ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫

ক্ষমতায় যেতে পারবে কী এনসিপি?

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৫, ০৯:১২ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজনীতির মাঠে নতুন দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)। নতুন এই দলের হাতে সময় আছে এক বছরের কিছু বেশি কিংবা কম। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তো হাতে সময় আরও কম।  এরই মাঝে গোছাতে হবে সারাদেশ। নিতে হবে নির্বাচনের প্রস্তুতি। ছাত্রদের নতুন দল গঠনের আগে বলা হয়েছিল ভারতের আম আদমি পার্টি, পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং তুরস্কের একে পার্টির আদলে দল গড়তে যাচ্ছেন ছাত্ররা। কিন্ত এই সময়ের মধ্যে কি নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া ফেলা সম্ভব? ক্ষমতায় আসাও কি সম্ভব হবে? কী বলছে ইতিহাস কিংবা বিশ্ব পরিমন্ডলের রাজনৈতিক ছক?

প্রথমত, ক্ষমতার কেন্দ্রে যেতে তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। সেই শেখ হাসিনা আমলের শুরুতে দেশ থেকে একপ্রকার জোরপূর্বক নির্বাসিত নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরলেই পাল্টে যেতে পারে দেশীয়র রাজনীতির সমীকরণ। কেননা তারেক রহমান নির্যাতিত, তার মা খালেদা জিয়াকেও ভোগ করতে হয়েছে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ও সফল শাসকদেরও একজন।

এবার ভোটের লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত শক্ত অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীও। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দল হিসেবে সম্ভবত স্বাধীনতার পর জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশিই বলা যায়। তবে ছাত্ররা নাকি হাটছে নতুন পথে। নতুন দল গঠনের আগে ছাত্ররা নানা সময়ে বলেছে অতীতের ‘গদবাধা’ রাজনীতিই নাকি পাল্টে দিতে চান তারা। এছাড়াও বিশ্ব পরিমন্ডলে রাজনীতিতে জনপ্রিয়তার বিচারে অল্প সময়ে আলোচনায় আসা তিনটি দল নিয়েও নাকি পড়াশোনা করছে ছাত্ররা।

নতুন ধারার রাজনীতির অনুসরণে প্রথমেই আসছে প্রতিবেশী ভারতে ঝাড়ু মার্কা নিয়ে রাজনীতির মাঠ কাঁপানো দল আম আদমী পার্টির নাম। ‘ইন্ডিয়া এগেইনস্ট করাপশন’ নামক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর আত্মপ্রকাশ করে অরবিন্দ কেরজিওয়ালের আম আদমী পার্টি। মাত্র এক বছরের মাথায়ই ২০১৩ সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে নিজেদের জানান দেয় । ভারতীয় কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে এক বছর আগে জন্মানো দলটি গঠন করে রাজ্য সরকার। দুর্নীতিবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে সরব থেকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হতে থাকে নেতা অরবিন্দ, যেন তার নির্বাচনী মার্কা ঝাড়ু দিয়ে ঝেটিয়ে দুর্নীতি বিদায় করতে নেমেছেন।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে আম আদমী পার্টি। যদিও ওই নির্বাচনে কোনো আসনেই জয় পায়নি দলটি। তবে ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনেই বাজিমাত। ৭০ আসনের মধ্যে ৬৭টি আসনেই জয় পেয়ে দিল্লিতে একক সরকার গঠন করে দলটি । দ্বিতীয়বারের মতো আবারও মুখ্যমন্ত্রী হন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়া। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে একটি আসনে জয় ও ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পুনরায় বিপুল আসন অর্জন করে দলটি। ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে ভারতজুড়েই চমক দেখায় আম আদমী পার্টি। কংগ্রেসকে হটিয়ে প্রথমবারের মতো পাঞ্জাবের ক্ষমতায় যায় তারা। গোয়া ও উত্তরাখণ্ডেও নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ছাত্ররাও নতুন দল গঠন করলো। তাদের আন্দোলনেও উঠে এসেছে দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা দিক। সারাদেশেই রয়েছে কমবেশি জনপ্রিয়তা। তবে অরবিন্দ কেরজিওয়াল কিংবা তেহরিক-ই-ইনসাফের ইমরান খান অথবা তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মতো ক্যারিশম্যাটিক নেতা কি হতে পারবেন নাহিদ, সারজিস বা হাসনাতদের কেউ?

পাকিস্তানে বর্তমানে দ্যুতি ছড়াচ্ছে ইমরান খানের পিটিআই। বাংলাদেশে ছাত্রদের নতুন দলের অন্যতম লক্ষ্য বিচার ও সুশাসন। পাকিস্তান তেহরিক-ই- ইনসাফ নামের অর্থ‘বিচারের জন্য পাকিস্তান আন্দোলন’। ১৯৯৬ সালে জন্ম নেয়া পিটিআই মূলত আলোচনায় আসেই ইমরান খানের হাত ধরে। ২০০২ সালে ইমরান খান দলটির দায়িত্ব নেয়ার ১০ বছরেই পাল্টে যায় দলটির চিত্র।  ২০১৩ সালে নির্বাচনে ৭.৫ মিলিয়ন ভোট পেয়ে জানান দেয় শক্তি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভেঙে দেয় সব ইতিহাস। ১৬.৯ মিলিয়ন ভোট পেয়ে পাকিস্তানের ইতিহাসে যেকোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোট প্রাপ্তির রেকর্ড গড়ে ইমরান খানের পিটিআই।

এদিকে তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান শুধু তুরস্কেই নয়; তার নেতৃত্বগুনে মুসলিম বিশ্বের কাছেই অন্যতম এক নেতা হয়ে উঠেছেন। এরদোয়ানের একে পার্টি ২০০১ সালে গঠিত হয়ে ২০০২ নির্বাচনেই বিজয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত দলটিই রয়েছে তুরস্কের ক্ষমতার মসনদে। ১৯৪৬ সালে তুরস্কের বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা থেকে একেপিই একমাত্র দল যারা টানা ছয়টি সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে।

এদিকে বাংলাদেশে ছাত্রদের হাত ধরে আসা নতুন দল ন্যাশনাল সিটিজেস পার্টি বা এনসিপি নিয়েও রয়েছে বেশ আলোচনা। দলটির প্রধান নেতা নাহিদ ইসলামের গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি বলা চলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জনপ্রিয়তা রয়েছে হাসনাত আব্দুল্লাহ কিংবা সারজিস আলমেরও। তবে অরবিন্দ কিংবা ইমরান খান অথবা এরদোয়ান যার প্রসঙ্গই টানা হোক-না কেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বা নেতৃত্বগুনে নাহিদ, সারজিসরা কি পারবে নির্বাচনের পরীক্ষায় উৎরাতে?