ঢাকা রবিবার, ০৯ মার্চ, ২০২৫

নির্বাচন ঘিরে সন্দেহ-শঙ্কায় বিএনপি!

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৫, ১০:৩৮ এএম
প্রতীকী ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা চলছে বলে সন্দেহ করছে বিএনপি। গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, সেকেন্ড রিপাবলিক ও জুলাই ঘোষণাপত্র ঘিরে সময়ক্ষেপণের আয়োজন করা হচ্ছে বলেও মনে করে দলটি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান যে লক্ষ্য একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, এভাবে চলতে থাকলে সেটি ধীরে ধীরে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে তারা ‍‍‘নির্বাচন প্রলম্বিত করার‍‍’ আয়োজন হিসেবে দেখছেন।

পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার যদি ‍‍‘অনির্দিষ্ট মেয়াদে‍‍’ ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মাঠের রাজনীতিতে থাকা বৃহৎ এই দলটি।

বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায়ও একই ভাষ্য পাওয়া যায়। নেতারা বলছেন, তাদের সন্দেহ যদি সত্যি হয়, তাহলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব তৈরি হবে। এতে করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আবার সুযোগ নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীর প্রতি সহিংসতা, উগ্রপন্থিদের উত্থান, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দোসররাও যুক্ত আছে বলে কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে। নির্বাচিত সরকার না এলে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সামনের দিনে আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করা হলে নিজেদের করণীয় বিষয়ে কৌশল নির্ধারণে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে দলটি। যদিও দলটির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে একাধিকবার বলা হয়েছে, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে পারে। তবে দলটির নেতারা বলছেন, যদি সংস্কারের ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া না হয়, তাহলে জনমনে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এর ফলে অনেকে অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ নিতে পারে।

 

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখন মানুষ ভোট দিতে চায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। যে সংস্কারগুলো একান্ত দরকার, সেগুলো সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিষয়টি ‍‍‘নির্বাচনী সংস্কার‍‍’ উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে, দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষকে আস্থা ও নিরাপত্তা দিতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে।

একদিকে এসব নিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে গণপরিষদ নির্বাচনের আলোচনা চালু করার মাধ্যমে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। বিতর্ক তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো এভাবে নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আবার সুযোগ করে নিতে পারে। তাদের এই সুযোগ দেওয়া যাবে না। সংস্কারের আলাপের নামে জাতিকে বিভক্ত করা ঠিক হবে না।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রমে তাদের বিরোধিতা নেই। তারা সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন। তবে বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য যেহেতু নির্বাচন, তাই যে সংস্কারগুলো একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত- রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সেগুলোতে সরকারের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এখন সবাই ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের একটি বড় অংশ তরুণ, তারাও এখন পর্যন্ত ভোট প্রয়োগের সুযোগ পায়নি। তাই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাই এই মুহূর্তে বড় সংস্কার। তাই সরকারের উচিত, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে সংস্কারের পাশাপাশি একই সঙ্গে নির্বাচনি প্রস্তুতিও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।