আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া নাহিদ ও আখতারের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দল গঠন এবং জনসমর্থন বৃদ্ধি নিয়ে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে চায়। যদিও দলটি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে মনোযোগী। তবে দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। বিশেষ করে এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নাকি বিএনপি কিংবা জামায়াতের সঙ্গে জোট- এ নিয়ে ইতোমধ্যে চলছে নানা বিতর্ক।
সূত্রমতে, দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে তৃতীয় দল হিসেবে নির্বাচন অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এনসিপির। দলটির নেতারা মনে করেন, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে এনসিপির। তবে তৃণমূল শক্তি যদি যথেষ্ট না হয়, সেক্ষেত্রে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট হতে পারে। যদিও জামায়াতের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে দলটির অধিকাংশ নেতার আগ্রহ নেই। তবে এখনো এ ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করার পর ইতোমধ্যেই ২১৬ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে এবং এই কমিটি বর্ধিত করার পরিকল্পনা করছে দলটি। সেই সঙ্গে, দলটির জেলা-উপজেলা পর্যায়ের ৪৩০টিরও বেশি কমিটি এরই মধ্যে গঠিত রয়েছে। এসব কমিটিতে বিশেষত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা জুলাই স্পিরিট ধারণ করা সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এবং এরপরেই বিএনপি ও জামায়াত জাতীয় নির্বাচনের জন্য দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। জামায়াত আঞ্চলিক নির্বাচনের দাবি তুললেও বিএনপি শুরু থেকেই জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে ছিল। এর মধ্যে শেখ হাসিনাকে পতন ঘটানোর নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি আত্মপ্রকাশ করে ২৮ ফেব্রুয়ারি, যার পর থেকে নির্বাচনি মাঠে নতুন উদ্যম দেখা যাচ্ছে।
এনসিপি শুরুতে ছোট কর্মসূচি, যেমন ইফতার আয়োজন ও দল গঠন নিয়ে কাজ করছে। তাদের লক্ষ্য হলো জনসমর্থন বাড়ানো এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করা। জানা গেছে, দলটি আগামী ১০ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাই ও আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে ইফতার কর্মসূচি আয়োজন করবে এবং ১১ মার্চ ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিল করবে। দলের নেতারা আশা করছেন, দ্রুত নিজেদের তৃণমূল শক্তিশালী করতে পারলে জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে অথবা বৃহত্তর দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
এনসিপির নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, দলটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। প্রথমত, দলটি জনসমর্থন অর্জনের দিকে মনোযোগী। দেশের মানুষের দুর্ভোগ কমানো, শান্তি বজায় রাখা এবং মানুষের আস্থা অর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে তারা ইতোমধ্যে কাজ করছে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম রাজধানীর দুটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। আসনগুলো হলো ঢাকা-৯ ও ঢাকা-১১। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন নিজ এলাকা রংপুর-৪ থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী চাঁদপুর-৫ কিংবা ঢাকা-১৮, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বরিশাল-৫, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা-৪, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। অন্যদিকে দুই ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করে দলে যোগ দিলে মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ এবং আসিফ মাহমুদ কুমিল্লা-৩ থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে এনসিপি সূত্রে জানা গেছে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের টার্গেট ৩০০ আসন। আমরা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। তবে নির্বাচনের পরিস্থিতি বুঝে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য গণপরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি মনে হয় আমাদের ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া প্রয়োজন বা সম্ভব তাহলে আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। আবার সেক্ষেত্রে আমাদের প্রায়োরিটি হবে নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আমাদের দল থেকে এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনো দলের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। এই মুহূর্তে বিএনপি কিংবা জামায়াত কারও সঙ্গে জোট করার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা পরে দেখা যাবে।
এনসিপি সূত্র বলছে, তারা নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শিগগিরই দলের গঠনতন্ত্র, লোগো, ব্যাংক হিসাব এবং সদস্যদের তথ্যসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে।
দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, দলটি মার্চের মধ্যে নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এবং এর জন্য জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন শুরু হয়েছে।
এনসিপির এক শীর্ষ নেতা জানান, দলটি নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ঈদের পর পূর্ণ শক্তিতে কাজ শুরু হবে।