কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম)। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসী অবদানের জন্য বাঘা সিদ্দিকী নামে পরিচিত তিনি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, সংসদ নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ শাহেদ।
রূপালী বাংলাদেশ: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অবস্থা এবং দেশ গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা কীভাবে দেখেন?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি স্বৈরতন্ত্র শাসনের অবসান ঘটেছে। এ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ চেয়েছিল একটি স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা। পতনের দু’দিন আগেও ভাবিনি শেখ হাসিনা সরকারের পতন হতে পারে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছে। এখনো অনেকে চাচ্ছেন দেশকে অশান্ত করতে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপ্রাণ চেষ্টা করছেন দেশের উন্নয়নে। তার ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু তিনি প্রত্যাশামতো যেতে পারছেন না।
রূপালী বাংলাদেশ: ৫ আগস্টের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কীভাবে দেখেন?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। তবে পাকিস্তানের বদলে দিল্লির দুঃশাসনের কাছে মাথা নত করার জন্য অবশ্যই নয়। একই সঙ্গে, এটা মনে রাখতে হবে, ভারত মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল। সেই বন্ধু-প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ৫৩ বছর পর এসে তিক্ত সম্পর্ক মোটেও কাম্য নয়। যদিও প্রধান কারণ, ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে না হয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে হয়েছিল। এ কারণে তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে জনগণের সঙ্গে কোনো গোলোযোগ ছিল না। তবে সেই গোলোযোগ পরিকল্পিতভাবে তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উভয় দেশকে আন্তরিক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
রূপালী বাংলাদেশ: আগামী সংসদ নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ কী ভাবছে, একক না জোটবদ্ধ নির্বাচন করবেন আপনারা?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: দেশের সাধারণ মানুষ তাকিয়ে আছে সংসদ নির্বাচনের দিকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়েই একটি রাষ্ট্র সঠিকভাবে চালানো যায়। অর্ধেক সংবিধানিক অর্ধেক অসাংবিধানিক দেশ চলতে পারে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আমরা একক নির্বাচন করব, না জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করব সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তবে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব এটি নিশ্চিত।
রূপালী বাংলাদেশ: বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন নিরপেক্ষ না হওয়ার কোনো সন্দেহ আছে কি না?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কি নাÑ সে বিষয়ে এখনো কোনো সন্দেহ সৃষ্টি হয়নি। যদি কোনো রকম সন্দেহের সৃষ্টি হয় সে বিষয়ে অবশ্যই বলব। বাংলাদেশের জন্মই হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য, ভোটাধিকারের জন্য। পাকিস্তানিরা ভোটের রায় মানেনি বলেই কিন্তু একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, মনে রাখতে হবে।
রূপালী বাংলাদেশ: সংসদ নির্বাচন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কতটা সময় দেওয়া প্রয়োজন?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: কতটা সময় দেওয়া প্রয়োজন সেটি বলতে পারব না। তারা শর্টটাইমে করবেন না কি লং টাইমে করবেনÑ তাদের বিষয়। তবে এ বছর পার করে তারা আরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে চাইলে অবস্থা খারাপ হবে। দেশের আপামর জনগণ সবকিছুর আগে নির্বাচন চায়। নির্বাচন নিয়ে সকোরের টালবাহানা করা ঠিক হবে না
রূপালী বাংলাদেশ: দেশের বর্তমান দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর জন্য বৈষম্যবিরোধীরা সাধুবাদ পাবেন। কিন্তু তার পরবর্তীতে জনগণের যে নাভিশ্বাস উঠেছে দ্রব্যমূল্য কারণে এটা দুর্ভাগ্যজনক। এ কারণে আন্দোলনকারীরা এবং সরকার পদে পদে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। এটা পরিবর্তন না করতে পারলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের এই ক্ষতি দেশের ক্ষতি হবে।
রূপালী বাংলাদেশ: দেশের বড় পরিবর্তনের পর জনগণ যে নিরাপত্তা আশা করেছিল তা পূরণ হয়েছে?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: দেশের নানা স্থানে যেসব রাজনৈতিক খুন, দখলবাজি, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে চলেছে, প্রকৃতপক্ষে সবকিছুতে এই সরকার পিছিয়ে পড়েছে। এটাকে সামাল দিতে না পারলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অধ্যাপক ড. ইউনূসের যে বিশ্বখ্যাত সুনাম সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইসঙ্গে দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ রকম হবে জানলে আমি ওভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তাম না। আমরা চেয়েছিলাম এ দেশ হবে সাধারণ মানুষের। তবে সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। যতদিন বেঁচে থাকব, তাদের মর্যাদার জন্য, তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি লড়াই করব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার জীবনে না হলেও, কোনো একদিন আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
রূপালী বাংলাদেশ: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: আপনাকে এবং রূপালী বাংলাদেশকে ধন্যবাদ।
আপনার মতামত লিখুন :