ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪

মরতে এসেছি, আমরা মরতে চাই: জিএম কাদের

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম

মরতে এসেছি, আমরা মরতে চাই: জিএম কাদের

ছবি, সংগৃহীত

নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নতুন অন্তর্র্বতী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রশাসনের শীর্ষপদগুলো ব্যাপক রদবদলের সাথে সাথে দেশের রাজনীতিসহ প্রায় সকল খাত সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার কাজগুলোতে ’বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের’ নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। বলাযায় তারই ধারাবাহিকতায়, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাতীয় পার্টিকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার ঘোষণা দেয় সারজিস ও হাসনাত আব্দুল্লাহরা।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে,অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’

তিনি অপর এক পোস্টে লেখেন, ‘রাজু ভাস্কর্য থেকে ৮.৩০ এ মিছিল নিয়ে আমরা বিজয়নগরে মুভ করবো। জাতীয় বেইমানদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’

সারজিস আলম তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন ‘জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের আঘাত করেছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে আমরা বিজয়নগরে যাব ৮.৩০ এ । জাতীয় বেইমানদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’

পরে, ওইদিন সন্ধ্যায় ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’র ব্যানারে একদল লোক একটি মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে তাঁদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আনুমানিক রাত ৮ টায়  জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

জাতীয় পার্টি দাবি করেছে, তাদের ওপর আগে হামলা হয়েছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে যাওয়া ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, তাঁদের ওপর আগে হামলা করেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।

জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার (১ নভেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

জাতীয় পার্টির আন্দোলন, কর্মসূচি চলবে। দেশ ভালো নেই। দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ প্রসঙ্গ তুলেগোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেন, শনিবার (২ নভেম্বর) জাতীয় পার্টি পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ করবে। ‘আমরা মরতে চাই, আমরা মরতে এসেছি, দেখি কত লোক মারতে পারে।

জিএম কাদের বলেন, আল্লাহর প্রটেকশনে আমারা এখনো বেঁচে আছি, অন্য কারও প্রটেকশনে নয়। বিচারের জন্য যদি আল্লাহর সাহায্যের দিকে চেয়ে থাকতে হয় তাহলে দেশ কীভাবে চলবে। আমরা একদিনের ডেমোক্রেসি চাই না। ডেমোক্রেসি হবে সব সময়ের। সরকার হবে, ‘অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’।

আমরা দেশের জনগণের পাশে ছিলাম, সবসময় থাকবো।  পরবর্তী প্রজন্মেও জাতীয় পার্টি জনগণের পাশে থাকবে এবং এগিয়ে যাবে। যে হামলা আমাদের ওপর হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের দুই তারিখের কর্মসূচি চলবে। আমাদের কর্মসূচি ও আন্দোলন সবই চলবে নিয়মতান্ত্রিক এবং অহিংসভাবে, বলে জানান তিনি।

জিএম কাদের বলেন, শেখ হাসিনা দেশটাকে যেভাবে বিভক্তি করেছিলেন এখন একইভাবে বিভক্তি করা হচ্ছে। এখন হাজার হাজার মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। দেশটা এখন ভালো অবস্থায় নেই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্দেশ্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, তারা যা বলে তা-ই সঠিক, বাকি সবাই ভুল। উনারা এখন বিচারকার্যে গিয়েও বাধা দেয়। উনাদের ইচ্ছা হলো আমাদের অফিস ভেঙে দিয়ে গেল। কারও যদি ভুল হয় সেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার অনেক উপায় আছে, তাই বলে তাকে ধ্বংস করে দেবেন!

আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সবসময় সমর্থন জানিয়েছি। তাদের পক্ষে সে সময় অনেক কথা বলেছি, বিবৃতি দিয়েছি। যে কারণে আমার অনেক ক্ষতিও হতে পারতো, তার কিছুর পরোয়া আমরা করিনি। তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় অপবাদ দেওয়া হচ্ছে, বলে দাবি করেন তিনি।

জি এম কাদের বলেন, আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে আটকের পর আমরা মুক্তি দাবি করেছিলাম। ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রতিবাদ করেছিলাম। একইসাথে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছি। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি, আবু সাঈদের শোকার্ত বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিয়েছি।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি একটি জনগণের রাজনৈতিক দল। সারাদেশে আমাদের অবস্থান কিছুটা কম আছে, তবুও আমরা টিকে আছি। চাপে গর্তে ঢুকে গেলেও বারবার জাতীয় পার্টি উঠে দাঁড়ায়, এটাই অনেকের তা সহ্য হয় না। যে কারণে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়। জাতীয় পার্টি সবসময় জনবান্ধব দল ছিল, আছে এবং আগামীতেও থাকবে।

জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন করলেও জাতীয় পার্টি তদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহযোগী ছিল না। জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আওয়ামী সরকারের কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডে আমরা জড়িত ছিলাম না। আমরা আওয়ামী লীগের অপকর্মের প্রতিবাদ করেছি। তাদের অপকর্মের দায় আমাদের নয়।

২০১৪ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ব্ল্যাকমেইল করে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছিল দাবি করে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সবাই আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছিল। ১৯৯০ সাল থেকে আমাদেরকে শেষ করার যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। এখনকার জাতীয় পার্টির নিয়ে যা হচ্ছে তা সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। কিছুদিন ধরে একটা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের দোসর বলে নানা অপ্রচার করছে। আমরা শুরুতে ভেবেছিলাম অন্তর্র্বতী সরকার এলে এটা বন্ধ হয়ে যাবে।

দলের সমাবেশের বিষয়টি টেনে জিএম কাদের আরও জানান, কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কিন্তু, ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি থেকে কোন ভাবেই সরে আসবে না জাতীয় পার্টি। জীবন দিয়ে হলেও আগামীকাল শনিবার মহাসমাবেশ করবে জাতীয় পার্টি।

Link copied!