ফ্যাসিস্ট বিদায় নিলেও ফ্যাসিজম শেষ হয়নি

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৮:০৫ পিএম

ফ্যাসিস্ট বিদায় নিলেও ফ্যাসিজম শেষ হয়নি

ফাইল ছবি

দেশে চলমান চাঁদাবাজি, খুন, অপকর্ম, দখল বাণিজ্যের নেপথ্যে কারা। আওয়ামী শাসনামল শেষ হলেও শেষ হয়নি সামাজিক অস্থিরতা। জনগণের আশা কতটুকু পূরণ হলো। জামায়াত অমুসলিমদের নিয়ে কী ভাবছে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘এক প্ল্যাটফর্মে’ আনার বিষয়ে তাদের ভাবনা। সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তী সরকার, নাকি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় জামায়াত। এসব নানান বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার কথা বলেছেন রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ শাহেদ

রূপালী বাংলাদেশ: আওয়ামী শাসনামল শেষ হলেও শেষ হয়নি সামাজিক অস্থিরতা, চাঁদাবাজি, খুনসহ অপকর্ম। কীভাবে দেখছে বিষয়গুলো জামায়াত? জনগণের আশা কতটুকু পূরণ হলো?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতন হয়েছে। ফ্যাসিস্ট বিদায় নিলেও ফ্যাসিজম শেষ হয়নি। কর্তৃত্ববাদী, চাঁদাবাজি-মাস্তানি যারা করত, ব্যক্তি চলে গেলেও তার প্রভাব রয়ে গেছে। জ্বিন যেমন চলে গেলেও তার আছর থাকে, ফ্যাসিস্টের দোসরদের ওপর তেমন আসর রয়ে গেছে। তারাই এসব অপকর্মে যুক্ত এবং দেশকে অস্থির করতে অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে।  
জনগণের কোনো আশা পূরণ হয়নি তা বলা যাবে না। নিশ্চয় তাদের অনেকটা আশা পূরণ হয়েছে। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে।  যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিল, তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে। তেমনিভাবে জনগণকেও দায়িত্ব নিতে হবে সুন্দরভাবে দেশ এবং জাতিকে এগিয়ে নিতে।

রূপালী বাংলাদেশ: জামায়াত অমুসলিমদের নিয়ে কী ধরনের কাজ করছে?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: জামায়াতে ইসলামী অমুসলিমদের নিয়ে সেবামূলক কাজ করে। যেসব অমুসলিম জামায়াতে ইসলামীতে আসতে চাচ্ছে, আমরা তাদের স্বাগত জানাই। একই সাথে জামায়াতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যারা নিরাপদ মনে করে, সেখানে তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হলে আমরা কমিটি দিচ্ছি। এটা জামায়াতের কোনো শাখা নয়, এটা অমুসলিমদের নিয়ে কমিটি করা হচ্ছে।

রূপালী বাংলাদেশ: আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সব ইসলামী দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ৩০০ আসনে প্রার্থীর দেওয়ার কথা ভাবছে কি?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘এক প্ল্যাটফর্মে’ আনার বিষয়ে ভাবছে জামায়াত। ইসলামি দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার জন্য একটি উদ্যোগ নিচ্ছে জামায়াত। সে লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চলছে।  তবে এখনো নির্বাচনের অনেক সময় বাকি। সিচুয়েশন আরও অনেক পরিপক্ব হবে, নির্বাচন নিয়ে আরও অনেক মেরুকরণ হবে, কয়টা দল সমঝোতায় যাবে, এককভাবে যাবে আরও পরে সেগুলো ক্লিয়ার হওয়া যাবে। এখন শুধু জামায়াতে ইসলামি নয়, কোনো দলই সঠিকভাবে বলতে পারবে না কীভাবে তারা নির্বাচনে যাবে।

রূপালী বাংলাদেশ: প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে কেন চান? নাকি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ভরসা রখতে পারছেন না?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সেটা দলীয় মূলনীতিও। নির্বাচন অবশ্যই শিগগির ও দ্রুত সময়ের মধ্যে হতে হবে। তবে সেটা অবশ্যই মৌলিক কিছু সংস্কারের পর। সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের আয়োজন ত্রুটিপূর্ণ হবে। নিরপক্ষেতার জায়গাতে এখনো আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি না। আমাদের বর্তমান সরকারকে আরও দেখার সময় রয়েছে। যেহেতু বর্তমান সরকার এখনো রজনৈতিক নয়, সুতরাং এটাও একটা অরজনৈতিক সরকারের ফর্মেই আছে। তবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে তারা কেয়ারটেকার সরকারের দায়িত্ব পালন করবে কিনা সেটি সময়ের ভিত্তিতে বলে দেওয়া যাবে। এখনি আমরা এই সরকারের উপর ভরসা হারাচ্ছি না বা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছি না।

