ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

সংবিধান পরিবর্তনের এক্তিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম

সংবিধান পরিবর্তনের এক্তিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তন, রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংবিধানের কোনো ধরনের পরিবর্তনের এক্তিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই বলে মনে করে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো।

অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সাংবিধানিক নাম ও সংবিধানের কোনো ধরনের পরিবর্তনের অপচেষ্টা চালালে দেশে রাজনৈতিক বিরোধ, বিভক্তি, বিভাজন, ধর্মীয় বৈষম্যের নামে উত্তেজনা তীব্রতর হবে এবং দেশ দীর্ঘমেয়াদি গভীর রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে নিপতিত হবে।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সংস্কার ভালো-খারাপ উভয়ই করা যায়। এখন বৈষম্যবিরোধী বলতে আগে একদল লুটপাট করত আর এখন আরেক দল লুটপাট করবে যদি এমন হয়, তবে সেটি লজ্জাজনক। সংস্কারের নামে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও বহুত্ববাদ সুপারিশ করা হয়েছে। যে বহুত্ববাদের কথা বলা হয়েছে, তা সমাজের সব শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না।

আমরা সমাজতন্ত্রের জন্য পাকিস্তানের শাসনামল থেকে লড়াই করে যাচ্ছি। এখান সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক ভাবার সুযোগ নেই। সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়া মানে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ, তাদের রক্ত-আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। নিঃসন্দেহে আমরা এখন সমাজতান্ত্রিক সংবিধান আশা করতে পারি না। কিন্তু, এরই মধ্যে যেটা অর্জন হয়েছে সেখান থেকে পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, একাত্তরে যে ভয়াবহ রূপ দেশের বাংলার মানুষ দেখেছে, তারপর তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এমন একটি দেশ চাই, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। ধর্মের নামে কেউ নিপীড়িত হবে না। একই সঙ্গে ধর্মের নামে কাউকে অতিরিক্ত সুবিধা দিতে গিয়ে অন্য কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হবে না। ফলে, রাষ্ট্রধর্মের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। ধর্ম প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার হিসেবে বিবেচিত হবে। এটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মূল বিষয়। সেই জায়গা থেকে যদি কোনো দেশ সরে যায়, তবে তিক্ততা যে কী ভয়াবহ হতে পারে, তা পাকিস্তানের দিকে তাকালে দেখা যায়। কখনো শিয়া-সুন্নি বিরোধ, কখনো জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ তীব্রতর রূপ লাভ করছে। ফলে আমরা মনে করি, ধর্মনিরপেক্ষতা গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।

সমাজতন্ত্রের প্রশ্ন এসেছিল শোষণ থেকে মুক্তির আশায়। বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলন হয়েছে, তার মূল কারণও কিন্তু শোষণ। একটা দেশে শোষণ থাকলে সেখানে বৈষম্য থাকবে। আর শোষণমুক্ত সমাজের নামই সমাজতান্ত্রিক সমাজ। গোটা পৃথিবীতে যেখানেই মুক্তির লড়াই, সেখানেই শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার লাড়াই। যেখানে স্বাধীনতার লড়াই, সেখানেই গণতন্ত্রের কথা আসে। ফলে ঐতিহাসিক বিপ্লবের ইতিহাস এই সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাতিল করতে চাইছে। মানুষের শান্তি ও স্বস্তি সাংবিধানিকভাবে যতটুকু রক্ষার বিধান ছিল, সেটাও কেড়ে নিতে চাইছে। দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হলে তাদের অধিকার আদায়ের যে সাংবিধানিক অধিকার, এই সংস্কার প্রস্তাবের মাধ্যমে সেটাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এগুলো তারা কেন এবং কোন উদ্দেশ্য করছেন, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে।

বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ও সংবিধানের কোনো ধরনের পরিবর্তনের এক্তিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে উল্লেখ করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ও সংবিধানের কোনো ধরনের পরিবর্তনের অপচেষ্টা চালালে দেশে রাজনৈতিক বিরোধ, বিভক্তি, বিভাজন, উত্তেজনা তীব্রতর হবে এবং দেশ দীর্ঘমেয়াদি গভীর রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে নিপতিত হবে।

জাসদের বিবৃতিতে বলা হয়, চিহ্নিত ও আত্মস্বীকৃত স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে তুষ্ট করতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মীমাংসিত ও ৩০ লাখ শহিদের রক্তে লেখা বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ও সংবিধান পরিবর্তনের অপপ্রয়াস পেয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যমে মীমাংসিত বিষয়সমূহকে অমীমাংসিত করার সব অপপ্রয়াস রুখে দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয় জাসদের বিবৃতিতে।

আরবি/এইচএম

Link copied!