ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

৫ আগস্ট জাতীয় নির্বাচন হলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে: সালাউদ্দিন আহমেদ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম

৫ আগস্ট জাতীয় নির্বাচন হলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে: সালাউদ্দিন আহমেদ

বক্তব্য রাখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ

জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে চাপ সৃষ্টি করতে বিএনপি ‘দ্রুত আন্দোলনের যাবে’ এমন ইঙ্গিত দিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দেশের জনগনের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে দলের এই অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ সরকার মাত্রই সিদ্ধান্তের মধ্যে ভুল করতে পারে… সেটা সকল সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখন অন্তবর্তীকালীন সরকার সকল সিদ্ধান্ত নির্ভূলভাবে নেবে এটা তো সঠিক নয়… ভুল তাদেরও হতে পারে। কিন্তু সেটা সঠিকভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব এদেশের সাংবাদিক সমাজের যেমন আছে, রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক শক্তি ও সামাজিক শক্তিগুলোরও আছে।”

‘‘ সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে চিন্তা করছি যে, সরকারের ভুল শুধরিয়ে সঠিক রাস্তায় এনে গণতান্ত্রিক রাস্তা বিনির্মাণের জন্য এবং একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের পথ পরিস্কার করার জন্য আমরা খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবো… সেটা(পদক্ষেপ) কে আপনারা... সরকার আন্দোলনও বলতে পারেন, সমালোচনাও বলতে পারেন।”

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের বক্তব্য তুলে ধরে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মাঝে মধ্যে বলেন, যে আমরা বেশি বেশি করে যেন সমালোচনা করি যাতে সরকার সঠিক পথে থাকে।”

‘‘ এই সরকারের একটি ভালো গুন আছে তা হচ্ছে, সরকার মাঝে-মধ্যে ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও সমালোচনার মুখে সেই ভুলগুলো শুধরায়, গো ধরে বসে থাকে না। সরকার যখন ভুল সুদরায় তখনই মনে করতে হবে এই সরকার জনগনের সরকার।”

অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সঠিক রাস্তায় রাখতে ‘যথেষ্ট সমালোচনা’র ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ আজকের দিনে প্রশ্ন হচ্ছে যে, আমরা সামনের দিকে কি কি সংস্কার চাই, কিভাবে নির্বাচন চাই, কখন নির্বাচন চাই ইত্যাদি, প্রশ্ন হচ্ছে এই সরকারের সফলতা, ব্যর্থতা, সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তহীনতা।”

‘‘ আমরা যদি এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সফল হতে দিতে চাই, তাহলে সরকারকে গাইড করার জন্য, পরিচালনা করার জন্য আমাদেরকে যথেষ্ট সমালোচনা করতে হবে। এমনকি আমাদেরকে সড়কে আন্দোলনও করতে হতে পারে সরকারকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার জন্য।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জার্ণালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

‘সংস্কার প্রসঙ্গে’

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ নির্বাচন যদি বিলম্বিত করবেন সেই যৌক্তিকতা আপনাদেরকে জনগনের কাছে তুলে ধরতে হবে। ইতিমধ্যে ৬ মাস পার হয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলো রিপোর্ট প্রদান করেছে সরকারের কাছে সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলগুলো, সামাজিক শুক্তিগুলো এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলার কথা… রিপোর্ট প্রদানের পরে প্রায় ১৪/১৫ দিন পার হয়ে গেছে সেই উদ্যোগ অবশ্য এখনো দেখা যায়নি। আমি আশা করি আপনারা(সরকার) যে সমস্ত বিষয়গুলো রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তিগুলো, বিশেষজ্ঞগন ঐক্যমত পোষন করতে পারে সেগুলো আগে চিহ্নিত করুন সংস্কারের মধ্যে।”

‘‘ সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো অত্যন্ত সুন্দর…বুঝলাম। কিন্তু সকল বিষয়গুলো কি এসেছে? অবশ্যই না। আবার কিছু বিষয় কি অতিরিক্ত এসেছে? অবশ্যই হ্যাঁ। আর কিছু বিষয় এসেছে যেগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে না… যে বিষয়গুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারে, সামাজিক কালচারে যায় না সেইগুলো আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। কারণ যারা সংস্কার কমিশনের বসেছেন আপনারাও মানুষ… আপনাদের সকল বক্তব্য রিকমন্ডেশন ১০০% সঠিক এমন কোনো নিশ্চিয়তা নাই… সেজন্য আলোচনার কথা এসেছে।” 

‘আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে’ 

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্নভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছি… কালকেও দেখলাম যে, আওয়ামী লীগ এ দেশে নির্বাচন করতে পারবে না… করতে দেয়া হবে না… নিষিদ্ধ করা হবে। এ বিষয়ে আমরা পরিস্কার বলেছি,বাংলাদেশের জনগন নির্ধারণ করবে। যেই দল ফ্যাসিবাদী চরিত্রে দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য যে দল দায়ী, যে দলের নির্ধারিত সরকার দায়ী…. শেখ হাসিনা অনির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন, তার সিদ্ধান্তে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই দেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং ব্যক্তির সাথে সেই সংগঠনের বিচার করতে হবে।”

‘‘ ব্যক্তির বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্রাইব্যুনাল ও অন্যান্য আদালতে মামলা হয়েছে কিন্ত ‍সংগঠন হিসে্বে বিচার করার প্রভিশন সংবিধানের আর্টিক্যাল ৪৭ আছ… কিন্তু সংগঠনের বিচারের বিষয়ে আমরা তো ততবেশি সোচ্চার নই কেনো?”

তিনি বলেন, ‘‘ আপনরা শুনেছেন, সংগঠন হিসেবে বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে একটা সংশোধনী আনার কথা ছিলো। কিন্তু সেখান থেকে সরকার সরে গেলো। এখন যদি সরকারের অংশ হিসেবে কোনো কোনো উপদেষ্টা বলেন যে, আমরা আওয়ামী লীগের বিচার চাই।”

‘‘ তো বিচার চাওয়ার বিষয়ে আপনারা কিছু করলেন না।আর বিচার করার জন্য আমরা দাবি করছি, আপনারা দাবি করছেন, এদেশের জনগন দাবি করছে ফ্যাসিবাদী শক্তি, গণতন্ত্র হত্যাকারী, গণহত্যাকারী মানবতা বিরোধী অপরাধী যারা তারা এবং সেই সংগঠনের বিচার হোক… বিচারের মাধ্যমে নির্ধারিত হোক… তা হলে জনগন মেনে নেবে।”

ফ্যাসিবাদী বিরোধী জাতীয় ঐক্যে যাতে কোনো বিভেদ সৃষ্টি না হয় সেজন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা গুরত্বপূর্ণ  থাকা উচিত বলে মনে করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

‘নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হলে সাদুবাদ’ 

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ আমি ছাত্র নেতাদের সন্মান করি,তাদের আকাংখাকে সন্মান করি, তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়াসকে স্বাগত জানাই। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার জন্য যদি বিভিন্ন কৌশলের সরকারের শক্তিকে প্রয়োগ করতে হয় সেটা ফ্যাসিবাদকে দোষারোপ করে আপনার কি লাভ হবে?

‘‘ আমরা যদি অতীতের ইতিহাস অনুসরণ করি তাহলে আমরা কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো?” সংবিধানের মৌলিক সংশোধনের বিষয় তুলে ধরে ‘স্বাধীনতার সঙ্গে অন্যকিছু সমকক্ষ করা ঠিক হবে না’ বলে মন্তব্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

সংগঠনের সভাপতি পার্থ সারথি দাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বাছির জামালসহ সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!