অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশা-প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্যকালে বিএনপির নেতারা তাদের প্রত্যাশার কথা বলেন। বিকেল আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ আলোচনা সভা চলে। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আলোচনা সভা চলাকালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় থাকার সময় উন্নয়নের কাজের একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখানো হয়। সেইসাথে ৭ নভেম্বর বিপ্লব নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ নভেম্বর একটি দিন নয়, তারিখ নয়, এ দিনে দেশের স্বাধীনতা অস্তিত্ব রক্ষা হয়েছিল। দেশের সিপাহী জনতার বিপ্লবে একটি নতুন বাংলাদেশের উদ্ভব হয়েছিল। সিপাহী -জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে আবির্ভাব ঘটেছিল সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দেশের উন্নয়নের সূচনা বা উদ্ভব করেছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, যখনই বাংলাদেশ আধিপত্যবাদের কবলে পড়ে তখনই সামনে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। ১৭ বছরের আওয়ামী লীগের আধিপত্যের পতন হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তাই আমাদের যে ভবিষ্যৎ, সেটি পার হতে হবে অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টির মধ্য দিয়ে।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। জনগণের সরকার ও শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালকাটা সহ ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ছাত্র জনতা মাধ্যমে ৫ আগষ্ট বিপ্লব হয়নি, এটা হয়েছে অভ্যুত্থান। বিপ্লব হয়েছিল ৭ নভেম্বর, এটি তার ধারাবাহিকতা। নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে প্রতারণা নয়, রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। অন্যথায় মাঠে ছিলাম, থাকবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসটি বিএনপির নয়, এটি এ দেশের জনগণের দিবস। আগে ৭ নভেম্বর এ দিবসে ছুটি ছিল বর্তমান সরকারের কাছে ছুটি ঘোষণা দাবি করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড মাহবুব উল্লাহ বলেন, আমাদের দেশের মাটিতে আর কোন আধিপত্যবাদকে জায়গা দিবো না, দেশের মাটিতে কোন ফ্যাসিস্টকে জায়গা দিবো না। এমন শপথ নিতে হবে আমাদেরকে। কারণ এখনো সংকট শেষ হয়ে যায়নি। জিয়া ছিলেন একজন দুর্নীতি মুক্ত মানুষ। আমাদেরকে কোনভাবে দুর্নীতিতে জায়গা দেয়া যাবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপির ১৭ বছর ধরে তৈরিকৃত যে বিস্ফোরণ, সেটিতে ছাত্ররা কাঠি জ্বলে দিয়েছিল। এর মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে দেয়ার গুরু দায়িত্ব পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যদি সে দায়িত্বে এই সরকার ব্যর্থ হয় তবে বাংলাদেশ আবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেবে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মোহাম্মাদ কামরুল আহসান বলেন, ৭ নভেম্বর কোন দলের দিবস নয়, বাকশালের মাধ্যমে স্বাধীনতার সকল স্বাদ ধূলিসাৎ করেছিল শেখ মুজিব। এর প্রেক্ষাপটের মাধ্যমে ৭ নভেম্বর বিপ্লব। স্বাধীনতার স্বাদ পুনর্জীবিত হয়েছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা লড়াই করেছি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য, কিন্তু এখনো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারি নি। অন্তর্বর্তী সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে আশা করছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, হাসিনা বিদায় হয়ে গেছে, কিন্তু মানুষের সমধিকারের বিএনপির যে যাত্রা তা অব্যাহত রয়েছে। যুগপৎ ও তার বাহিরে যারা আছি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের অধিকার ফিরে দিতে হবে। আমরা নতুন কোন বয়ান শুনতে চাই না, মানুষের মালিকানা ফিরে চাই, দিতে হবে।
আলোচনা সভায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :