নতুন দল আসছে বুধবার, নেতৃত্বে এক ঝাঁক জামায়াতের ছাত্র

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম

নতুন দল আসছে বুধবার, নেতৃত্বে এক ঝাঁক জামায়াতের ছাত্র

ছবি: সংগৃহীত

পরিকল্পনা ঠিক থাকলে আগামী বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করতে চলেছেন।

মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নতুন এই দলের হাল ধরার কথা তথ্য ও সম্প্রচার-সহ বেশ কয়েকটি দফতরের দায়িত্বে থাকা ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলামের। তার আগে দু‍‍`টি ঘটনা নজর কেড়েছে।


প্রথমত, দু‍‍`ভাবে ভাগ হয়ে যাওয়া কোটা-বিরোধী ছাত্ররা টানা আলোচনার পরে নতুন দলের বিভিন্ন পদে যে সব নেতাদের নাম চূড়ান্ত করেছেন, তাদের অনেকেই জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা।

দ্বিতীয়ত, এই দল গঠনের আগেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু মাঝারি পর্যায়ের সমন্বয়ক একটি নতুন ছাত্র সংগঠনও তৈরি করছেন। কালই আত্মপ্রকাশ করতে পারে নতুন এই ছাত্র সংগঠন। তবে নতুন ছাত্র সংগঠনটি নতুন ওই দলটির শাখা হবে কি না, তা এখনই বলতে পারছেন না নেতারা।

রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা গোড়া থেকেই বলে আসছেন, স্বাধীনতা আন্দোলন বিরোধিতার কলঙ্ক নিজেদের মুখ থেকে কিছুতেই তুলতে না-পেরে জামায়াতে ইসলামীই পেছন থেকে কোটা-বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিয়ে আনকোরা দলটি তৈরি করছে।

কারণ, এখন নির্বাচন হলে সাংগঠনিক শক্তির বিচারে বহু যোজন এগিয়ে থাকা বিএনপি অনায়াসে ক্ষমতা দখল করবে। তাদের ঠেকাতে অন্য ইসলামি দলগুলিকে নিয়ে জোট গড়ার চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারেনি জামায়াত। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রদের নতুন দলটির আর যাই হোক, স্বাধীনতা-বিরোধিতার কলঙ্কটি থাকবে না।

বিএনপির শাসন মানুষ আগে দেখেছে। এ বারে তাঁরা নতুন দলকে সুযোগ দিতে পারেন। যুদ্ধাপরাধ আদালতে গণহত্যায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল হকের প্রাণদণ্ড হলেও তা কার্যকর হয়নি। তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে মঙ্গলবার ইউনূসের দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছে জামায়াত।

যদিও নতুন দলের হবু নেতৃত্ব জামায়াত-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ মানছেন না। জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একটি ‘সামাজিক সংগঠন‍‍` গোটা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে নতুন দলের শাখা কমিটি তৈরি করছে।

এই কমিটির নেতা নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারির দাবি, নতুন দল ডানপন্থা বা বামপন্থা— কোনও দিকেই ঝুঁকবে না। সাম্য, ন্যায় ও দেশপ্রেম হবে স্লোগান। তবে এই নাগরিক কমিটিতে রয়েছে এক ঝাঁক জামায়াত-অনুগত ছাত্রনেতা। নতুন দলে এঁদের দায়িত্বশীল পদ দেওয়ার জন্য নাগরিক কমিটির নেতৃত্ব বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তার পরে একটা সমঝোতাও হয়েছে।

সেই সমঝোতায় আপাতত দলের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে কমিটির বাইরের নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আব্দুল হান্নান মাসউদ থাকছেন। নাহিদ হতে পারেন দলের আহ্বায়ক, মুখপাত্র হাসনাত, মুখ্য সংগঠক সারজিস। সদস্যসচিব হতে পারেন নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। কিন্তু দলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আসতে পারেন আলী আহসান জোনায়েদ, যিনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রাক্তন সভাপতি। আর এক ছাত্র শিবির নেতা আরেফিন মহম্মদ হিজবুল্লা জুলাই আন্দোলনে শিবিরের প্রধান ভূমিকা থাকার দাবি করে, এই সংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে আনার দাবি জানাচ্ছিলেন। হিজবুল্লা ছাড়াও এক ঝাঁক জামায়াত-অনুগত নেতা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন।

ছাত্র নেতৃত্ব তাঁদের আন্দোলন ও দল তৈরিতে ছাত্র শিবিরের নেতাদের ভূমিকা স্বীকার করলেও বলছেন, এঁরা সবাই ওই দলের প্রাক্তন নেতা। রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা বলছেন, একবার জামায়াতে নাম লেখালে মৃত্যু ছাড়া বিচ্ছিন্ন হওয়া যায় না। সুতরাং ধরে নেওয়া যায়, শিবির নেতারা জামায়াতের নির্দেশেই নতুন দায়িত্ব পালন করছেন। (প্রতিবেদনটি ২২শে ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকায় ছাপা হয়েছে)

আবু/এস

Link copied!