রূপালী বাংলাদেশ: আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা এবং তাদের হরতালসহ কর্মসূচি কীভাবে দেখছে জামায়াত?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি সম্ভাব্য সময়সীমার কথা জানিয়েছেন। এরপরই নানা প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না। তাদের অংশগ্রহণে সম্ভাবনা আমরা দেখছি না। একই সাথে, তাদের হরতালসহ সব কর্মসূচি হলো ‘হাওয়া’। হাওয়ায় কিছু চলছে। ৪-৫ জন মানুষ ব্যানার নিয়ে ডানে-বামে তাকিয়ে একটি ঝটিকা মিছিল করছে। দীর্ঘ সময় তারা ক্ষমতায় ছিল, সন্ত্রাস, লুটপাট-চাঁদাবাজিসহ নানা উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছে। তাদের সেই বিশাল অর্থ ব্যবহার করে যেমন চক্রান্ত করছে, একই সাথে কিছু মানুষ তারা সৃষ্টি করেছে, যাদেরকে অর্থ দিয়ে কাজে লাগাচ্ছে। এটা আওয়ামী লীগের বেঁচে থাকার চেষ্টা; এটার জন্য জামায়াতে ইসলামী চিন্তিত নয়। আওয়ামী লীগ যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তার জন্য দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।  

রূপালী বাংলাদেশ: নানা ইস্যুতে যে আন্দোলন অবরোধ রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে, তাতে কি পতিত শক্তির কারসাজিই শুধু দেখেন না বর্তমান সরকারের দুর্বলতা রয়েছে?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: দাবি আদায়ের জন্য রীতিমতো ময়দানে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। সরকারি-বেসরকারি, ব্যক্তিগত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সব দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন হচ্ছে রাজপথসহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে। আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের বার্তা অনেকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তবে আন্দোলনের কারণে নগরবাসী তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছে। এসব আন্দোলন দমন করতে না পারায় সরকারের দুর্বলতা কিছুটা রয়েছে। তবে এখানে আওয়ামী লীগের দোসরদের ষড়যন্ত্রই বেশি। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নির্বাচনকে দেরি করতে, সরকারকে দুনিয়ার চোখে ব্যর্থ প্রমাণ করতেই পতিত আওয়ামী লীগের দোসরসহ বাইরের অনেক এজেন্সি কাজ করছে। একই সাথে, প্রশাসনের ভেতর এখনো অনেক আওয়ামী লীগের দোসর রয়েছে। তারা তো তাদের অ্যাজেন্ডা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে; কারণ তারা এই সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চায়। সুতরাং বলাই যায়, এই সরকারের যে ব্যর্থতা আছে, তার থেকে ষড়যন্ত্র অনেক বেশি।

রূপালী বাংলাদেশ: ছাত্রশিবিরের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুসলমানের অবস্থান নিয়ে যে আর্টিকল জুড়ে সমালোচনা চলছে, এই ইস্যুতে জামায়াতের অবস্থান কী?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: ছাত্রশিবিরের যে একটি বুলেটিন আছে ‘ছাত্র সংবাদ’, সেখানে অন্য একটি লোক একটি আর্টিকল লিখেছিল। পরে এ বিষয়ে শিবির দুঃখ প্রকাশ করেছে, এটি প্রত্যাহারও করে নিয়েছে তারা। এটা অবশ্যই লেখক ভুল করেছে। আমরা এটাকে ভুলই মনে করি। যেকোনো বড় বড় পত্রিকায় এমন ভুল থাকতে পারে। তবে শিবিরের এটা উচিত হয়নি। শিবিরের উচিত ছিল আরও সচেতন থাকা। যারা সম্পাদনা করেছে, তাদেরও আরো সচেতন থাকা উচিত ছিল বলে মনে করি।  


রূপালী বাংলাদেশ: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার: আপনাকে এবং রূপালী বাংলাদেশকে ধন্যবাদ।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!