ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দেবে জনগণ

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দেবে জনগণ

ছবি, সংগৃহীত

ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। এই বিরুদ্ধে লাখো নেতাকর্মীদের নিয়ে আখাউড়া সীমান্তে সমাবেশ করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। এতে নেতারা ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মধ্যদিয়ে ভারতের আধিপত্যকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।  

নেতারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেয়নি, ভারতের প্রভুত্বও মেনে নেবে না এবং আগামী দিনেও মেনে নেবে না। দেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে তা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কর্মীরা প্রতিহত করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সার্থে ঐক্যবদ্ধ থেকে ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না।

তিনি বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি। ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন আপসহীন থেকে কাজ করে যাবে।

ঢাকা থেকে যাত্রা করে বিএনপির তিন সহযোগি সংগঠনের নেতারা ভৈরতে গিয়ে করেন পথসভা। পথে পথে যুক্ত হয় নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাক্ষনবাড়ীয়া সহ আশপাশের জেলার নেতারা। বেলা দেড়টার দিকে ভৈরবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডে পথসভা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের উদ্দেশে লংমার্চটি এগিয়ে যায়। লংমার্চ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম; স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান; ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। এর আগে ভৈরবের পথসভায় দলীয় নেতারা সকাল ১০টা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সভাস্থলে যোগ দেন। বেশির ভাগ মানুষের মাথায় জাতীয় পতাকা ও হাতে ফেস্টুন ছিল। আর তাঁদের মুখে ভারতবিরোধী স্লোগান।

ঢাকা যাত্রা শুরু করা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের লংমার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছে সন্ধ্যার পর । বিকেল চারটার দিকে লংমার্চের বহর স্থলবন্দর মাঠে পৌছে । আখাউড়া স্থল বন্দরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় লংমার্চ তিন সংগঠনের লংমার্চ।

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননাসহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি করছে বিএনপির তিন সংগঠন। কর্মসূচি ঘিরে স্থলবন্দর এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আখাউড়া স্থলবন্দরে গ্রাম পুলিশ, থানা–পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংগঠন তিনটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে এবং হাতে ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিতে আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থলবন্দরের মাঠের পাশের রাস্তায় গ্রাম পুলিশ ও শুল্ক স্টেশনের প্রধান ফটক থেকে ১০০-১৫০ গজ দূরত্বে ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে জেলা পুলিশ। দুই দেশের যাত্রীদের হেঁটে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টে যেতে হচ্ছে। ইমিগ্রেশনের সামনে বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত ২৮ বাংলাদেশি ও ২৪ ভারতীয় যাত্রী আখাউড়া ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে গেছেন। অন্য দিনের তুলনায় যাত্রীদের পারাপার তুলনামূলক কম। স্থলবন্দর মাঠ থেকে আধা কিলোমিটার আগেই জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লার নেতৃত্বে নেতা–কর্মীসহ সব মানুষের যানবাহন থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে একটি ফাঁকা জায়গায় নেতা–কর্মীদের পাঁচ হাজার যানবাহন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ এম জাবের বিন জব্বার জানিয়েছেন, আখাউড়া স্থলবন্দরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া রিজার্ভেও রাখা হয়েছে বিজিবি সদস্যদের একটি দল।

এর আগে বুধবার সকাল আটটায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল সাতটার পর থেকে বিএনপির তিন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে দেখা যায়। ভারতের আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ শুরুর আগে নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী জড়ো হন। এর আগে লংমার্চের যাত্রা শুরুর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির বলেছেন, রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতা পিন্ডির কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছি, দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য নয়। তিনি বলেন ভারত বাংলাদেশ দখল করতে আসবে আর দেশের মানুষ বসে থাকবে। বিএনপি বসে আমলিক খাবে না কঠোর জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত দেশের মানুশ। নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রোডমার্চের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলন। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন অফিসে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা থেকে আগরতলার উদ্দেশ্যে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল এই রোডমার্চ করছে। রিজভী বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, এই স্বাধীনতা বিক্রি করে দেব? আমরা পিন্ডির কাছে থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য নয়। ভারত রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিচ্ছে। ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ! তিনি বলেন, ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার লোকেরা নিজের কথায় চলুক এটা ভারত চায় না। দিল্লির কথায় চলতে হবে কেন? বাংলাদেশের মানুষের রক্তের তেজ, আত্মশক্তি, বীরত্ব এটা দিল্লির শাসকরা বুঝতে পারেনি।
লংমার্চটি দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পৌঁছায়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা দেড়টার দিকে ভৈরবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডে পথসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। 
বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন আপসহীন থেকে কাজ করে যাবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে আমরা ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দেব। স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ চলবে না আর চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারন সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। ভৈরবে ভারতের উত্তর আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও উস্কানিমুলক অপপ্রচারের প্রতিবাদে ঢাকা টু আখাউড়া (আগরতলা সীমান্ত অভিমুখে) লংমার্চ -এ এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা স্বাধীনতা এনেছি মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য, তাকে বিপন্ন করতে দেব না। 
স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজনে আবার হাতিয়ার তুলে নেব। নয়ন বলেন, আমরা ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র ভেবেছিলাম। কিন্তু আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে তারা হামলা করে, সমপত্তি বিনষ্ট করেছে, আমাদের পতাকা পুড়িয়েছে এ সকল কি বন্ধুত্বের নমুনা প্রশ্ন নুরুল ইসলাম নয়নের। আজকের পর থেকে ভারতের সাথে কোন দ্বীপাক্ষিক আলোচনা হবে না। এখন থেকে তাদের সাথে আলোচনা করতে হলে বহুপাক্ষিক আলোচনা করতে হবে।

আরবি/এস

Link copied!