বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত কয়েক দশকে জামায়াতে ইসলামী বড় সুবিধা করতে পারেনি, তবে এখন তারা বিশ্বাস করে যে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। তারা আশা করছে যে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা বড় সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমের নানা বাধা সত্ত্বেও, দলটি এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা ৩০০ আসনে সমানভাবে প্রস্তুতি নিতে চাচ্ছে এবং তাদের রাজনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তারা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টির সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে নিজেদের শক্তি দেখাতে চায়। জামায়াত বিশ্বাস করে যে তারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে, যদি তারা জনগণের মন জয় করতে পারে।
দলটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে তাদের প্রচারণা শুরু করেছে, এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছে। ফরিদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দলটি তাদের প্রার্থীদের চূড়ান্ত করেছে এবং ইতিমধ্যেই স্থানীয় এলাকাগুলিতে তাদের কর্মসূচি শুরু করেছে। ফরিদপুরে ৪টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং নেতারা আশাবাদী যে তারা স্থানীয় জনগণের সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হবেন।
যদিও বিএনপির সঙ্গে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বাদানুবাদ চলছে, তবে জামায়াত নেতা এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ দাবি করেছেন যে দলটি সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না। জামায়াত এখনো ঠিক করেনি যে তারা এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, নাকি কোনো জোটের মাধ্যমে। তবে তারা তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে কাজ করছে এবং আশা করছে যে জনগণ তাদের সমর্থন দিবে। দলটি বলছে যে তারা নির্বাচন থেকে বেশি কিছু আশা করছে না, তবে তারা জনমত তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে।
এছাড়া, জামায়াতের নেতারা বিশেষভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের উপর জোর দিয়েছেন, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হলে সরকারের সংস্কার প্রয়োজন। জামায়াতের মতে, যেকোনো নির্বাচন হওয়া আগে সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার। তারা সরকারের বিরুদ্ধে একাধারে ভোটারদের ক্ষোভকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে, এবং একই সঙ্গে জনগণের মাঝে নিজেদের ভাবমূর্তি শক্তিশালী করতে মানবিক ও সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াতের ঢাকা উত্তর শাখার এক নেতা জানিয়েছেন যে, এখন তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনগণের মধ্যে সমর্থন অর্জন করতে চেষ্টা করছে। তারা জনসম্পৃক্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই তাদের প্রতি ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।
[32891]
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা জানাচ্ছেন, তারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনে নিজেদের প্রার্থী নিশ্চিত করেছে, যদিও শেষ পর্যন্ত এককভাবে অথবা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলটি এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি যে তাদের মূল লক্ষ্য আওয়ামী লীগকেই টার্গেট করে ভোট বাক্সে বিপুল ভোট সংগ্রহ করা, তবে তারা দেশের সব ভোটারদের সমর্থন আশা করছে। জামায়াতের নেতাদের মতে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি সঠিকভাবে নেওয়ার জন্য সরকারকে আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করতে হবে, যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। তারা বিশ্বাস করে যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা জরুরি। জামায়াত মনে করে যে তাদের কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতে এক নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তন আসবে। তারা এমন একটি নির্বাচন চায় যা জনগণের জন্য সত্যিই অর্থবহ ও মঙ্গলজনক হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার রূপালী বাংলাদেশকে জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘এক প্ল্যাটফর্মে’ আনার বিষয়ে ভাবছে জামায়াত। সকল ইসলামী দলগুলো এক প্ল্যাটফর্মে আনার জন্য একটি উদ্দ্যেগ নিচ্ছে জামায়াত। সে লক্ষ্যে প্রচেষ্ট্য চলছে। তবে, এখনো নির্বচনের অনেক সময় বাকি। সিচুয়েশন আরো অনেক মেচুয়ুর (পরিপক্ক) হবে, নির্বাচন নিয়ে আরো অনেক মেরুকরণ হবে, কয়টা দল সমোঝতায় যাবে, এককভাবে যাবে আরো পরে সেগুলো ক্লিয়ার হওয়া যাবে। এখন শুধু জামায়াত ইসলাম নয় কোন দলই সঠিকভাবে বলতে পারবে না কিভাবে তারা নির্বাচনে যাবে। তবে আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে জামায়াত।