ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

বিএনপি-জামায়াতের বাগযুদ্ধে তুঙ্গে : কাল সর্বদলীয় বৈঠক

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম

বিএনপি-জামায়াতের বাগযুদ্ধে তুঙ্গে : কাল সর্বদলীয় বৈঠক

ফাইল ছবি

হঠাৎ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দলগুলো তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। বিএনপি দাবি করেছে আগামী জুলাই-আগস্টে জাতীয় নির্বাচনের। অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তা থেকে তৈরি হবে নতুন বাংলাদেশের চার্টার, তার ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে।

 

এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে কাল বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে একটি সর্বদলীয় বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সেখানে অনেক দল নির্বাচনের দাবি তুলতে পারেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

 

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ঐকমত্যের আহ্বানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বিএনপির মতো নির্দিষ্ট মাসের কথা না বললেও আগামী ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন।

 

তারা বলছেন, আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই ২০২৫ সালের পরে যাওয়া ঠিক হবে না। সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ে আগামী নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা।

 

বিলম্ব না করে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। তাই এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসার আহ্বান জানানো হয় দলটির পক্ষ থেকে।

 

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ৫০৫টি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে ১০৫ আসন আনুপাতিক হারে উচ্চকক্ষ, ৩০০ আসন নিম্নকক্ষ ও ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত বলা হয়েছে।

 

এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, আমরা কোটা বিরোধী আন্দোলন করেছিলাম কোনো সংরক্ষিত আসন থাকবে না। তাই নারীদের জন্য সংসদে কোনো সংরক্ষিত আসন চাই না। তাদের জন্য আমরা সাধারণ নির্বাচন চাই।

 

যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ ও ১২ দলীয় জোটের দুজন নেতা বলছেন, নতুন দল গঠনের ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী ভেতরে ভেতরে সহযোগিতা করছে। তারা নির্বাচনি জোট করে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চিন্তা করছে।

 

মিত্রদের পাশাপাশি বিএনপিও এ ধরনের ধারণা করছে বলে ওই দুই নেতা জানান। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা বাগযুদ্ধে জড়িয়েছেন। দুই দিন আগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের সমালোচনা করে বলেছেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত। পাল্টা বিবৃতি দিয়ে এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত। কয়েক বছর ধরে দল দুটির সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল।

 

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে ছিল না জামায়াত। তবে আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে দল দুটির সম্পর্কের টানাপোড়েন কিছুটা কমে আসে। দুই দলই আন্দোলনে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের বড় শক্তি হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছে। সেটিও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে।

 

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্যসচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নতুন বছরে বিরোধ কমিয়ে ঐক্য ধরে রাখার বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত। এ দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের। আমরা আর অনৈক্য চাই না।

 

জানা যায়, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য অপেক্ষা করবে বিএনপি। এরপর সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে কিছু কর্মসূচিও নিতে পারে দলটি। এ ছাড়া মার্চে রোজা হলে মাঠে নামতে সময় গড়াবে আরও ১ মাস। ঈদের পর আন্দোলনে নামতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এক সিনিয়র নেতা। তবে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় না।

 

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে এবং এটি দুর্বল সরকার।

 

তারা মানুষের মধ্যে কোনো আস্থা তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু এ সরকারকে সরিয়ে দিলে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। সেটিও চায় না বিএনপি। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন তাদের।

 

অন্যদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার কার্যক্রম এ সরকারের মাধ্যমেই শেষ করতে চায় বিএনপি। কারণ, এই বিচারের দায়িত্ব এড়ানোর একটা বিষয় রয়েছে। ফলে বিএনপি ধৈর্য ধরবে, আবার নির্বাচনের জন্য চাপ বাড়াবে।

 

১২ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, সেটা দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। সরকার সেটি বুঝতে পারছে না। আমরা নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করব।

আমরা মনে করেছি, একটি মহল সরকারকে ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করলে সংকট বাড়বে বৈ কমবে না।

আরবি/এ

Link copied!