শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দুর্বার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)। তরুণদের রাজনৈতিক দলটির আহ্বায়ক পদে মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে প্রধান সমন্বয়কারী, হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক ও সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ বৈঠক হয়। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল চারজন নেতা দলের নাম ও যেসব পদে নেতৃত্ব চূড়ান্ত হয়েছে, সেগুলো নিশ্চিত করেছেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় এসব পদে নেতৃত্ব গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আজ শুক্রবার দুপুর ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তরুণদের এই নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হবে বলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। আজই দলের শীর্ষ পদে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। সেই সময় উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন মো. নাহিদ ইসলামও। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি পদত্যাগ করেন।
কার্যক্রমে ফিরবে জাতীয় নাগরিক কমিটি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর পূর্ণ উদ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটি তার কার্যক্রমে ফিরবে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মিরাজ মিয়ার পাঠানো এক বার্তায় এ কথা জানানো হয়।
গত বুধবার জাতীয় নাগরিক কমিটির ১১তম সাধারণ সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো স্পষ্ট করতেই বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানানো হয়। বার্তায় বলা হয়, ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় সদস্যদের উপস্থিতিতে ১১তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়- ১. আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেলসমূহ ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি, জলবায়ু, কূটনীতি, দপ্তর, সোশ্যাল মিডিয়াবিষয়ক যে সেলগুলো করা হয়েছিল, সেগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
২. আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক এর পাশাপাশি ‘যুগ্ম’ ও ‘সহ’ যে পদগুলো ছিল (যেমন- যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম সদস্য সচিব, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক, সহ-মুখপাত্র ইত্যাদি) সেগুলোও বিলুপ্ত করা হয়েছে। তা ছাড়াও, জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ৩৪ সদস্যের যে নির্বাহী কমিটি এবং কমিটিতে নতুন সদস্য নেওয়ার জন্য যে সার্চ কমিটি ছিল সেগুলোও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
কারণ এই পদগুলোতে থাকা অনেক সদস্য আসন্ন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে যাচ্ছেন। তাই ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল গঠন পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বর্তমান আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।
বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের দায়িত্ব নতুনদের কাছে হস্তান্তর করবেন। নতুন নেতৃত্বরাই পরবর্তীতে নির্বাহী কমিটিতে কারা থাকবেন, সেল ও সম্পাদকগুলোতে কারা থাকবেন- এসব বিষয়ে তাদের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেবেন। দলে যোগ দিচ্ছেন না এমন সদস্যদের সদস্যপদ বহাল থাকবে।
৩. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ নতুন দল আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে। দল গঠনের পর থেকে জানাক সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না। এছাড়া, আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের স্বার্থে জাতীয় নাগরিক কমিটি সবসময় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে।