দেশে ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল ঘিরে আলোচনা এখন তুঙ্গে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই হবে নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ। জুলাই গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি মিলে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। একইসঙ্গে দলের নাম ও প্রতীক নির্ধারণে সর্বস্তরের মানুষের মতামত সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠন দুটি। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে জনগণের মতামত গ্রহণের কর্মসূচি।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্যে দলের নাম ও প্রতীকসহ দেশের সাধারণ নাগরিকদের থেকে মতামত গ্রহণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ কর্মসূচির মাধ্যমে অনলাইন এবং অফলাইনে অন্তত প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত সংগ্রহ করতে চায় তারা। এমনকি নাগরিকদের সেই মতামতের আলোকে এ মাসের মধ্যেই দল গঠনের চূড়ান্ত ঘোষণাও দিতে চায় সংগঠন দুটি।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা শিগগিরই নতুন দলের ঘোষণা নিয়ে আসতে চাই। এই নতুন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে জনগণ কী প্রত্যাশা করে সে সম্পর্কে সক্রিয়ভাবে জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ করতে চাই। দেশের ভবিষ্যতের মূল অগ্রাধিকারগুলো নির্ধারণ করতে আমরা দেশব্যাপী জনমত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এ মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অন্তত এক লাখেরও বেশি মানুষের মতামত সংগ্রহ করা। নতুন দলের জন্য নাম, প্রতীক এবং নানা বিষয়ে প্রস্তাবের জন্য জনগণকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। আপনি কেমন দল চান, আমরা তা জানতে চাই এবং সে আদলেই দলটি গড়তে চাই। আমরা মনে করি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ, যেখানে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য সাধারণ জনগণের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
হাসনাত বলেন, নতুন দল গঠন হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি উভয়ই জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের রাজনৈতিক দল গড়ে তুলার জন্য দুটি সংগঠন কাজ করবে। আমরা অনলাইনে এবং অফলাইনে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করব। পরিবর্তন কখনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসগুলোতে ঘটে না। এ কারণেই আমরা মাঠে আছি, কৃষকদের সঙ্গে আছি। আমরা রিকশাচালকদের কথা শুনব, পোশাক শ্রমিকদের কথাও শুনব। এ দল ওপর থেকে নয়, জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসবে।আমরা পুরো ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে শুধু হাসিনা এবং গণভবনের পতন ঘটাতে পেরেছি। কিন্তু গণভবনের সঙ্গে রাষ্ট্র উপাদানের অন্যান্য যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলোর বিলোপ ঘটাতে পারিনি এবং এই ভূখণ্ডের মানুষের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারিনি।
তিনি বলেন, এই ভূখণ্ডের মানুষ ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আমলে, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ এর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সবসময় একটি জুলুম এবং শোষণহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা মানুষ ব্যক্ত করেছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আমাদের বিদ্যমান যে রাজনৈতিক কাঠামো এবং দলগুলো রয়েছে, তারা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একইসঙ্গে তারা গণমানুষের এই গণ-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে প্রত্যাশা জানতে জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ এবং অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশব্যাপী জনমত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানান হাসনাত আবদুল্লাহ।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এটি আমাদের দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দল কর্তৃক জনমত গ্রহণের উদ্দেশ্যে গৃহীত সবচেয়ে বড় পরামর্শমূলক প্রচেষ্টা। আমরা শুধু একটি দল শুরু করছি না, আমরা এমন একটি আন্দোলন শুরু করছি যেখানে একজন পোশাক শ্রমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিকের তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন নীতিগুলো গঠনে মতামত রয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মুখে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছি। দেশ থেকে আমরা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতন ঘটাতে পারলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদের বিলোপ আমরা ঘটাতে পারিনি। আমরা মনে করছি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদানে পূর্বের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো বারবার ব্যর্থ হয়েছে।
দেশব্যাপী জনমত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরুর সাড়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক (দপ্তর সেল) জাহিদ আহসান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দেশব্যাপী জনমত গ্রহণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মাত্র দুই ঘন্টায় অন-লাইন ও অফ-লাইনে ৫০ হাজারের বেশি মতামত এসেছে।
আপনার মতামত লিখুন :