখনো সরকারের সর্বত্র সক্রিয়’ বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দেশের প্রশাসনের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘সাইভার নিরাপত্তা যেটা ডিজিটাল নিরাপত্তা এ্যাক্ট যেটা করেছিলো তারই আপহোল্ড আইন… একই জিনিস। আজকে অন্তবর্তীকালীন সরকার আছেন, যে খাদিজা মেয়েটা মাস্টার ডিগ্রিতে পড়েন সে নাকি্ এখনো কারাগারে তাহলে প্রশাসন কিভাবে চলছে?
‘‘ শুধুমাত্র একটা পোস্ট দেয়ার কারণে একজন ছাত্রী এখনো যদি কারাগারে থাকে তাহলে তো বুঝতে হবে আমরা যেটা বলি, শেখ হাসিনার ভূতরা আজকে আদালতে আছে, আজকে প্রশাসনে আছে, আজকে পুলিশে আছে তারা প্রতি পদে পদে এই সরকারকে ব্যাহত করছে।”
জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ‘আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আমার দেশ পত্রিকার খুলে দেয়ার দা্বিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
‘অতিদ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন’
রিজভী বলেন, ‘‘ ফ্যাসিবাদ আর নাৎসীদের কখনোই রাজনৈতিক ও সামাজিক পুনর্বাসন হতে পারে না। মুসলিনী আবার ফিরে আসেনি ইতালীতে, হিটলার আবার পূনর্বাসিত হয়নি জামার্নীতে। সুতরাং কোনোভাবেই মাফিয়া-নাৎসী-ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন বাংলাদেশে হবে না।”
‘‘একটি নতুন বাংলাদেশ, একটি বৈপ্লবিক বাংলাদেশ, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি আইনের শাসনের বাংলাদেশ,একটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বাংলাদেশ সেই সুন্দর স্বপ্নময় বাংলোদেশ প্রতিষ্ঠা হবে সেই দিকেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তারজন্য অতিশিগগিরই অতি তাড়াতাড়ি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। যেটা প্রয়োজনীয় যে সংস্কার সেই সংস্কার সম্পন্ন করে অতিদ্রুত জনগনের ক্ষমতা জনগনের কাছে দিলে পরেই সেই বৈপ্লবিক কর্মকান্ডগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।”
অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জনগনের সরকারের মতো কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ বিরোধী দলের এতো আত্ম্যত্যাগ, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ওপর এই বিপ্লব রচিত হলো। তাহলে এর টোন এর ভাষা, এর কার্য্ক্রম সব কিছু তো বৈপ্লবিক হবে। আজকে ঘাপটি মেরে থাকা যেসমস্ত শেখ হাসিনার দোসর প্রশাসনে, পুলিশে প্রত্যেকটি জায়গায় তারা বিভ্রান্ত তৈরি করার চেষ্টা করছে।”
‘‘ আপনার পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে.. পুলিশের সামনে মাডার কি করে? তাহলে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ওপর এর দায়িত্ব বর্তায়। চট্টগ্রামের ডিসি মোনাজাত করছে কাদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর এটা কি হয় কি? এই ধরনের সরকার আ
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘বিপ্লবী সরকারের কর্মকান্ড হবে বৈপ্লবিক। আইনের কথা বলছেন…আইন উপদেষ্টা সাহেব নিশ্চয়ই একজন গুনি মানুষ… আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্টজন। কিন্তু বিপ্রবী সরকারের দায়িত্ব তো প্রচলিত কোনো আইনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা নয়।”
‘‘ প্রচলিত আইন ব্যবহার করেছে শেখ হাসিনা। একটা মাফিয়া সিন্ডিকেটের সরকার,একটা দুবৃর্ত্ত নাৎসী সে এই কাজটা করেছে। ফোজদারি আইনে একবছরের বেশি সাজা হলে তাকে কারাগারে যেতে হয়… এই আইন তো এখন মানা হবে কেনো? আইন তো ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না।এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এতো ছাত্র-জনতার এতো যে আত্মদান, এতো রক্ত এখনো গড়িয়ে যাচ্ছে… কিছুক্ষন আগে দেখে আসলাম তাহমিদ এবং মাসুদ রানা কিভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে… কপালে গুলি লেগেছে মাথার পেছন দিক দিয়ে গুলি বেরিয়েছে...তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে সরকার তাদের কেনো পুরনো আইন দেখিয়ে কাজ করবেন?”
