মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশ চলছে না মন্তব্য করে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বাংলাদেশ এখন যে ষড়যন্ত্রের জালের মধ্যে আটকে গেছে, সেই জাল ছিঁড়ে ফেলতে হলে জনগণের সরকার, নির্বাচিত সরকার খুবই দরকার।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী চালক দলের উদ্যোগে আয়োজিত নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অবিলম্বে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার দাবিতে প্রতিকী অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
দুদু বলেন, বাংলাদেশ হাসিনামুক্ত হওয়ার পর মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল-নির্বিঘ্নে মানুষ বসবাস করবে। লুটেরাদের হাত থেকে দেশ রক্ষা পাবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। প্রশাসন মানুষকে সহায়তা করবে। কিন্তু, গত ৬ মাসে বাংলাদেশ যেভাবে চলেছে, যেভাবে এগোচ্ছে, ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশ চলছে না।
তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থায় যে সিন্ডিকেট শেখ হাসিনার সময় নিয়ন্ত্রণ করতো, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যেভাবে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল, এখনও দ্রব্য-মূল্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় এই অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো, দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করুন। যাতে করে সীমিত আয়ের মানুষ জীবন-যাপন করতে পারে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. ইউনূস এর উদ্দেশ্যে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ড. ইউনূস সাহেব আপনি মানুষের উপকার করার জন্য দেশে এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছেন। আপনার সুনাম আছে। যারা খুব নিপীড়িত মানুষ, অভাবি মানুষ, আপনি তাদের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক বানিয়েছেন।
এখন ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে আছেন। আপনার কাছে বা আপনার সরকারের কাছে দাবি জানানোর কোনো কারণ নেই। কারণ, আপনি নিজের থেকে যদি পদক্ষেপ নিতে না পারেন, তাহলে সেটা দেশ এবং মানুষের জন্য দুঃখজনক ঘটনা হবে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশ এখন যে ষড়যন্ত্রের জালের মধ্যে আটকে গেছে, সেই জাল ছিঁড়ে ফেলতে হবে। সেই জাল ছিঁড়তে হলে, কঠিন এবং কঠোর রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন। আর এই রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য মানুষের সমষ্টিত একটি সরকার দরকার। সেই সরকার যদি আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাহলে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
মানুষ তার পছন্দের দলের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে, কোনোরকম বাঁধা ছাড়া-ই যাতে ভোট দিতে পারে। এটিই হচ্ছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ। কোনো সরকারের পেছনে যদি জনগণ থাকে, দেশবাসী থাকে, তাহলে সেই সরকারের পক্ষে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব এবং সেটি কার্যকর করা সম্ভব।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এই সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছে বটে। কিন্তু, এই সরকারের কাছে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার কারণে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল এখনো এই সরকারকে কাঁধে করে নিয়ে চলছে।
কিন্তু, তারা তাদের কর্মসূচি, আগামী ভবিষ্যৎ নির্ধারণে যদি বারবার হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে, তাহলে এই সমর্থন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এই সমর্থন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। সেজন্য আমি মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব ভালো নির্বাচন করার জন্যে যে সংস্কারগুলো অতি প্রয়োজনীয়, সেই সংস্কারগুলো সম্পন্ন করেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান প্রকাশ্যে বলেছেন—নির্বাচন এবং সংস্কারের ভেতরে কোনো সংঘাত নেই। কিন্তু, সরকারের পক্ষ থেকে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে যে, কোন সংস্কার করলে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া যাবে।
আর বেশি সংস্কার করলে একটু দেরি হবে। কম বেশির ব্যাপার না। সংস্কার কি করবেন সেটাই-তো এখনো স্পষ্ট করেননি। সংস্কার চলমান একটি প্রক্রিয়া। যতদিন পৃথিবী থাকবে, দেশ থাকবে, ততদিন চলতে থাকবে।
তিনি বলেন, সংস্কারের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গেও রাজনৈতিক দলের বিরোধ নেই। এমন একটা চমৎকার পরিস্থিতিতে আমরা কেন দেশকে ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারব না, এটি হচ্ছে মুখ্য বিষয়।
বাংলাদেশের আশেপাশে অনেক শক্তি আছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে। যারা বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে, তারা এখনো সক্রিয়। তারা এখনো খুনের জন্য আপসোস করে না এবং লুটপাটের জন্য লজ্জাবোধ করে না। খুন এবং লুটপাটের জন্য যারা কুণ্ঠিত না, লজ্জিত না, তাদেরকে এখনো রক্ষা করতে হবে এটারতো কোনো অর্থ নেই।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, যারা মানুষ খুন করেছে, তাদেরকে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় তারা আন্দোলনে সক্রিয়কারীদের ওপরেও আক্রমণ করেছে।
কোনো কোনো জায়গায় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর মামলা-মোকদ্দমা করেছে। এটা চলতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারের শুধু সিদ্ধান্ত আসলে হবে না, তাদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন কবিরের সভাপত্বিতে সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খন্দকারের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ, তাঁতি দলের যুগ্ম আহবায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কর্মজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন, চালকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মানিক তালুকদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আক্কাস সওদাগরসহ প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :