ঢাকা রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪

‘৫৭ অফিসারকে হত্যার মধ্য দিয়ে জুলুমের রাজত্ব শুরু হয়েছিল’

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৪, ১১:৪৪ পিএম

‘৫৭ অফিসারকে হত্যার মধ্য দিয়ে জুলুমের রাজত্ব শুরু হয়েছিল’

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ২০০৯ সালে বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় ৫৭জন চৌকশ দেশপ্রেমী অফিসারকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে জুলুমের রাজত্ব শুরু হয়েছিল। যার সমাপ্তি হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় বগুড়া ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথিরবক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বৈষম্যহীন ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ দেখতে চাই উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যে, বাংলাদেশে হিংসা হানাহানি এবং প্রতিশোধের রাজনীতির কবর রচনা হবে। শুধু প্রতিশোধের পর প্রতিশোধ? তাহলে এই জাতিকে বাঁচাবে কে কিভাবে? একটা জায়গায় এর পরিসমাপ্তি হওয়া উচিত।

আওয়ামী লীগের নাম না নিয়ে ওই দলটির আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নৈতিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, লোকেরা বলে এরা নাকি আগামী ইলেকশনে আসতে পারে। আমি বলি ভোট তো চাইবে জনগণের কাছে। কোন জনগণের কাছে? গোটা ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যারা হাতে অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুড়েছিল সেই জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার কোন নৈতিক অধিকার তাদের আছে?

তাদের নাম এখন বাংলাদেশের জনগণ শুনতে চায় না। যারা তাদের কথা বলে জাতিকে ভয় দেখায় তাদেরকে বলবো, বিরত থাকুন। জাতিকে বোকা ভাববেন না। জাতি সবার সবকিছু বোঝে। ওই জুজুর ভয় দেখাবেন না। বাংলাদেশের মানুষ যাদের গুলির পরোয়া করে না সেই দুর্ধর্ষ খুনিদেরকে প্রকাশ্যে আসতে দিবে না ইনশাআল্লাহ। আগে তাদের বিচার হবে, তারপর দেখা যাবে তাদের কি হয়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালে বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় ৫৭জন চৌকশ দেশপ্রেমী অফিসারকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে জুলুমের রাজত্ব শুরু হয়েছিল। যার সমাপ্তি হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট।

তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে বলেন, অতীতে আমাদের ওপর যেসব বড় বড় অপরাধ করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার, আমাদের নেতৃবৃন্দকে খুন করেছে, কার্যালয়ে তালা দিয়েছে, আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে, আমাদের প্রতীক কেড়ে নিয়েছে, আমাদের নিষিদ্ধ করেছে- মোটা দাগে যে অপরাধগুলো করেছে তার জন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিব না। কিন্তু তারা যাদেরকে খুন করেছে, গুম করেছে পঙ্গু করেছে মানুষের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে তার প্রত্যেকটার বিচার হওয়া উচিত।

ডা. শফিকুর রহমান জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পর্যায়ের ১১ নেতার ফাঁসি কার্যকরের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমাদের প্রিয় নেতৃবৃন্দের একজনও দেশ থেকে শাস্তির ভয়ে পালানোর চেষ্টা করেননি। এমনকি মীর কাশেম আলী যিনি বিদেশে অবস্থান করছিলেন তিনিও দেশে ফিরে এসেছিলেন।

কারণ তারা জানতেন তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল যে, তারা আদালতে প্রকাশ্যে চিৎকার করে বলতে পারবে যে তারা নির্দোষ। তারা ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন কিন্তু চোখের পানি ফেলেননি। তারা আহাজারি করেননি। তারা হাসতে হাসতে ফাঁসির রশি গলায় পড়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই যে বাংলাদেশে প্রতিটা শিশু জন্ম নেয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন নাগরিকের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবে। আমরা চাই না এই জাতিকে কেউ আর বিভক্ত করুক। আমরা মেজরিটি মাইনরিটি শব্দ শুনতে চাই না। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে তারা সকলেই মর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। ধর্ম যার যার, দলও যার যার, প্রিয় দেশটি আমাদের সবার।

জামায়াতে ইসলামী বগুড়া শহর শাখার আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে সুধি সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, জামায়াতে ইসলামীর জয়পুরহাট জেলা শাখার আমির ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ ও সিরাজগঞ্জ জেলার আমির শাহনূর আলম।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!