ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের অব্যাহতভাবে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং জাতিসঙ্ঘের অধীনে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ১ মার্চ এক বিবৃতিতে এই দাবি তুলে ধরেন।
বিবৃতিতে তিনি জানান, গত ৬ মার্চ রাতে সিলেট সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে শাহেদ নামে এক বাংলাদেশি যুবক এবং ৮ মার্চ রাতে পঞ্চগড়ের ভিতরগড় সীমান্তে আল-আমিন (৩৬) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে। নিহত শাহেদ সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর ছেলে এবং আল-আমিন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হারিভাষা ইউনিয়নের জিন্নাতপাড়া গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে।
এছাড়া, তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিএসএফ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে বাংলাদেশি যুবক আল আমিনকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা সীমান্তে বাংলাদেশি যুবক বিল্লালকে নির্যাতন চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। ২০২৪ সালে বিএসএফ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইস উদ্দীনসহ ১৯ জনকে হত্যা করেছে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার জন্য ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও হত্যাকাণ্ড ক্রমাগতভাবেই বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিএসএফ ৫৮৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে এবং ৭৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, "ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশিদের অন্যায় হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া খুবই উদ্বেগজনক। ১৬ বছরে বিএসএফের হাতে ৫৮৮ জন বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা ঘটলেও আজ পর্যন্ত কোনো হত্যাকাণ্ডেরই তদন্ত ও বিচারকাজ সম্পন্ন হয়নি।
অধ্যাপক পরওয়ার আরও বলেন, "সরকারের নতজানু ও দুর্বল পররাষ্ট্র নীতির কারণেই ভারত বারবার বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। দেশের জনগণ মনে করে, এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্র নীতি দায়ী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সব সময় প্রতিবেশীদের কাছে বন্ধুসুলভ আচরণ কামনা করে। আমরা আশা করি ভারত সরকার সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে এবং বাংলাদেশি যুবক আল-আমিন ও শাহেদসহ সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।
তিনি আরও জানান, আমরা জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে সকল বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট জোর আহ্বান জানাচ্ছি।