গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেয় স্বৈরাচারী সরকার। এরপর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি একাধিকবার উল্লেখ করেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপি’র প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। তাদের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণাটি। তবে সাধারণ জনগণের মধ্যে এই ধারণা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
অনেকেই মনে করেন, সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রই প্রথম রিপাবলিক। ২৪’র আন্দোলনের পর নতুন এক আবহ সৃষ্টি হয়েছে, যা দ্বিতীয় রিপাবলিক গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। জনগণের মালিকানা পুনরুদ্ধারে রাষ্ট্রকে নতুন করে গঠন করা জরুরি।”
নতুন শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে নাহিদ ইসলামের নতুন দল কতদূর এগোতে পারবে, সেটি সময়ই বলে দেবে। অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ মনে করেন, বিপ্লবের পরপরই ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ ধারণা সামনে আনা হলে সেটি বাস্তবায়ন সহজ হত। তবে এখনও এটি সম্ভব, তবে সময়সাপেক্ষ।
এদিকে, নতুন প্রজন্মের মধ্যেও দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পটপরিবেশ নিয়ে আলোচনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে তাদের আড্ডায় রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থা নিয়ে মতামত দেখা যাচ্ছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, “সত্যিকারের গণতন্ত্র ফেরানোর পাশাপাশি অন্য কোনো দল যেন ফ্যাসিবাদী হয়ে না ওঠে, তার জন্য নতুন সংবিধান প্রয়োজন।” অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, “সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠায় সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা অপরিহার্য।”
ফরাসি বিপ্লব থেকে উদ্ভূত ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণাটি রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ফ্রান্স, আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে। এবার বাংলাদেশেও এনসিপি সেই পরিবর্তনের বার্তা আনতে চায়। দলটির প্রস্তাব জনগণের সমর্থন পেলে তা ভবিষ্যতে জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হতে পারে।