রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডস্থ বিসিএস প্রশাসন ভবনে ‘বোমা হামলা’ হয়েছে, এমন একটি বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। তবে এই বিবৃতিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনেকেই বলছেন,যে নিছক একটি ‘এসি বিস্ফোরণের’ঘটনা, যাকে বিএনপি ‘বোমা হামলা’ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি এমন বিবৃতি না দিয়ে এই ঘটনা জানতই না যে ঢাকায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ এই বিবৃতি দেয়াকে বিএনপির রাজনৈতিক ভুল সিন্ধান্ত বলেও মন্তব্য করছেন। তবে অনেকেই আবার বিএনপির বিবৃতির প্রসংশা করেছেন।
শনিবার (১ মার্চ) বেলা ১২.১৭ মিনিটে ওই বিবৃতিটি পাঠায় বিএনপির মিডিয়া সেল। এই বিবৃতিতে ‘বোমা হামলার’ কথা উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবৃতির শিরোনাম, ‘গত পরশু রাতে নিউ ইস্কাটন রোডস্থ বিসিএস প্রশাসন কল্যাণ সমিতির ভবনে দুস্কৃতিকারিদের দ্বারা সংঘটিত কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক বোমা হামলায় একজন নিহত ও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ন্যাক্কারজনক হামলা ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।’
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিসিএস প্রশাসনের কল্যাণ সমিতিতে এই ধরণের বোমা হামলার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। এ ধরণের হামলা প্রমাণ করে যে, দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কত অবনতি ঘটেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুস্কৃতিকারিরা আবারো দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে ‘
‘এ ধরণের হামলা এবং হতাহতের ঘটনা সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ। এসব দুস্কৃতিকারিদের কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো-অতিদ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দল, মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে বোমা হামলায় হতাহতের শোকার্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিবৃতিটি পাঠান বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক অ্যাড. মো. তাইফুল ইসলাম টিপু।
তবে ওই বিবৃতি গণমাধ্যমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়। আসে নানা মন্তব্য। বিএনপির মিডিয়া সেলের অফিসিয়াল পেইজে প্রকাশিত ওই বিবৃতিটি শেয়ার করে প্রদীপ কুমার নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, ‘স্বাধীনতার ঠেলায় দেশের গণমাধ্যম এত বড় ঘটনাও চেপে গেছে!’
সাংবাদিক সানাউল্লাহ হক সানী ফেসবুকে লিখেন, ‘ঘটনা এসি বিস্ফোরণের। কিন্তু বিএনপি প্রতিবাদ জানিয়েছে বোমা হামলার। প্রায় সকল মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় নিউজ হয়েছে। প্রতিবাদ জানানোর অনেক কিছু রয়েছে, কিন্তু এভাবে ভুল তথ্য দিয়ে কারা মিসগাইড করল কে জানে!’
মুহাম্মাদ সায়েদ সুমন নামের একজন লিখেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিব আজকে সত্যি সত্যি ভয়ঙ্কর ভুল রাজনীতি করছে। ছাত্রদল, যুবদল,এবং জাতীয়তাবাদী সকল শক্তিকে বলবো আপনার মহাসচিবের এই বিবৃতির বিরুদ্ধে নিন্দা জানান। সকল গণমাধ্যমে এসেছে উল্লেখিত ঘটনাটি ছিলো এসি বিস্ফোরণের ঘটনা। অথচ ফখরুল সাহেব এটিকে বোমা হামলা বলে বিবৃতি দিয়ে বসলেন। আওয়ামীলীগ এইভাবে জঙ্গি নাটক করে করে দেশটাকে শেষ করে দিয়েছিলো। নির্বাচন দ্রুত চাইতেছেন এটাতে আমি খুব বেশি সমস্যা দেখিনা। একেক দলের রাজনীতি একেক রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মিথ্যা বোমা হামলার কথা বলে দেশটাকে অস্থিতিশীল করবেন না।’
ভাষানী ফারুক নামের একজন লিখেন, ‘এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে দুইদিন আগে। দুইদিন পরে সেই ঘটনাকে বোমা হামলা বলে নিন্দা জানায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারপর আওয়ামী পত্রিকা সেইটারে নিউজ বানায়। ছড়ায় ছাত্রলীগের পেইজ। কোথাকার ডট কোথায় গিয়ে মেলে কে জানে? এসি বিস্ফোরণের ঘটনা বোমা হামলা বলে নিন্দা জানালে কারা খুশি হয় মির্জা সাব? রুমিন ফারহানা কালকে কইলো নির্বাচিত সরকার ছাড়া আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। এখন নাকি ঢাকা শহরে সন্ধ্যার পরে মানুষ বের হতে ভয় পায়। সংঘবদ্ধভাবে কারা ছড়াচ্ছে এইসব? আইনশৃঙ্খলা অবনতি দেখালে লাভ কাদের? শ্লোগান দেন সবার আগে দেশ। তো দেশের ব্যাপারে কোনটা নেগেটিভ আর কোনটা পজিটিভ বোঝেন না? সেলুকাস।’
ওবাদুর রহমান সোহাান নামের একজন লিখেন, ‘ইস্কাটনে বিসিএস প্রশাসন কল্যান সমিতিতে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা একজন নিহত হয়েছে। কিন্তু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বলেছে সেখানে বো*মা হামলা হয়েছে। দেশের বড় বড় মিডিয়াও দেখছি ফলাও করে প্রচার করতেছে। কথা হচ্ছে, দেশর সবচেয়ে বড় একটা দলের নেতার নামে বিবৃতিতে এতবড় একটা অসঙ্গতি কিভাবে হতে পারে। সামান্য ফ্যাক্টচেকও কি করা সময় সুযোগ হয় না? ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে এভাবে মিসগাইডেড করা হল কেন।’
মাসুদ রায়হান পলাশ নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী ফেসবুকে লিখেন, ‘ফায়ার সার্ভিসে কল দিলাম। সেখানকার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ আমাকে বললেন, রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশনের প্রশাসন ভবনের পঞ্চম তলায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে এসিতে আগুন লাগে। তারপর তা বিস্ফোরিত হয়। এরপর কল দিলাম হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামানকে। তিনি বললেন, প্রশাসন ভবনে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই হচ্ছে মূল ঘটনা। ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। মূলধারার গণমাধ্যমগুলোও এটাকে এসি বিস্ফোরণ বলে খবর প্রকাশ করেছে। অথচ, আজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই ঘটনাকে বোমা হামলা বলে বর্ণনা করেছেন। একইসঙ্গে এ হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। উনাকে এই উল্টাপাল্টা কে বোঝালেন? যিনি বুঝিয়েছেন, তাকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কারণ, এতে দলটির ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না।’
তুষার তুহিন নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই বিবৃতিটি শেয়ার দিয়ে লিখেন, ‘হায়রে মিডিয়া। দেশ বিদেশের কোন মিডিয়ায় জায়গা পায়নি বিসিএস প্রশাসন সমিতি ভবনে বোমা হামলার ঘটনা। ২৭ ফেব্রুয়ারির সেই রাতে ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডে বোমা হামলায় একজন নিহত ও অনেকেই আহত হয়েছেন। তবুও এই বাক স্বাধীনতার যুগে সংবাদ মাধ্যম ছিল নিশ্চুপ। তবে আশার খবর অন্যদের নীরবতা ভেঙ্গে বোমা হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ। যদি তারা বিবৃতি না দিত তবে দেশবাসী জানতেই পারত না রাজধানীতে ঘটে যাওয়া বোমা হামলার ঘটনা।’
