ঢাকা রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যেন সরকার দূরত্ব তৈরি না করে: গণতন্ত্র মঞ্চ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৪, ১১:৩২ পিএম

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যেন সরকার দূরত্ব তৈরি না করে: গণতন্ত্র মঞ্চ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেই নির্বাচনে যাওয়ার কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে বলেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। শনিবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে সংলাপের পর সাংবাদিকদের কাছে মঞ্চের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না একথা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘ সংস্কারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়। আমরা স্পষ্ট করে আমাদের মতামত দিয়েছি। আমরা বলেছি, সংস্কার আমাদের…. আমরা একটা সরকার বদলানোর আন্দোলন করছি না, নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি না, সামগ্রিকভাবে আন্দোলন করছি, যাতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র করা যায়।”
‘‘ আবার যাতে ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে, সে কারণে সংস্কার আগে প্রয়োজন।”
তবে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেই নির্বাচনের পথে যেতে হবে উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, যতদূর পর্যন্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সংস্কার করতে পারবো, ততদূর পর্যন্ত আমরা সংস্কার করবো। বাকি যেসব সংস্কার দরকার, তা পরের নির্বাচিত সরকার এসে করবে।’’
জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংলাপ শেষ হওয়ার পরে প্রধান উপদেষ্টা সংলাপে বসেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দের সাথে। জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দেোলন, ভাসানী অনুসারি পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এই গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত।
সংস্কারের কর্মকান্ডকে ‘আমরাসহ সব রাজনৈতিক দল সহযোগিতা করবো’ বলে জানান তিনি।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নিয়মিত বৈঠকের বিষয়টি বিবেচনায় রাখার কথা বলেছেন বলে জানান মান্না।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করবো আমরা। আমরা প্রশাসনের কিছু দুর্বলতা দেখছি, সীমাবদ্ধতা দেখছি। সিভিল পুলিশসহ প্রশাসনে এমন কিছু দেখছি, যা উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো। এই বিষয়গুলো আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। তিনি জানিয়েছেন বিষয়গুলো লক্ষ্য করেছেন।”
গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা প্রয়োজন। একটা কাঠামো তৈরি করা দরকার। জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল হতে পারে। যেখানে অংশীজনেরা বসবেন।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘ দ্রব্যমূল্যের বাজারে ঊর্ধ্বগতির ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। পুরনো সিন্ডিকেট আবার যে নতুন চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে, সেটা নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছি। তারা বলেছেন, চারটা কাজকে অগ্রাধিকার মধ্যে নিয়েছেন। সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে। আমরা দেখতে চাই, মানুষ যেন এর সুফল পায়। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য যাতে বন্ধ হয়।”
সাইফুল হক বলেন, ‘সংস্কার কমিশন বরিবার (৬ অক্টোবর) থেকে কাজ শুরু করবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্বের জায়গা দেখা যাচ্ছে, এটা আমাদের ধারণা। সরকার সংস্কার বা যতগুলো উদ্যোগ বলি– সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা অর্গানিক যোগাযোগের মধ্যে দিয়ে, বোঝাপড়া, সমঝোতার মাধ্যমে সরকার যাতে এগুতে পারে, সংস্কার কমিশন কাজ শেষের পরে কোন কোন কাজগুলো তারা করবেন তা নিয়ে ঐকমত্যের জায়গা আছে। কোনগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ করবে তাও আলাপ আলোচনা করে ঠিক করবো।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দুই দফা সংলাপ হয়, এটি তৃতীয় দফা সংলাপ।
গণতন্ত্র মঞ্চের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মাহমুদুর রহমান মান্না। প্রতিনিধি দলে সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি ছাড়াও ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা আকবর খান, আবুল হাসান রুবেল, আবু ইউসুফ সেলিম, ইমরান ইমন।
পরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোট, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদও সংলাপ করেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!