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে’ কেনো মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে যেতে হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন রিজভী।
‘তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিলম্বের ষড়যন্ত্র’
রিজভী বলেন, ‘‘এতো দিন হয়ে গেলো দুই মাস বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনি কেনো দেশে আসলেন না? কি আইনি প্রক্রিয়া আছে? এই আইন তো মানবতা বিরোধী আইন, এই আইন স্বার্থ রক্ষা করা হয় মাফিয়াদের, স্বৈরাচারের, খুনীদের…. এই আইন তো একটা নির্বাহী আদেশের একটা খোঁচায় এই আইন পরিবর্তন হতে পারে।”
‘‘ তাহলে কি আপনারা(অন্তবর্তীকালীন সরকার) ভয় পাচ্ছেন? নাকি আপনাদেরকে কেউ নির্দেশ দিচ্ছে কোনো জায়গা থেকে যে আপনারা এর বাইরে যাওয়া যাবে না, এই ভাবে কাজ করবেন….দেশ নায়েক তারেক রহমান যেন ফিরতে না পারে সেই ব্যবস্থার জন্য আপনারা এই কাজগুলো করুন, এগুলো পরিবর্তন করা যাবে না।যেভাবে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো। এই পরিস্থিতি আমরা এই সরকারের কাছ থেকে আশা করতে পারি না।”
তিনি বলেন, ‘‘ এতো আত্মত্যাগের পরে যে সরকার সেই সরকার কেনো শেখ হাসিনার আইনগুলো টেনে টেনে নিয়ে এসে গণতন্ত্রের বিপ্লবী মানুষদেরকে যন্ত্রণা দিচ্ছে এটা গোটা জাতির আজকে জিজ্ঞাসা।”
‘‘ আমরা একটা বিপ্লবী সরকার দেখতে চাই। যে সরকার জনগনের সেন্টিমেন্ট বুঝেই তো কাজ করতে হবে। আমরা শেখ হাসিনার সরকারের মতো সরকার চাই না। চট্টগ্রামের ডিসি মোনাজাত করছেন কাদেরকে নিয়ে? আওয়ামী লীগের যে সমস্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী নমিনেশন জমা দিয়েছেন তাদেরকে নিয়ে।এই ধরনের সরকার চায় না বলেই তো এতো রক্তপাত এতো কিছু হলো… এতো ঘটনা হলো এটা এই সরকারকে বুঝতে হবে।”
জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ‘আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আমার দেশ পত্রিকার খুলে দেয়ার দা্বিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘‘ আমাদের খুব দূঃখ লাগে যে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিপ্লবের পরে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হয়েছে দাবি নিয়ে। আমরা এই সমাবেশ থেকে সব বন্ধ সংবাদপত্রসহ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।খুনি হাসিনা যত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃ্বৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে সেই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”
‘‘এই সরকারের চারপাশে ফ্যাসিবাদের প্রেত্মাতাদের ঘুরে বেড়াতে দেখছি। এই প্রেত্মাতাদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, তাড়িয়ে দিতে হবে। নইলে যেভাবে আমরা রক্ত দিয়েছি, আমরা আবারও ফ্যাসিবাদের দালালদের তাড়ানোর জন্য রাজ পথে নামতে বাধ্য হবো।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি বলেন, ‘‘ কেনো মাহমুদুর রহমানকে জেলে যেতে হলো আইন উপদেষ্টাকে বলতে হবে। মিথ্যা মামলায় মাথায় নিয়ে আমাদের সংগঠনের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ভাইকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হলো… তিনি একবছর ৭ মাস কারাবরণ করেছেন এই মিথ্যা মামলায়… তিনি দেখে যেতে পারেননি পারেননি তার মামলাটি প্রত্যাহার হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে গত ৭ আগস্ট। কোথায় আমাদের সেই
প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হলো?”
‘‘ আপনারা আইন দেখিয়ে সেই ফ্যাসিবাদী দোসরদের ক্ষমতায় রাখবার জন্য ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়েছেন।আমরা বলতে চাই, আপনাদের আমরা সহযোগিতা করতে চেয়েছি। ২০০৯ সালের পর থেকে যতগুলো মিথ্যা মামলা হয়েছে অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহার করুন। আমরা ৪৮ ঘন্টা সময় দিতে চাই, নির্বাহী আদেশে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যতগুলো কালাকানুন আছে সবগুলো বাতিল করতে হবে, বন্ধ গণমাধ্যমগুলো ক্ষতিপুরণ দিয়ে অবিলম্বে প্রচারে নিয়ে আসতে হবে।”
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের(বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএফইউজের সহসভাপতি বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, একেএম মহসিন, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মুরসালীন নোমানী, মহিউদ্দিনসহ দুই ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
আপনার মতামত লিখুন :