বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেছেন, ৫ আগস্টের পর একটি দল/গোষ্ঠী বেসামাল হয়ে পড়েছে। তারা ব্যাংক দখল করছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিজেদের লোক বসাচ্ছে। এভাবে প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজি, দখলবাজি করছে; আর দোষ চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর।
এক সময় তারা বলছে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিলাম; আবার বলছে, আওয়ামী লীগ খুনী। তারা কখন কোন কথা বলছে, তা নিজেরাও জানে না। ওই দলটিকে বলব, আগে নিজেরা স্থির হোন, আস্তে আস্তে এগোন। জনগণের ভালবাসা অর্জন করুন, প্রতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজি-দখলবাজি বন্ধ করুন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক নাগরিক অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে এসব কথা বলেন তিনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য দায়ী আওয়ামী দোসর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ‘তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন’ এর উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
আহমেদ আযম খান বলেন, ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এই অন্তর্বর্তী সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবে, নিত্যপণ্যের দাম কমবে। কিন্তু বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা।
উপদেষ্টাদের বলব, আপনারা এই সরকার এবং সরকার প্রধানকে বিব্রত করবেন না। কারণ, এই সরকার জনগণের সরকার, আমার-আপনার সকলের সরকার। তাই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে, ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে না পারলে, আপনারা জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করুন।
তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, বিএনপির কিছু কিছু নেতাকর্মী চাঁদাবাজি-দখলবাজিতে লিপ্ত। তাদেরকে বলতে চাই, বিএনপি চাঁদাবাজি-দখলবাজিতে বিশ্বাস করে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কেউ চাঁদাবাজি-দখলবাজিসহ অপকর্মে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, তাদেরকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিএনপি এক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে রয়েছে। তারেক রহমানের নির্দেশে ৩৬শে জুলাইয়ের পর দখলমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা সারাদেশে পাহারাদার হিসেবে কাজ করে চলেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে দুর্বল সরকার হচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারা কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবে না; বরং দ্রুত নির্বাচন হলে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিয়ে ফ্যাসিবাদসহ দ্রব্যমূল্যে লাগাম আনবে এবং ১৬ বছরে যারা লুটপাট করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে বিচার করবে। তাই সরকারকে বলব, অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মফিজুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে এবং কৃষক দলের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নাঈমের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, কৃষক দলের সহ-সভাপতি আনম খলিলুর রহমান (ভিপি ইব্রাহীম), যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর বাদল সরদার, তাঁতী দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিএম আনিস, মৎস্যজীবী দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম হোসেন, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বিপিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বিলকিস খন্দকার প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মফিজুর রহমান লিটন বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার বিদায় হলেও বাজারে এখনো আওয়ামী সিন্ডিকেট বহাল রয়েছে। সে কারণে নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। একটি নির্বাচিত সরকারই এই আওয়ামী সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবে।
তাই সরকারকে বলব, দ্রুত নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দিন। আমরা বিশ্বাস করি, যত দ্রুত নির্বাচন হবে, দেশের সংকট তত দ্রুত সমাধান হবে। তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী সিন্ডিকেটে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং তাদের নাম প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আপনার মতামত লিখুন :