দেশের সবচেয়ে আলোচিত পূর্বাঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অনেক দিন ধরেই বাউকুল আপেলকুল, বল সুন্দরী ও দেশীসহ বিভিন্ন কুলের চাষ হচ্ছে। এবার শুরু হয়েছে বল সুন্দরী, আপেল কুলের বাণিজ্যিক আবাদ। এ নতুন দুই জাতের কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও মিলছে বেশ ভালো। ফলে অনেক কৃষকের ভাগ্য খুলে যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রায় ১৯৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৪০৬ মেট্রিকটন হরেক রকমের কুলের আবাদ হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এ বছর প্রায় ১১ কোটি টাকার বড়ই বিক্রির লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে।
কুল চাষে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা, এ উপজেলায় এ বছর ৪০ হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার কুল বিক্রি করা হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।বিজয়নগরে বড়ই চাষে বাম্পার ফলন।এর মধ্যে ফলনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বল সুন্দরী ও আপেল কুলের। এর মধ্যে আপেল কুল দেখতে অনেকটাই ছোট আকারের অস্ট্রেলিয়ান আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদাভ লাল রঙের। আর বল সুন্দরী আকারে একটু বড়। দেখতে সবুজাভ, তবে কোনো কোনোটিতে লালচে আভাও দেখা যায়। স্বাদে ও বেশ মিষ্টি।
কৃষিবিদেরা বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটি উর্বর হওয়ার পাশাপাশি কৃষকেরা বেশি যত্ন নেওয়ায় নতুন দুই জাতের কুলের ভালো ফলন হয়েছে। প্রচলিত আপেল কুল বা বাউকুলগুলোর চেয়ে বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি আপেলকুল এ দুটি আকারে বড় খেতে মিষ্টি ও রসাল অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ ও রোগ প্রতিরোধক এবং উচ্চফলনশীল।
জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা বিজয়নগরকে ফলের রাজ্য বলা হয়। উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় বড়ই চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দর্শনার্থীরা ঘুরতে ও বড়ই নিতে আসেন। এখানকার বড়ই মিষ্টি হওয়াতে চাহিদা রয়েছে অনেক। কুল পাইকারিতে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা আর খুচরা পর্যায়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামের নিয়াজ মোহাম্মদ নিপু জানান, তার ৩টি বাগানে প্রায় ২০০ বল সুন্দুরী কুল গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছেই কুল এসেছে। ইতিমধ্যে ৮০ টাকা কেজি ধরে ৪০০ কেজির উপরে কুল বিক্রি করেছেন। এ বছর ৪ লাখ টাকার বল সুন্দুরী কুল বিক্রি করার আশা করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৯৪ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে।আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশে উদ্ভাবিত বলসুন্দরী ও কাশ্মীরি আপেল কুলের জাত দুটি উচ্চফলনশীল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকের খামারের উৎপাদনে সেটিই যেন প্রমাণিত হয়েছে। ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারে এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কুলের সরবরাহ বেড়েছে। কৃষি বিভাগ কুলচাষিদের সর্বাত্মক সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে পাশে আছে।
আপনার মতামত লিখুন :